‘হিজাব পরতে বা খুলতে বাধ্য করলেই প্রতিবাদ করব’
‘একজন নারী কী ধরনের পোশাক পরবেন বা পরবেন না সে ব্যাপারে তার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে। আমি আগেই বলেছি, যদি কেউ আমাকে আমার মাথা ঢেকে রাখতে বাধ্য করে, আমি প্রতিবাদ করব। আবার যদি কেউ আমাকে আমার স্কার্ফ খুলতে বাধ্য করে, তাহলেও আমি প্রতিবাদ করব।’-ইনস্টাগ্রামে কথাগুলো লিখেছেন নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত মালালা ইউসুফজাই। তিনি পুলিশি নির্যাতনে মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনটি লিখেছেন।
সঠিক নিয়মে হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে গত ৮ দিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল ইরান। বিক্ষোভে পুলিশের হামলায় ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ৮০টি শহরে।
ভারতের কর্ণাটকে হিজাব বিতর্কের সময়ও জোরপূর্বক হিজাব পরতে না দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন মালালা। তখনও তিনি বলেছিলেন, মেয়েদেরকে জোর করে হিজাব পরে স্কুলে যেতে দিতে অস্বীকার করা ভয়ঙ্কর। হিজাব পরা নিয়ে নারীদের মধ্যে কম-বেশি আপত্তি আছে। তবুও ভারতীয় নেতাদের অবশ্যই মুসলিম নারীদের প্রতি এই ঘটনা বন্ধ করতে হবে।
মাথায় হিজাব না থাকায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মাশা আমিনি নামের ২২ বছরের এক তরুণী। গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
আরও পড়ুন: প্রশ্নফাঁস ব্যাধি থেকে আরোগ্য মিলবে কবে?
পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ৩ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাশার। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়াই তার মৃত্যুর কারণ; তবে বিক্ষোভকারী, মাশার পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ- মাথায় গুরুতর আঘাত করার পরই অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যান মাশা এবং ওই আঘাতের জেরেই তার মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল কুর্দিস্তানে। পরে দ্রুততার সঙ্গে অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ে সেই বিক্ষোভ। আইএইচআরের তথ্য অনুযায়ী, ইসফাহান, মাশহাদ, শিরাজ, তাবরিজসহ ইরানের অন্তত ৮০টি শহরে বর্তমানে বিক্ষোভ চলছে। আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি- মাশা আমিনির মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা এবং নারীদের কঠোর পোষাকনীতি ও নৈতিক পুলিশ বাতিল করা।
হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’এবং ইসলামি পোশাক না পরা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।