জাপান যেভাবে করোনা সামাল দিল

  © ফাইল ফটো

বিশ্বব্যাপটী ছড়িয়ে পড়া করোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে ২১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে তিন লাখ। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা যখন করোনা মোকাবেলায় দিশেহারা, সেখানে উল্টো চিত্রও রয়েছে কয়েকটি দেশে। সেই দেশগুলোর একটি হচ্ছে জাপান। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কল্যাণে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পেরেছে দেশটি। এটি যেন আবার নতুন করে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সজাগ রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

জাপানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই জাপান সরকার চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট পেশার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি সামাল দিতে প্যানেলের নানা রকম সুপারিশ ইতিবাচক ফল নিয়ে আসে। প্যানেলের সুপারিশের মধ্যে প্রধানত ছিল নাগরিকদের জন্য করণীয় বেশ কিছু পরামর্শ। এসব সুপারিশ ঠিক করে নেওয়ার আগে দেশের ভেতরে করোনা সংক্রমণের উৎস খুঁজে দেখতে হয়েছে।

দেশের ভেতরে শুরুতে পশ্চিম জাপানের ওসাকায় ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণ দেখা যায়। মূলত ওসাকা ও আশপাশের এলাকায় সংক্রমণের উৎসের সন্ধান করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানতে পারেন, যেসব কনসার্ট হলে গায়ক এবং দর্শকেরা কাছাকাছি অবস্থান করে গানবাজনার তালে নাচে অংশ নিচ্ছেন, সেখান থেকে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে সে রকম কনসার্টের আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিনোদনের জনবহুল জায়গাগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয় নাগরিকদের। এ ছাড়া ওই ধরনের স্থানে যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের অবিলম্ব স্থানীয় জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সেই পথ ধরে জাপান সরকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন বাতিল করে দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়াও স্কুল বন্ধ রাখার মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় এবং সারা দেশের সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস কমপক্ষে তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি কার্যালয়গুলোতে কর্মীদের বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান হয়।

পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখার সহজ উপায় সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান বিরতিহীনভাবে চলতে থাকে। এই কাজে সম্প্রচারমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো প্রচলিত প্রচার পথের বাইরে বাইরে অন্যদেরও জড়িত করা হয়। কমিউটার ট্রেন, পাতালরেল ও বাসের যাত্রীরা আজকাল যেমন চালকের নিয়মিত ঘোষণার বাইরে মাস্ক পরে চলাচল করা এবং বাইরে থেকে ফিরে গিয়ে নিয়মিতভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও জীবাণুনাশক ব্যবহার করে হাত জীবাণুমুক্ত করে নেওয়ার উপদেশ শুনে আসছেন।

অন্যদিকে সামান্য জ্বর কিংবা গলাব্যথা অনুভব করলে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। মানুষের ভিড় যেসব জায়গায় বেশি, সেখানে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ঘাটতি থাকলে ওই স্থান থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার সুপারিশও করা হচ্ছে। এ ছাড়া খুব কাছে থেকে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলা এড়িয়ে যাওয়ার সুপারিশও প্যানেল করে।

এ রকম বহুমুখী পদক্ষেপ এবং সেই সঙ্গে নাগরিকদের সহযোগিতামূলক আচরণের কল্যাণে করোনাভাইরাসের বিস্তার সীমিত পর্যায়ে ধরে রাখতে পেরেছে জাপান। এখন পর্যন্ত সম্ভব হলেও ভাইরাসের বিস্তার নতুন করে বিপজ্জনক মাত্রায় উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা সরকারের বিশেষজ্ঞ প্যানেল উড়িয়ে দিচ্ছে না। ফলে নজরদারি ব্যবস্থা বহাল রাখা এবং উপদেশ মেনে চলায় নাগরিক সহায়তার আহ্বান জানানো প্যানেল অব্যাহত রেখেছে।


সর্বশেষ সংবাদ