৪৭ বছর পর ফের চন্দ্র অভিযানে রাশিয়া

চাঁদের উদ্দেশ্যে ভু-পৃষ্ঠ ত্যাগ করছে রাশিয়ার চন্দ্রযান
চাঁদের উদ্দেশ্যে ভু-পৃষ্ঠ ত্যাগ করছে রাশিয়ার চন্দ্রযান  © সংগৃহীত

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা প্রথম দেশ হওয়ার লক্ষ্যে ৪৭ বছরের দীর্ঘ বিরতির পর নিজেদের প্রথম মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে রাশিয়া। চাঁদের ওই এলাকায় ‘বরফ পানির’ খোঁজ মিলতে পারে—এমন অনুমান থেকে এ অভিযান দেশটির। চাঁদে এই মিশন রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্রেমলিন বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার অজুহাতে অনেক দেশই মস্কোর মহাকাশ খাতকে টার্গেট করেছে। তবে, সেটা রাশিয়ার অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে পারেনি।

শুক্রবারের উৎক্ষেপণটি ১৯৭৬ সালের পর থেকে রাশিয়ার প্রথম চন্দ্রাভিযান। আর তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ভারতের সঙ্গে। গত মাসেই ‘চন্দ্রযান ৩’ নামের নিজস্ব মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে দেশটি। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গেও আরও বিস্তৃত পরিসরে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যস্থির করেছে রাশিয়া। এরই মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কয়েকটি অগ্রগামী প্রকল্প পরিকল্পনা করেছে দেশ দুটি।

রাশিয়ার পূর্বাংশে অবস্থিত ‘ভস্তচনি কসমোড্রোম’ স্পেসপোর্ট থেকে ‘সয়ুজ ২.১ভি’ নামের রকেটে বহন করা ‘লুনা ২৫’ চন্দ্রযানটি উৎক্ষেপিত হয়েছে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর পাঁচটা ১১ মিনিটে। আর এর ওপরের স্তরটি পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে তার ঘণ্টাখানেক পর চাঁদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা ‘রসকসমস’।

শুক্রবার সংস্থাটির প্রধান ইউরি বরিসভ স্থানীয় সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে জানিয়েছেন, চন্দ্রযানটি চাঁদে অবতরণ করতে পারে ২১ অগাস্ট। এর আগে রসকসমস অবতরণের তারিখ নির্ধারণ করেছিল ২৩ অগাস্ট।

চন্দ্রযানটি আকারে ছোট একটি গাড়ির সমান। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এক বছর কার্যক্রম চালানোর কথা বিবেচনায় রেখে তৈরি এটি। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ওই এলাকার ‘ছায়াযুক্ত গর্তে’ বরফ পানির উপাদান শনাক্ত করেছে নাসা’সহ বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা।

আমরা এখন ২১ তারিখের অপেক্ষায়। আমি আশা করি, অবতরণটি নির্ভুল ও সফল হবে—ইন্টারফ্যাক্সের তথ্য অনুসারে, ভস্তচনি কসমোড্রোমের কর্মীদের বলেছেন বরিসভ।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসন চালানোর পর মহাকাশ খাতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ‘প্রায় সব সম্পর্কই শেষ করে দিয়েছে’ দেশটি। এর ব্যতিক্রম কেবল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, যেখানে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার পরিকল্পনা ছিল, এই অভিযানে তারা নিজেদের ‘পাইলট-ডি’ নামের ন্যাভিগেশন ক্যামেরাটি পরীক্ষা করবে। তবে, ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর সংস্থাটি সেই প্রকল্প থেকে সরে আসে।

১৯৬৯ সালে চাঁদে পাড়ি জমানো প্রথম ব্যক্তি হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন মার্কিন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং। তবে, বিশ্বের প্রথম মহাকাশযান হিসেবে চন্দ্রপৃষ্ঠে পৌঁছায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘লুনা-২’। এ ছাড়া, ১৯৬৬ সালে প্রথম মহাকাশযান হিসেব চাঁদে প্রথম সফল অবতরণ করেছিল ‘লুনা ৯’।

পরবর্তীতে মঙ্গলগ্রহে অনুসন্ধান চালানোর দিকে মনোযোগ দেয় মস্কো। তবে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর থেকে পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে কোনো বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালায়নি রাশিয়া। নতুন এই অভিযানের মাধ্যমে মহাকাশে নিজেদের স্বতন্ত্র উপস্থিতির বিষয়টিও পরীক্ষা করবে বেশ কয়েক দশক যাবত চাঁদে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করা রাশিয়া।


সর্বশেষ সংবাদ