১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৩১

ট্রাম্পের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়, সুবিধা পাবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা 

ডোনাল্ড ট্রাম্প।  © সংগৃহীত

সরকারি প্রণোদনার বিনিময়ে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে সমর্থন চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প প্রশাসন ৯টি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করেছে, যেন তারা ট্রাম্পের রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে একমত হয়। বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাবে ফেডারেল অর্থায়নে বিশেষ সুবিধা। এ প্রস্তাবের ফিরিয়ে দিয়েছে অন্তত পাঁচটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে সুবিধা পাবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা।

প্রস্তাবিত ওই চুক্তির নাম ‘কমপ্যাক্ট ফর একাডেমিক এক্সেলেন্স ইন হায়ার এডুকেশন’। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারের নির্ধারিত সংজ্ঞা মেনে চলতে বলা হয়েছে, যা বাথরুম, লকার রুম এবং নারী ক্রীড়া দলগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া ভর্তি, নারী ক্রীড়া, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ছাত্র শৃঙ্খলা ও উচ্চশিক্ষার খরচ নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ বেশি হতে পারবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া (ইউভিএ) শুক্রবার ঘোষণা করেছে, তারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত “কমপ্যাক্ট ফর অ্যাকাডেমিক এক্সেলেন্স ইন হায়ার এডুকেশন” চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না।

চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকে বিদেশিদের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। এ ছাড়া কোনো একটি দেশ থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। বড় শর্তগুলোর একটি হলো ‘রক্ষণশীল মতাদর্শের বিকাশ’ ঘটাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত এই চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেডারেল তহবিল দেয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে শর্ত ছিল তাদেরকে একগুচ্ছ ফেডারেল একাডেমিক মানদণ্ড ও রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা মেনে চলতে হবে।

ইউভিএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পল মাহোনি এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি “কোনো বিশেষ সুবিধা বা অগ্রাধিকার চায় না” এবং তারা “দীর্ঘমেয়াদে উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে টেকসই পদ্ধতি” গড়ে তুলতে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহন ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পাঠানো এক চিঠিতে লেখেন, “বিজ্ঞান ও অন্যান্য একাডেমিক কাজের সততা বজায় রাখতে গবেষণা এবং শিক্ষার মূল্যায়ন শুধুমাত্র যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। মেধা ছাড়া অন্য কোনো শর্তের ওপর মূল্যায়ন নির্ভর করলে তা গুরুত্বপূর্ণ ও জীবনরক্ষাকারী গবেষণার সততা নষ্ট করবে এবং আমেরিকার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা আরও ক্ষুণ্ণ করবে।”

চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকে বিদেশিদের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। এ ছাড়া কোনো একটি দেশ থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। বড় শর্তগুলোর একটি হলো ‘রক্ষণশীল মতাদর্শের বিকাশ’ ঘটাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, ডার্টমাউথ ও ইউএসসির মতো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ১৪ শতাংশ সীমার কাছাকাছি থাকলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান এখনো এই সীমার মধ্যে রয়েছে। প্রায় ১২০টি বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এগুলোর মধ্যে কলম্বিয়া, এমোরি ও বোস্টন ইউনিভার্সিটি রয়েছে।

চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে, যা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সময় দেখা প্রতিবাদগুলোর মতো বিক্ষোভ প্রতিরোধ করবে। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্লাস, লাইব্রেরি বা অন্যান্য কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি না করে, তাও নিশ্চিত করতে হবে।

আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে সেই বছর প্রাপ্ত ফেডারেল তহবিল ফেরত দিতে হতে পারে।

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে চারটি প্রতিষ্ঠান চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেছে তারা হলো। ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), ব্রাউন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া, এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি)।

আরও পড়ুন : দেশে জাল নোট প্রবেশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা

ইউভিএ ফ্যাকাল্টি সিনেটের চেয়ার জেরি কে. সাইডম্যান ওয়াশিংটন পোস্ট-কে বলেন, অধ্যাপকরা এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি পেয়েছেন। তার ভাষায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষা করা এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।”

তবে হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা মে মেইলম্যান জানিয়েছেন, চুক্তিতে স্বাক্ষর করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফেডারেল অনুদান ও হোয়াইট হাউস পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, “কমপ্যাক্ট ফর অ্যাকাডেমিক এক্সেলেন্স” হচ্ছে সরকারের বৃহত্তর শিক্ষা সংস্কার কর্মসূচির অংশ, যার লক্ষ্য হলো “উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।”

সমালোচকরা বলছেন, এই চুক্তির শর্তগুলো মূলত একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সমান। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার সীমিত করা নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে হার্ভার্ড ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত অন্য এক ফেডারেল চুক্তির অধীনে অর্থায়ন স্থগিতের বিরুদ্ধে আদালতে আইনি লড়াই চালাচ্ছে।

শিক্ষা পর্যবেক্ষক ও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এই উদ্যোগ উচ্চশিক্ষা খাতে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক স্বাধীনতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। পাশাপাশি এই চুক্তি না করার ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা না থাকায় বাইরেরে দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরা সুবিধা পাবেন।