দেশ এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে

ড. মো. কামরুল হাসান মামুন
ড. মো. কামরুল হাসান মামুন   © সংগৃহীত

এইমাত্র টিভি চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ দেখলাম যে সপ্তাহে একদিন করে পেট্রল পাম্প বন্ধ থাকবে, দৈনিক ১ থেকে ২ ঘণ্টা লোডশেডিং হবে। গত পরশু শুনেছি রিজার্ভ নাকি ৪০ বিলিয়নের নিচে নেমে গেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার।

এইবার বুঝুন এতদিন আমরা কি নিয়ে বড়াই করেছি। সেই বড়াইও এখন ফুড়ুৎ হওয়ার পথে। ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকবে। যা রিজার্ভ আছে তা দিয়ে ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর ক্ষমতা আছে।

এত কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কিন্তু ক্ষমতাবানরা যে টাকা পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে সেই সম্পর্কে কোন নির্দেশনা দেখছি না। প্রতি বছরে সুইস ব্যাংকে টাকা পাচারের পরিমাণ দেখুন।

২০০৪ সালে ৩৮৩ কোটি টাকা, ২০০৫ সালে ৮৬৩ কোটি টাকা, ২০০৬ সালে ১১০৬ কোটি টাকা, ২০০৭ সালে ২১৬৭ কোটি টাকা। তারপর ২০০৯ সালে ১৩২৬ কোটি টাকা, ২০১০ সালে ২১০০ কোটি টাকা। এইভাবে বাড়তে বাড়তে ২০১৯ সালে ৫৩৬৭ কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার হয়। এইটা তো কেবল সুইস ব্যাংকে পাচার। এর সাথে আছে কানাডার বেগম পাড়ায় পাচার, মালয়েশিয়ায় পাচার, ইউরোপ আমেরিকায় পাচার তো আছেই। সকল সরকারের সময়ই টাকা তারাই পাচার করে যাদের ক্ষমতা আছে।

আর ক্ষমতা তাদেরই আছে যারা ক্ষমতাসীন দল করে। সরকার তার নেতাদের বলে না কেন এইবার সময় এসেছে বিদেশে যারা টাকা পাচার করেছেন তা এইবার দেশে ফিরিয়ে আনুন। দেশ এখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। মনে রাখতে হবে পেট্রল পাম্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেশনিং দিয়েই শ্রীলংকার ক্রাইসিসের শুরু।

অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে বসিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে নানাভাবে ভর্তুকি হিসাবে দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে কেউ কেউ সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ীদের একজন হয়েছে। তাকে এবং তাদেরকে কিভাবে টাকা পাচারের ব্যবস্থা করে দিলেন?

এইবার তাদের বলুন দেশের এই সংকটময় সময়ে সেই টাকাগুলো যেন ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এখন যারা পাচারকৃত টাকা দেশে ফিরিয়ে আনবে তাদেরকে দেশপ্রেমিক হিসাবে রিওয়ার্ড দিলে আমার কোন আক্ষেপ বা অভিযোগ থাকবে না।

যেইসব কঠিন সিদ্ধান্ত এখন নিচ্ছেন তাতে কিন্তু ক্ষমতাসীনরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। সরকার এইটা বলে না কেন এখন থেকে ২০০০ সিসির উপরের গাড়ি বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা, এমপি মন্ত্রীদের জন্য বিশাল বিশাল গাড়ি তেল পুড়িয়ে যে রাস্তায় চলে তা বন্ধ করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা, এমপি মন্ত্রীরা যেন এসি চালানো বন্ধ রাখেন। নতুন করে ১৫০০ সিসির উপরের প্রাইভেট গাড়ি আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা উচিত। সিচুয়েশন কিন্তু এলার্মিং!!!!

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ