‘র‍্যাগ ডে’ বিড়ম্বনা এবং স্মৃতিহীন বিদায়

মোফরাদ হোসেন
মোফরাদ হোসেন  © টিডিসি ফটো

বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিদায় কার্যক্রম বলতেই ‘র‍্যাগ ডে’ বিষয়টি সামনে চলে আসছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বিদায় কার্যক্রমের অসংযত বহিঃপ্রকাশ সুধী সমাজের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল।

‘র‍্যাগ ডে’ যার আভিধানিক অর্থটি হচ্ছে বছরের যে দিনটি শিক্ষার্থীদের বৎসরিক হৈহুল্লোড় বা হাস্যকৌতুকের দিন; যার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে তারা জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। পশ্চিমা বিদ্যাপীঠগুলোতে কখনো কখনো এমন কার্যক্রম শিক্ষার্থীরা সপ্তাহব্যাপী করে থাকে যেটা ‘র‍্যাগ উইক’ বলে পরিচিত।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ‘র‍্যাগ ডে’ অপরিকল্পিত উপায়ে উদযাপন এবং তাকে অর্থবহ করতে না পারার কারণে অনেকেই এটির বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছেন এবং তাতে শিক্ষাঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগ ডে বন্ধের নির্দেশ ইউজিসির

সর্বশেষ গত ০৩ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন একটি বিশেষ নোটিশ জারি করে। যাতে বলা হয়েছে র‍্যাগ ডে উদ্‌যাপনের নামে সকল ধরনের অশ্লীলতা, নগ্নতা, ডিজে পার্টি, অশোভন আচরণ, নিষ্ঠুর ও নিষিদ্ধ কর্মকান্ড এবং বুলিং অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

উল্লেখ্য নোটিশটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা বিশেষভাবে উল্লখ করা হয়েছে। সকল বিদ্যাপীঠে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেটার প্রেক্ষিতে এই নির্দেশনাকে স্বাগত জানাতেই হবে।

তবে দিন শেষে একজন শিক্ষার্থী তার বিদ্যাপীঠ থেকে যা যা নিয়ে যায় সেটি তার সারাজীবনের সম্পদ এবং সঞ্চয় হয়ে থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পড়াশোনার পাশাপাশি গঠনমূলক চিন্তার জন্য আদর্শ স্থান এবং তার পরিসরটিও বড় হওয়া চায় এবং সেটি নিশ্চিত করার মধ্যে দিয়েই একটি শৃঙ্খলিত সিভিল সোসাইটি বিদ্যাপীঠগুলো ভবিষ্যতের জন্য নিশ্চিত করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে জারি হওয়া নোটিশটিতে যে বিষয়গুলো স্বাভাবিক আচরণ বহির্ভূত সে বিষয়গুলোর পরিচ্ছন্ন উপস্থাপনা আছে এবং যা সকলের নিকটই গ্রহণযোগ্য কিন্তু  একই সাথে এটিও প্রত্যাশিত শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ পরিসরে কি করতে পারবে বা সহশিক্ষা কার্যক্রমে কি কি থাকবে সে বিষয়েও নির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়া।

আরও পড়ুন: র‌্যাগ ডে নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ধরনের প্রভাব ফেলবে

একজন শিক্ষার্থী যখন উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করে তার চিন্তার পরিসরটাও বড় হতে শুরু করে। আর এটা যাতে নিয়মতান্ত্রিক হয় সেটাই নিশ্চিত করে তার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোনো শিক্ষার্থীই চায় না তার শিক্ষালয় থেকে অনাড়ম্বরতার সাথে বিদায় নিতে। “Alma Mater” ছেড়ে আসার দিনগুলো বোধ করি বিজ্ঞজনেরাও মনে রাখেন!

পরিশেষে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আলাদা আলাদা স্মৃতি নিয়েই একটি শিক্ষালয় সামনে এগিয়ে যায়। আর তার শিক্ষার্থীদের সমন্বিত স্মৃতিই তাকে কালজয়ী করে তোলে। সুতরাং কোনো বিদ্যাপীঠ থেকে সেখানে অধ্যায়ন করা শিক্ষার্থীদের বিদায় স্মৃতিহীন হওয়া কাম্য না এবং সেটা যাতে সাবলীল, সুন্দর এবং একইসাথে দৃষ্টিকটু না হয় সেটাও প্রত্যাশিত।

লেখক: প্রভাষক, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ