ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইএসসি)
ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইএসসি)

নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রীর (ভেলেডিক্টোরিয়ান) সমাবর্তন বক্তৃতা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইএসসি)। সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইমেইলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ তথ্য জানানো হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যম লস এঞ্জেলস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা এ তথ্য জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশনা তাবাসসুম। ইউএসসি কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে তাবাসসুমকে বেছে নিয়েছিলেন যাদের জিপিএ ৩.৯৮ বা তার বেশি ছিল। শিক্ষাজীবনে ভালো ফল ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়তার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে ভেলেডিক্টোরিয়ান স্বীকৃতি দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনিই বক্তৃতা দেন। এ বছর ইউএসসির ভেলেডিক্টোরিয়ান নির্বাচিত হয়েছিলেন আসনা তাবাসসুম।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তারা জানায়, প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় বার্ষিক সূচনা অনুষ্ঠানে মঞ্চে কথা বলার ঐতিহ্যগত সুযোগ থেকে একজন ভ্যালিডিক্টোরিয়ানকে নিষিদ্ধ করেছে। যা সাধারণত লস অ্যাঞ্জেলেস ক্যাম্পাসে ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে আকর্ষণ করে।

আশনা তাবাসসুমের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলের একটি স্লাইডে ‘বায়ো’তে ফিলিস্তিনপন্থী একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া। মূলত এ ‘অভিযোগেই’ তাকে ভেলেডিক্টোরিয়ান নির্বাচিত করার পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিল শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের একাংশ। এর ফলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে তার অংশটি বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় বিবৃতি প্রকাশের পর নিজের মতামত জানিয়ে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস-লস অ্যাঞ্জেলেসের (সিএআইআর-এলএ) মাধ্যমে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে তাবাসসুম বলেন, ‘ইউএসসির ২০২৪ সালের ভেলেডিক্টোরিয়ান নির্বাচিত হয়ে আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি। এটা আমার পরিবার, বন্ধু, শিক্ষক ও সহপাঠীদের জন্য উদ্‌যাপনের সময় হওয়ার কথা ছিল। অথচ মানবাধিকারের প্রশ্নে আমার আপসহীন অবস্থানের কারণে মুসলিমবিরোধী, ফিলিস্তিনবিরোধীরা আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে।’

তাবাসসুম আরও বলেন, ‘যারা আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছে, তারা আমাকে অবাক করেনি। কিন্তু বিস্মিত হয়েছি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার চার বছরের ঘর কীভাবে আমাকে অস্বীকার করল?’

আসনা তাবাসসুম বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা তাঁর ওপর কোনো হুমকির প্রমাণ কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। বরং ঘৃণা ছড়ানোকে সমর্থন দিয়েই তারা ক্যাম্পাসে ভয়ের উদ্রেক করেছে। ভারতীয়-মার্কিন এই তরুণ বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশলে পড়লেও মাইনর করেছেন ‘গণহত্যা প্রতিরোধ’ বিষয়ে। তাই ফিলিস্তিনিসহ পৃথিবীর সব মানুষের ন্যায়বিচারের পক্ষে নিজের সুস্পষ্ট অবস্থানের কথা জানিয়ে তাবাসসুমের বক্তব্য, ‘ভেলেডিক্টোরিয়ান হিসেবে সহপাঠীদের অনুরোধ করব, প্রচলিত ধারণার বাইরে বের হও। এমন একটা পৃথিবীর জন্য কাজ করো, যেখানে মানুষের সমতা আর মর্যাদা রক্ষার চেয়ে ঘৃণা ছড়ানোটা বড় হয়ে উঠবে না। আদর্শগত বিভেদ থাকলেও আমি সেটা আলোচনা ও (পরস্পরকে) জানার মাধ্যমেই সমাধান করতে চাই, গোঁড়ামি ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নয়।’

 

সর্বশেষ সংবাদ