হাসিনা ‘অবিশ্বাস্যরকম নিষ্ঠুর’, অভিযোগ তসলিমা নাসরিনের
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৩ PM , আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫২ PM
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। তারপর তিনি পালিয়ে যান ভারতে। গণআন্দোলনে পতিত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
তার অভিযোগ, পৈত্রিক সম্পত্তি পেতে শেখ হাসিনা তাকে সাহায্য করেননি। দেশে ফেরারও সুযোগ দেননি। ‘হিংসা, ঘৃণা আর দম্ভ থেকে’ তিনি বই নিষিদ্ধ করেছিলেন। হাসিনা ‘অবিশ্বাস্যরকম নিষ্ঠুর’ ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুকে আইডিতে এসব কথা লেখেন ভারতে নির্বাসিত এই লেখিকা।
তসলিমা লেখেন, ‘শেখ হাসিনা আমার বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছেন। তিনি আমার পৈত্রিক সম্পত্তির কানাকড়িও পেতে দেননি। সম্পত্তি পেতে হলে আমাকে দেশে উপস্থিত থাকতে হবে, অথবা দেশের কাউকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দিতে হবে, যে আমার হয়ে সম্পত্তি বুঝে নেবে অথবা বিক্রি করবে।’
তিনি আরও লেখেন, আমাকে যেহেতু শেখ হাসিনা দেশে ঢুকতে দেননি, আমি আমার বোনকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দিয়েছিলাম। ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নির’ ডকুমেন্ট বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করতে হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশে বা ভয়ে দূতাবাসের কেউ আমার ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ সত্যায়িত করেননি। শেখ হাসিনাকে মূলধারার গণমাধ্যমে এই মর্মে একাধিক খোলা চিঠি লেখার পরও তিনি সাড়া দেননি। অবিশ্বাস্যরকম নিষ্ঠুর ছিলেন তিনি।
তসলিমা নাসরিন তার ‘আমার মেয়েবেলা’ বইটি নিষিদ্ধের জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করছেন। তিনি বলেছেন, কী কারণে তিনি বইটি নিষিদ্ধ করেছিলেন, তিনিই তা জানেন। অদ্ভুত হিংসা, ঘৃণা, আর দম্ভে তিনি আচ্ছন্ন থাকতেন। তার ভয়ে প্রকাশকরা বাংলাদেশে আমার বই প্রকাশ করতেন না। তিনি নিষিদ্ধ করবেন আমার বই, আমার বই প্রকাশ করলে প্রকাশকদের হেনস্তা করবেন তিনি, এই ভয় ছিল প্রকাশকদের।
তসলিমা আরও লেখেন, কী ক্ষতি আমি তার করেছিলাম? কিছুই না। বরং তার পক্ষে কথা বলেছি বহুবার। তিনি নির্বাচনে জিতুন, তিনি বাহাত্তরের সংবিধান ফিরিয়ে আনুন, এমন আশা ব্যক্ত করেছি বহুবার।
তসলিমার ভাষায়, খালেদা জিয়া তাকে ‘অন্যায়ভাবে নির্বাসনদণ্ড’ দিয়েছিলেন। সে হিসেবে তার প্রতি শেখ হাসিনার ‘সহানুভূতি’ থাকার কথা। কিন্তু হাসিনা ছিলেন খালেদার মতই ‘ভিনডিকটিভ’।
বাবা অসুস্থ হলে দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন তসলিমা নাসরিন। কিন্তু সেই সুযোগও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এই লেখক।
তসলিমা লেখেন, তিনি (শেখ হাসিনা) নিজের বাবা নিয়ে কত যে হাহাকার করতেন, অথচ অন্যের বাবাকে তিনি দুই পয়সার মূল্য দিতেন না। যেন তার বাবাই বাবা, অন্যের বাবারা বাবা নয়। অসম্ভব স্বার্থান্ধ মানুষ তিনি (শেখ হাসিনা)। আমার বাবা যখন মৃত্যুশয্যায়, আমি দেশে ফেরার জন্য আকুল ছিলাম, বাবাকে একবার শেষবারের মত দেখতে চেয়েছিলাম, তাকে শতবার অনুরোধ করেছিলাম যেন আমাকে দেশে ফিরতে বাধা না দেন, তিনি বাধা দিয়েছিলেন। তিনি আমার অনুরোধের দিকে ফিরেও তাকাননি, আমাকে দেশে ফিরতে দেননি। আত্মম্ভরিতা শেখ হাসিনাকে খুব হীন এবং নীচ বানিয়েছিল।