যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে বাংলাদেশিদেরও অংশগ্রহণ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ০৮:৫৯ AM , আপডেট: ০৩ মে ২০২৪, ০৯:০৩ AM
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধশতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এখনও বিক্ষোভে উত্তাল। বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে সরাতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই বিক্ষোভ দমনে পুলিশ চরমভাবে বলপ্রয়োগ করছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে ভেতরে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি পরীক্ষাও চলছে। আন্দোলনকারীদের দলে রয়েছে বাংলাদেশেরও অনেক শিক্ষার্থী।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্যরত বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী শরিফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। কোনো সহিংসতা নেই। আন্দোলনকারীদের অনেকে এখন ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রধান ফটকের কাছেই অবস্থান করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শোয়াইব আহমেদ ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণ হলো, পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে আন্দোলন জোরালো হয়েছে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নিনাদ শফিককে সম্প্রতি কংগ্রেসে ডেকে রিপাবলিকানরা নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছেন। নিনাদ শফিক দেখেছেন, তাঁর আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁদের কংগ্রেসে ডাকা হয়েছে, তাঁদের কাউকে কাউকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। তাই পুলিশ ডেকে তিনি শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করিয়েছেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আন্দোলন জোরালো হয়ে উঠছে।
আন্দোলনে বাংলাদেশি ছাত্রদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নোহা। মঙ্গলবার রাতে তিনি গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আন্দোলনে ছিলাম। পুলিশ আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।’
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে জানান, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয় বরণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কাকতালীয়ভাবে ঠিক সেদিনই ক্যাম্পাসের হ্যামিলটন হলে হস্তক্ষেপ করে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ। একই দিনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নিনাদ শফিক জানিয়েছেন, তাঁরা কোনো অবস্থাতেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। এই ঘোষণার পর থেকে আমরা হ্যামিলটন হলের নাম দিয়েছি হিন্দ’স হল। হিন্দ হলো সেই ৬ বছরের ফিলিস্তিনি শিশু, যাকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
পুলিশ এর আগে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের চলে যাওয়ার, অন্যথায় গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছিল। এরপর কয়েক ঘণ্টার অচলাবস্থা শেষে স্থানীয় সময় বুধবার রাতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তাঁবুতে প্রবেশ করে। সহিংস ইসরায়েলপন্থি উগ্র জনতার তাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় পরে এ ঘটনা ঘটল। এর আগে মঙ্গলবার রাতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউইয়র্কের সিটি কলেজের প্রায় ৩০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, গত ১৮ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ফিলিস্তিন সমর্থক ১৬০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে দীর্ঘদিন কার্যত নীরব থাকলেও বৃহস্পতিবার মুখ খুলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো কর্তৃত্ববাদী দেশ নেয়। এখানে প্রতিবাদের অধিকার আছে। তবে ক্যাম্পাসে অবশ্যই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। কাতার ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক হাসান বারারি যুক্তরাষ্ট্রে বহু বছর শিক্ষকতা করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রমবর্ধমান মৌখিক আক্রমণ সত্ত্বেও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন না। তারা তাদের উদ্দেশ্য সফল না করা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।