দায়িত্ব নিয়ে উপাচার্য বললেন—‘আমিও র‌্যাগিংয়ের শিকার’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ  © ফাইল ছবি

দায়িত্ব পেয়েছেন হাতে গুনে ৩৫ দিন হলো। এর মধ্যেই ত্যক্ত-বিরক্ত ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ্যে ক্ষোভও উগরে দিলেন শিক্ষার্থীদের একাংশের বিরুদ্ধে। তার অভিযোগ, কোনো সিদ্ধান্তই কার্যকর করতে দেওয়া হচ্ছে না তাকে।

গেল মাসে যাদবপুরের প্রধান হোস্টেলে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার পর ‘র‌্যাগিং সংস্কৃতি’ নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল দেশটির গোটা রাজ্য। সেই আবহেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়া গণিতের অধ্যাপক বুদ্ধদেবের দাবি, তিনিও র‌্যাগিংয়ের শিকার।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাল্টা দাবি, উপাচার্যই ক্যাম্পাস সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর রাখেন না। শুধু তা-ই নয়, একাংশের অভিযোগ, উপাচার্য কারও সঙ্গে পরামর্শও করছেন না। কারও সঙ্গে কথাও বলছেন না। শুধু ঘনিষ্ঠ মহলের কথা শুনে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা শাখার ছাত্র সংসদের এক ছাত্রনেতা বলেন, ‘‘কেউ ভিসি (উপাচার্য)-কে বাধা দিচ্ছেন না। অপমানও করেননি। বরং উনিই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। দেখা করতে চাইলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হচ্ছে। তারপর সময় চেয়ে কথা বলতে গেলে উনি কথাও বলছেন না। এভাবে চলতে পারে না।’’

শনিবার বুদ্ধদেব অভিযোগ করেন, তাকে কোনও কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। কোনো নিয়ম কার্যকর করতে গেলেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। তার দাবি, শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্যই কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর করতে দেওয়া হচ্ছে না। 

উপাচার্য বলেন, ‘‘যখন-তখন আটকে রাখছে আমাদের। কোথাও বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। আমিও র‌্যাগিংয়ের শিকার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (প্রশাসন)-ই র‌্যাগিংয়ের শিকার এখানে। যাদবপুরে অরাজকতা চলছে। গণতন্ত্রের জায়গা নেই।’’

আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্রের বর্ণনায় 'হোস্টেলে র‌্যাগিং'

শিক্ষার্থীদের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন বুদ্ধদেব। তার অভিযোগ, ‘‘১৩ হাজারের মধ্যে কিছু সংখ্যক ছাত্র বার বার এসে অহেতুক ঝামেলা করছেন। যেমন অল স্টেকহোল্ডার... আগের উপাচার্য নাকি করে গিয়েছেন, সেটাই নিয়ম। অথচ আমি আমাদের ল সেল, রেজিস্ট্রারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। কোথাও থেকে অল স্টেকহোল্ডারের কোনও স্ট্যাটিউটরি টার্ম কেউ দেখাতে পারেননি।’’

শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ দাবি করছেন কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন উপাচার্য। বুদ্ধদেবের দাবি, চাপ নিতে না পারার জন্য ডিন অফ স্টুডেন্টসকেও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘আমারও পদত্যাগ দাবি করছেন। অন্যায্য দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা, আমার পদত্যাগ চাইছে। এদের মূল উদ্দেশ্য, বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদের ঢোকানো। এগুলো আমার ন্যায্য দাবি বলে মনে হয় না। যারা করছেন, পরিকল্পনামাফিক তাদের এগুলো করার মতো বয়স হয়েছে বলে মনে হয় না আমার। এর পেছনে কিছু পাকা মাথা কাজ করছে বলে মনে হয়।

তবে উপাচার্যের এভাবে প্রকাশ্যে মুখ খোলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন ‘‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। উনাকে যদি কাজে বাধা দেওয়া হয়, উনি এ কাজ করছেন কেন! এটা উপাচার্য এবং আচার্যের বিষয়। আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’


সর্বশেষ সংবাদ