প্রথম ভারতীয় হিসেবে ফ্যালকন ফাইটার জেট চালান টাটা
প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজারের অধিক কর্মী নিয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই টাটা গ্রুপকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রতন টাটা। শিল্পের প্রতিটি স্থানে রয়েছে টাটা গ্রুপের বিচরণ। টাটা গ্রুপের বার্ষিক রাজস্ব আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশী যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
ভারতের বিশ্ববিখ্যাত শিল্পপতিদের একজন ছিলেন রতন টাটা। তিনি দেশটির অন্যতম বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান টাটা গ্রুপের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান ছিলেন। মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (৯ অক্টোবর) ৮৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
রতনের জন্ম ১৯৩৭ সালে তদানীন্তন বম্বেতে। রতনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় মুম্বাইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুলে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই পড়াশোনা করেন। এরপর তাকে ভর্তি করানো হয় মুম্বাইয়েরই ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন কনন স্কুলে। পরে তিনি শিমলার বিশপ কটন স্কুল এবং আমেরিকার নিউইয়র্কের রিভারডেল কান্ট্রি স্কুলেও পাঠ নেন। ১৯৫৫ সালে রতন গ্র্যাজুয়েট হন শেষোক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে। ১৯৫৯-এ কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
পড়াশোনা শেষ করে তিনি সত্তরের দশকে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। তাকে প্রথমে টাটা গ্রুপের ব্যবস্থাপক স্তরের একটি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালে জেআরডি টাটা দায়িত্ব ছাড়লে রতন টাটাকে নিজের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। প্রথমে তাকে নিয়ে আপত্তি ছিল গ্রুপের ভেতরে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে তার।
অর্ধশতক ধরে টাটা গ্রুপকে নেতৃত্ব দেন জেআরডি টাটা। ১৯৯১ সালে তিনি রতন টাটাকে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে নিয়োগ দেন। সে সময়ে অনেকেই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এই দায়িত্বে আসতে পারতেন। তাঁদের বাদ দিয়ে রতন টাটাকে উত্তরসূরি করায় সে সময় কিছুটা সমালোচনাও হয়েছিল। তবে জেআরডি টাটার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল রতন টাটা প্রমাণ করেন তাঁর কাজে।
যে ২১ বছর রতন টাটার হাতে টাটা গ্রুপের দায়িত্ব ছিল, তাতে গ্রুপের আয় বেড়ে হয় ৪০ গুণ, মুনাফা বাড়ে ৫০ গুণ। মধ্যবিত্তকে চার চাকার স্বপ্ন দেখান রতন টাটাই। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা গড়ে ওঠে। যদিও রাজনৈতিক টানাপড়েনে পরে গুজরাতে কারখানা সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
বর্তমানে ইস্পাত থেকে শুরু করে সফটওয়্যার, উড়োজাহাজ থেকে লবণের মতো খাতে তাদের ব্যবসা রয়েছে। ১৫৫ বছরের পুরোনো টাটা শিল্পগ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জামশেদজি টাটা। ভারতের শিল্পের পথপ্রদর্শক হিসেবে গণ্য করা হয় তাঁকে।
৭৫ বছর বয়সে ২০১২ সালে টাটা গ্রুপের নির্বাহী ক্ষমতা ছেড়ে দেন রতন টাটা। সেই জায়গায় পারিবারিক আত্মীয় সাইরাস মিস্ত্রিকে আনা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে সাইরাসকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফের অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে ফেরেন রতন টাটা। এরপর ২০১৭ সালে নটরাজন চন্দ্রশেখরণকে অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজে আরও বেশি করে যুক্ত হন রতন টাটা।
আরও পড়ুন: জেনে নিন রতন টাটা সম্পর্কে অজানা ১০ তথ্য
স্কুল ও কলেজ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন রতন টাটা। ৭ বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় গাড়ি ও উড়োজাহাজ চালানো শেখেন। তিনি ছিলেন লাইসেন্সধারী পাইলট। প্রথম ভারতীয় হিসেবে ২০০৭ সালে এফ-১৬ ফ্যালকন মডেলের ফাইটার জেট চালান।
আধুনিক ও সমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখতেন রতন টাটা। ২০০৯ সালে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এমন এক ভারত চাই যেখানে সবাই মেধার ভিত্তিতে উন্নতির সুযোগ পাবে। আমাদের মতো একটি দেশে পরিশ্রমের মাধ্যমে উন্নতি করতে হবে। শুধু সম্পদ থাকলেই উন্নতি হবে না।’