আহা, কি মেধাবী আমরা!

ভর্তি পরীক্ষা
ভর্তি পরীক্ষা   © সংগৃহীত

আমি অনেক গুগল করেও খুঁজে পেলাম না- অক্সফোর্ড কিংবা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি'তে এই বছর, গত বছর কিংবা এর আগের বছর গুলোতে কে বা কারা ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়েছে। নিজে যখন ইংল্যান্ড-আমেরিকায় ছিলাম তখনও কোন দিন কোন পত্রিকায় এমন শিরোনাম দেখিনি। হয়ত আমার জানার ভুল। তাই ভাবলাম গুগল করে জেনে নেই। কিন্তু কোথাও কোন তথ্য খুঁজে পেলাম না।

তো, গুগল করে যেটা পেলাম- হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ৫৭৭৫৬ জন আবেদন করেছে ভর্তি'র জন্য। এর মাঝে এডমিশন পেয়েছে ২৩২০ জন। একজনও ওয়েটিং থেকে এডমিশন পায়নি। ৮৫ ভাগ ছাত্র আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আসা। ১৫ ভাগ ইন্টারন্যাশনাল। কতো ভাগ ছাত্র-ছাত্রী কোন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। বছরের টোটাল বাজেট কতো। এই বাজেটের কতো ভাগ স্কলারশিপ হিসেবে দেয়া হচ্ছে ইত্যাদি।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে মোট ১০৮৯০ জন গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে আবেদন করেছে। এর মাঝে ৬৬৫৭ জন চান্স পেয়েছে। এর মাঝে ৫১ ভাগ ছেলে, ৪৯ ভাগ মেয়ে ইত্যাদি।

আমি হ্যারিকেন দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করেছি- কে প্রথম হয়েছে, কে দ্বিতীয় হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া যায় কিনা। কিংবা কে কোন কলেজ থেকে এসেছে। কোন কলেজ থেকে কতো জন চান্স পেয়েছে এমন তথ্য আছে কিনা। অথবা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় যারা হয়েছে- তারা কি খায়, কখন ঘুমায়, কখন পড়াশুনা করে, কখন বাথরুমে যায় এমন তথ্য কিংবা পত্রিকা রিপোর্ট যদি পাওয়া যায়।

কিন্তু কোন তথ্য'ই পেলাম না। অথচ আমাদের দেশের পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা পর্যন্ত বলে বেড়ায়- অমুক প্রথম হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিক্যাল কিংবা অন্যান্য নাম করা ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায়। তাদের বিশাল বিশাল সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। আরও কতো কিছু!

আমার ঠিক জানা নেই, জগতের কোন সভ্য দেশে এমন প্র্যাকটিস আছে কিনা। অন্তত আমি কখনো দেখনি। কেউ জানেও না কে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে আর কে লাস্ট হয়েছে! আমি ভেবেছিলাম আমার জানার কমতি থাকতে পারে। তাই বেশ কিছুক্ষণ গুগল করলাম। সেখানেও কিছু পেলাম না।

আমাদের সময় ম্যাট্রিক, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার সময় বোর্ডে স্ট্যান্ড করার একটা রেওয়াজ চালু ছিল। অর্থাৎ প্রতিটা বোর্ডের সেরা ২০ জনের একটা তালিকা করা হত। এদেরকে বলা হত "স্ট্যান্ড" করেছে। নাম্বারের ভিত্তিতে যারা বেশি নাম্বার পেত, তারাই স্ট্যান্ড করতো। তাদের নাম, স্কুল,-কলেজের নাম সহ পত্র-পত্রিকায় ছাপা হত। অনেকের বাবা-মা'র ছবি সহও সাক্ষাৎকার পত্রিকা গুলো ছাপাত। একটা সময় যখন সবাই বুঝতে পেরেছে- এটি খুব একটা ভালো প্র্যাকটিস না, তখন স্ট্যান্ড করার ব্যাপারটি বন্ধ করা হয়েছিল।

এখন শুরু হয়েছে- কে কোন ইউনিভার্সিটি, মেডিক্যাল ইত্যাদিতে প্রথম হয়েছে। কোন কলেজ থেকে কতো জন চান্স পেয়েছে এইসব নিয়ে আলোচনা। অথচ জগত সেরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যারা প্রথম, দ্বিতীয় হচ্ছে তাদের নাম গন্ধ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য তারা তো আর মেধাবী না। জগতের সকল মেধাবীরা বোধকরি বাংলাদেশেই বসবাস করে।

আমি একটা খুব ছোট এবং সাধারণ মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই এখানে। আমাদের এখানে ছাত্র-ছাত্রীর অনুমতি ছাড়া আমরা প্রকাশ্যে তাদের কোন রেজাল্টও দিতে পারি না। তাদের রেজাল্ট তারা যে যার প্রোফাইলের মাধ্যমে জেনে যায়। অন্য আর কেউ জানেও না কোন ছাত্র-ছাত্রীর কি রেজাল্ট। হ্যাঁ, এমন কি শিক্ষকরাও না। একজন শিক্ষক কেবল তার নিজের কোর্সে কোন ছাত্র কতো গ্রেড পেয়েছে, সেটাই জানে। এর বাইরে তার জিপিএ কতো। সে অন্যান্য কোর্সে কেমন করছে। সে কি ভালো না খারাপ ছাত্র; এর কোন তথ্য আমরা কেউ জানি না। কেবল ওই ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি রেগুলেটর ছাড়া আর কেউ জানে না। কারো সেই তথ্য প্রকাশ্যে বলার পারমিশনও নেই ছাত্র-ছাত্রীদের অনুমতি ছাড়া।

আর আমরা কে প্রথম হয়েছে, কে দ্বিতীয় হয়েছে; তারা কি খায়, কি মাথায় দেয়, কখন ঘুমায়, কখন বাথরুমে যায় সে নিয়ে ব্যস্ত আছি। আমাদের শিক্ষকরাও ক্লাস রুমে প্রকাশ্যে এইসব নিয়ে আলোচনা করে এবং বলে বেড়ায়- তোমার জিপিএ ভালো না। তুমি তো খারাপ ছাত্র! তোমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আহা, কি মেধাবী আমরা!

লেখক : আমিনুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, এস্তোনিয়ান এন্টারপ্রেনারশিপ ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস


সর্বশেষ সংবাদ