ভারতে মহামারির নেপথ্যে তবলিগ জামাত প্রধান সা’দ, মামলা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২০, ১১:৪৩ AM , আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০, ১১:৪৩ AM
দক্ষিণ দিল্লির নিজামুদ্দিন মসজিদ সংলগ্ন প্রায় পুরো এলাকাটাই করোনা সংক্রমিত, কেননা ওই মসজিদের সমাবেশে যোগদানকারীদের মধ্যে কমপক্ষে ১২৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপরেই সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসাবে ওই অঞ্চলের কাছে থাকা একটি বহুতল থেকে প্রায় দুই হাজার ১০০ জন মানুষকে সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় নয়া দিল্লির তাবলিগ জামাত আয়োজকদের প্রধান মাওলানা সাদ কান্দলভি এবং আরো কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ১ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত আয়োজিত ওই ধর্মীয় সমাবেশে যোগদান করার পর করোনা আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যেই ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এনডিটিভিসহ ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ একটি অডিওবার্তা বিশ্লেষণ করছে। সেখানে মাওলানা সা‘দকে জমায়েতকে ‘করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হতে এবং এটিকে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেন। গত ১১ মার্চ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে মানুষ ওই জমায়েতে অংশ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফিরে গেছেন।
মঙ্গলবারই মার্কাজ নিজামুদ্দিন সিল করে দেওয়া হয় এবং সেখানে থাকা অসংখ্য মানুষকে বের করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়। মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
যে সমস্ত রাজ্যের মানুষ ওই জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের খোঁজ করা হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত যাঁদের সন্ধান মিলেছে তাঁদের মধ্যে আক্রান্ত ১২৮ জন। এদিকে এক বিবৃতিতে দিল্লির পশ্চিম নিজামুদ্দিনে তবলিগ-ই-জামাতের ‘মার্কাজ’ কর্তৃপক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি ২২ মার্চ ‘জনতা কারফিউ’ ঘোষণা করার পরে এই অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে ওই মসজিদ চত্বরে প্রচুর মানুষের জমায়েত ছিল। তাঁরা ওই কারফিউয়ের কারণে আটকা পড়ে।
তাঁদের আর অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না। আর এরপরেই শুরু হয়ে যায় দেশজুড়ে লকডাউন। তাই বাধ্য হয়েই মসজিদ সংলগ্ন এলাকাতেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে বাধ্য হন ওই মানুষজন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়া নির্দেশ দিয়েছে, ৮-১০ মার্চ দু’দিনের সমাবেশে দিল্লির ওই মসজিদে যে সমস্ত তাবলিগ-ই সদস্য যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে। এখনও পর্যন্ত ওই জন সমাবেশে অংশ নেওয়ার পরে তামিলনাড়ুতে ৫০ জন, দিল্লিতে ২৪ জন, তেলেঙ্গানায় ২১ জন, অন্ধ্রপ্রদেশে ২১জন, আন্দামানে ১০ জন এবং অসম এবং জম্মু ও কাশ্মীরে একজন করে মুসলিমের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে।
এই সমাবেশে যোগ দেওয়া মোট ৮২২ জন বিদেশি বিভিন্ন রাজ্যেও ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। এবার তাঁদের বিবরণও বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ প্রধানদের জানানো হয়েছে বলে খবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণায়ল সূত্র জানিয়েছে।
‘আমাদের সকলকেই এটা বুঝতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে যে এখন কার দোষ তা খোঁজার সময় নয়। আমাদের কাছে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল করোনা আক্রান্তদের খুঁজে বের করা ও রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া’, মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব লব আগরওয়াল।
মারাত্মক ঝুঁকি এড়ানোর জন্যে যখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে তখন সেই নিয়মকে উপেক্ষা করেই অসংখ্য মানুষ ৮ মার্চ থেকে ১০০ বছরের ওই পুরনো মসজিদ কমপ্লেক্সে জড়ো হয়। ২১ মার্চ সেখানে মোট এক হাজার ৭৪৬ জন মানুষ ছিলেন, যার মধ্যে ২১৬ জন বিদেশিও ছিলেন।
সরকার বলছে, তাবলিগ-ই-জামাতের দুই হাজার ১৩৭ জন সদস্যকে বিভিন্ন রাজ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাঁদের শরীরে করোনা সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা জানার জন্যে পরীক্ষা করা হচ্ছে। আপাতত তাঁদের সকলের থেকে পৃথক করে রাখা হয়েছে। তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর এবং আন্দামানে আরও লোকজনের খোঁজে সন্ধান চলছে।
তেলেঙ্গানায় ছয় জন ইতিমধ্যেই মারা গেছেন। শ্রীনগরেও মারা গেছেন ওই সমাবেশে যোগ দেওয়া এক ব্যক্তি। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সমাবেশ থেকে ফিরে আসা আরও ১০ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আন্দামানে আরও এক হাজার ৮০০ মানুষকে সংক্রমণের আশঙ্কায় পৃথক করে রাখা হয়েছে। কাশ্মীরেও শতাধিক মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন, অন্ধ্রপ্রদেশেও তাই, আপাতত ৭০০ সদস্যের সন্ধান চালানো হচ্ছে।
তাবলিগ-ই-জামাত আসলে একটি ইসলামি মিশনারি আন্দোলন যা ১৯২৬ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মালয়েশিয়া এবং পাকিস্তানেও একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সেখান থেকেই ওই ভাইরাস এদেশে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই ধর্মীয় সমাবেশে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, মায়ানমার, কিরগিজস্তান এবং সৌদি আরব থেকে আসা তাবলিগ-ই-জামাত সদস্যরা অংশ নিয়েছিলেন। আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, জিবুতি, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড, ফিজি, ফ্রান্স এবং কুয়েত থেকেও অনেকে এসেছিলেন সেখানে।
পর্যটন ভিসায় থাকা এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ৩০০ বিদেশিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এখন কোনও বিদেশিকে ভারত সফর করতে এবং তাবলিগি-ই-জামাতের কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেওয়া হবে না, ভিসা দেওয়া হবে না তাঁদের।
২০ মার্চ ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা ১০ জন বিদেশির শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। জানা গেছে, সমাবেশ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও প্রায় এক হাজার ২০০ জন মসজিদ কমপ্লেক্সেই অবস্থান করছিলেন। পুলিশ দাবি করেছে যে তারা অনেককে বিমানবন্দরে নিয়ে গেছে।
তবে দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আদেশে লকডাউন চালু হওয়ার দু'দিন পরে ২৬ মার্চ তাঁরা আবার ওই অঞ্চলে ফিরে এসেছিলেন। পুলিশ জানতে পেরেছে তাঁরা সংখ্যায় প্রায় ২ হাজার জন ছিলেন।