ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রভাব নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন মোদী
আমেরিকায় রফতানি করা ভারতীয় পণ্যে শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন সংকট তৈরি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, শুল্ক নিয়ে সন্তোষজনক কোনো সমঝোতা না হলে ভারতসহ যেসব দেশকে সর্বোচ্চ শুল্ক দেওয়া হচ্ছে, তাদের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি আলোচনায় এগোবে না মার্কিন প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার দুপুরে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রভাব বিশ্লেষণ করতে মন্ত্রিসভার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
একটি সরকারি সূত্র জানায়, বৈঠকের মূল লক্ষ্য হবে আমেরিকার নতুন শুল্কবাণের কারণে ভারতের রফতানি খাত এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তা খতিয়ে দেখা। একই সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্ভাব্য পদক্ষেপও আলোচনা হবে।
বৃহস্পতিবারই ট্রাম্প স্বাক্ষর করেছেন ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের নির্দেশিকা। এর আগে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়েছিল ভারতীয় পণ্যে, যা গত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। নতুন এই নির্দেশিকায় আগামী ২৭ আগস্ট থেকে ভারতের আমেরিকায় রফতানি করা পণ্যে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকার সর্বোচ্চ শুল্ক দেওয়া দেশগুলোর তালিকায় ভারতের নাম উঠে এসেছে। একই সঙ্গে ব্রাজিলের পণ্যের ওপরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারত থেকে পণ্য আমদানির অর্ডার স্থগিত করল অ্যামাজন ও ওয়ালমার্ট
ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে তেলের ব্যবসায় যুক্ত থাকার কারণে ভারতের ওপর এই বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি করায় ভারতকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বলেই এই পদক্ষেপ।
নয়াদিল্লি ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান প্রকাশ করেছে। সরকার জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারদরের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই ভারতের বাণিজ্যনীতি নির্ধারণ করা হয়। ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনায় গুরুত্ব দেয়, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এই অর্থ ইউক্রেন যুদ্ধকে সহযোগিতা করছে।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদী কৃষক, গবাদিপশু পালনকারী ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “আমি জানি এর জন্য আমাকে ব্যক্তিগতভাবে উচ্চ মূল্য দিতে হতে পারে, কিন্তু দেশের মানুষের স্বার্থরক্ষায় আমি প্রস্তুত।”
বর্তমানে ভারত-আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দফায় আলোচনা হয়েছে, আরেক দফার আয়োজনও রয়েছে। চূড়ান্ত চুক্তির আগে একটি অন্তর্বর্তী সমঝোতা স্বাক্ষরের চেষ্টা চলছে। চলতি মাসেই মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল ভারতে আসার কথা রয়েছে।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, আমেরিকা চায় ভারত কৃষিপণ্য, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার সম্পূর্ণভাবে তাদের জন্য উন্মুক্ত করুক। তবে নয়াদিল্লি একপাক্ষিক সুবিধাজনক চুক্তি করতে নারাজ। তারা নিশ্চিত করেছে, ভারতের স্বার্থের বিপরীতে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না যা দেশের কৃষক ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সূত্র: আনন্দ বাজার