কত বছরে শেষ হবে ছাত্রলীগ নেতাদের স্নাতক?
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী, ছয় বছরের মধ্যে চার বছর মেয়াদী স্নাতক (অনার্স) ও দুই বছরে স্নাতকোত্তর শেষ করতে হয়। কিন্তু সেই নিয়ম প্রযোজ্য হচ্ছে না ছাত্রলীগ নেতাদের ক্ষেত্রে। নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাই ছাত্রলীগের সদস্য হতে পারবেন। কিন্তু তাদের কেউ স্নাতক শেষ করছেন ৯ বছরে, কেউ স্নাতকোত্তর শেষ করছেন ১৫ বছরে। কত বছরে শেষ হবে তাদের স্নাতক?
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ২০০৮-০৯ সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। নিয়মানুযায়ী ২০১৫ সালে তার স্নাতক শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রায় ১৩ বছর হয়ে গেলেও অধ্যয়নরত রয়েছেন জয়। তেমনি ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ২০০৮-০৯ সেশনের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী লেখক ভট্টাচার্য। কার্যত এতবছরে তার পড়াশোনা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা শেষ হয়নি।
অপরদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ২০০৯-১০ সেশনের উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী। তার স্নাতক শেষ হলেও শেষ হয়নি স্নাতকোত্তর। রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ২০১০-১১ সেশনের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ রুনু প্রথম বর্ষেই ড্রপ আউট। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্য কোর্সে ভর্তিও ছিলেন কিছুদিন।
আরও পড়ুন: ঢাবি ছাত্রকে পেটালেন জেলা ছাত্রলীগ নেতা, দ্রুত বিচার দাবি।
তাদের দুইজনের নামেই প্রকাশ্য অস্ত্র বের করে শিবিরের ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে সান্ধ্য আইন বাতিলের অন্দোলনে প্রকাশ্যে পিস্তল বের করে গুলি ছোড়ার অভিযোগও রয়েছে সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর বিরুদ্ধে।
একই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখনো স্নাতক শেষ হয়নি জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেলের। তিনি ২০১২-১৩ সেশনের জনস্বাস্থ্য ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার স্নাতক ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলে তা এখনো শেষ হয়নি। এই তালিকায় রয়েছে সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের নামও। তিনি ২০১৩-১৪ সেশনের দর্শন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চান তারা তাদের পড়াশোনা শেষ করুক। এত বছর ধরে ক্যাম্পাসের অনেকটাই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেছেন তারা। অনেকেই তাদের পেছনে হাসি ঠাট্টা করেন।
তাদের এত বছর ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, কোন শিক্ষার্থীর এত বছর ক্যাম্পাসে থাকা ভালো দেখায় না। নতুনদের সুযোগ দেয়া উচিত। একজনই যদি এত বছর নেতৃত্ব দেয় তাহলে অন্যরা সুযোগ পাবে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলছিলেন, তারা কয়েকবছর একই ইয়ারে পড়তেছেন। জুনিয়রদের সাথে পড়শোনা তাদের আনকাম্ফোর্টেবল না লাগলেও জুনিয়রদের লাগে। আর তারা পড়াশোনাই বা করে কখন তারা তো হল দখল, মারামারি আর কমিটিতে পদের চিন্তা করেন।
এখন প্রশ্ন একটাই কবে শেষ হবে তাদের স্নাতক? তাদের এইসব বিষয়ে না বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ কোন হস্তক্ষেপ করছে না অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করার সাহস করছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যেখানে পড়াশোনা মূখ্য বিষয় হওয়ার কথা ছিল সেখানে তারা রাজনীতিকে প্রধান্য দিচ্ছে। কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা?
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
তথ্যসূত্র: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন।