মার্কিন অস্ত্র দিয়েই আন্তর্জাতিক আইন ভেঙ্গেছে ইসরায়েল
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ০২:৪৩ PM , আপডেট: ১১ মে ২০২৪, ০২:৫২ PM
গাজা যুদ্ধের সময় কিছু কিছু ঘটনায় ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। এক্ষেত্রে তারা আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে—বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্রগুলো যে ইসরায়েল অসংগত কারণে ব্যবহার করেছে এটার মূল্যায়ন করা জরুরি। তবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, তারা কী মাত্রায় এর ব্যবহার করেছে তার বিস্তারিত তথ্য তাদের কাছে নেই।
শুক্রবার (১০ মে) কংগ্রেসে এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়।
হোয়াইট হাউজের এই পর্যালোচনায় উঠে এসেছে শুধু গাজা নয়, আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে আরও অন্তত ছয়টি দেশের সাথে সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েল।
গাজায় পরিচালিত ইসরায়েলির কিছু অভিযানের সরাসরি সমালোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে, কিন্তু তার মাধ্যমে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সেখানে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা, তা নিয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইসরায়েলকে একটা সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মার্কিন অস্ত্রের আইনি ব্যবহার মেনে চলতে ইসরায়েলের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিলো। সে কারণেই এই অস্ত্রের সরবরাহ চালু রাখতে রাজি হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন এই প্রতিবেদনে এটিও বলা হয় যে, হামাস 'সামরিক উদ্দেশ্যে বেসামরিক অবকাঠামো এবং নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার' করেছে যুদ্ধের সময়। যুদ্ধ চলার সময় কোনটা বৈধ লক্ষ্যবস্তু সেটা যাচাই করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে, মার্কিন অস্ত্রের ওপর ইসরায়েলের অতিমাত্রায় নির্ভরতার কারণেই হয়ত তারা বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আইএইচএল বা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মানার চেষ্টা করেছিলো।
এতে আরও বলা হয়, বেসামরিক ক্ষতি কমানোর মতো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও সরঞ্জাম সবই ইসরায়েলের রয়েছে। এ কারণেই গাজায় স্থল অভিযানে এত হতাহতের সব ঘটনায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সেসব সক্ষমতা ঠিক মতো ব্যবহার করছে কিনা, সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো বেসামরিক ক্ষতি কমাতে ইসরায়েলের প্রচেষ্টাকে অকার্যকর এবং অপর্যাপ্ত বলে বর্ণনা করেছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এটাও লক্ষ করেছে যে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথম মাসগুলোতে গাজায় সর্বোচ্চ মানবিক সহায়তা সর্বাধিক করতে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রচেষ্টা, ছিল তাতে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করেনি ইসরায়েল। এ কারণেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপের দিকে গেছে।
তবে বর্তমানে গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোকে ইসরায়েল আটক কিংবা বাধা দিচ্ছে না বলেও উঠে এসেছে মার্কিন ওই প্রতিবেদনে।
এই প্রতিবেদন যারা প্রস্তুত করেছেন তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড স্টারফিল্ড বিবিসিকে বলেছে, গাজা যুদ্ধের প্রথম থেকেই ইসরায়েলি পদক্ষেপগুলো পর্যবেক্ষণে এনেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
“সারা বিশ্ব দেখেছে এটা অন্যসব যুদ্ধ কিংবা সংঘাতের মতো ছিল না”, যোগ করেন তিনি।
“আমরা একদম খোলামেলাভাবে প্রতিটি বিষয়ের বিশ্বাসযোগ্য মূল্যায়ন তুলে আনার চেষ্টা করেছি এই রিপোর্টে”।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রকাশ্যে ইসরায়েলের কাছ থেকে কিছু বোমা এবং আর্টিলারি শেল প্রত্যাহার করার হুমকি দেওয়ার কয়েকদিন পরে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে। যখন রাফায় হামাসের শেষ শক্ত ঘাটিতে দশ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, রাফাহ অভিযান হবে 'চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করা', এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের কিছুক্ষণ আগে তা নাকচ করে দিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, কেউ পাশে না থাকলেও ইসরায়েল একা লড়বে'।
সোমবার থেকে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ রাফাহ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। জাতিসংঘ বলছে, অব্যাহত বোমাবর্ষণের মধ্যে ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো আরও কাছাকাছি চলে আসছে।
অভিযানের শুরুতে মিশরের কাছে রাফাহ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী এবং সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। তখন থেকেই জাতিসংঘ বলে আসছিলো এই সীমান্ত দিয়ে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো বেশ বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
গত বছরের সাতই অক্টোবর থেকে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে সংগঠনটিকে ধ্বংস করতে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৩৪ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। [বিবিসি বাংলা]