উপাচার্য নিয়োগ ও জবাবদিহির জন্য কয়েকটি প্রস্তাব

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর  © ফাইল ছবি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিটি আলাদা আলাদা আইনে পরিচালিত হয়। আইনে লেখা আছে কীভাবে উপাচার্য নিয়োগ করা হবে। অন্যদিকে, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একটি আইনে চলে। পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে উপাচার্য নিয়োগের জন্য আইনে মূলত তিনটি ধারা রয়েছে। প্রথমটি হলো ১৯৭৩ সালের আদেশ অনুযায়ী সিনেট কর্তৃক মনোনীত তিনজনের প্যানেল থেকে নির্ধারিত শর্তে আচার্য একজনকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেবেন। তিনি চার বছরের জন্য আরও এক মেয়াদে পুনর্নিয়োগের জন্য যোগ্য হবেন। 

এখানে আরও বলা আছে, ছুটি, অসুস্থতা, পদত্যাগ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্য পদ সাময়িকভাবে শূন্য থাকলে আচার্য উপাচার্যের অফিসের কার্যাদি সম্পাদনের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

দ্বিতীয়টি হলো, আচার্য কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে একজন শিক্ষাবিদকে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ প্রদান করবেন। তবে এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি সময়ের জন্য নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।

তৃতীয়টি হলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আচার্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বোর্ড ট্রাস্টিজের প্রস্তাবিত প্যানেল থেকে একজনকে চার বছর মেয়াদে নিয়োগ দেবেন। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রথম শ্রেণি বা সমমানের স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা পিএইচডি ডিগ্রিসহ শিক্ষকতায় ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসহ মোট ২০ বছরের গবেষণা বা প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ ও পরবর্তী সময়ে প্রণীত আইনগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আচার্যের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। বর্তমানে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র একটিতে সিনেট কর্তৃক মনোনীত প্যানেল থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, বাকি তিনটিতে প্যানেল তৈরির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। 

অধিকন্তু, আচার্যের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় উপধারাটি প্রয়োগ করা হয়েছে এবং সেই উপাচার্য চার বছর মেয়াদ শেষ করেছেন। কোথাও আবার একই প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় মেয়াদেও উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে এটাই প্রতীয়মান হয়, কোনো বিষয় আইনে থাকাই যথেষ্ট নয়, একে অনুশীলন করতে হবে এবং তা মেনে চলার মনোবৃত্তি পোষণ করতে হবে। যে অধ্যাদেশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গর্ববোধ করে, তা অনুশীলন না করলে কী ক্ষতি হয়, এটি প্রত্যক্ষ করেও এর থেকে বের হওয়ার চেষ্টার প্রয়োজন বোধ করছে না।

আরও পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি ঢাবি শিক্ষক সমিতি

উপাচার্য হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও গবেষণা-প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার মাপকাঠির কোনো সুনির্দিষ্ট ফ্রেমওয়ার্ক নেই। বিষয়টি কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া মোটামুটি উন্মুক্ত। ন্যূনতম যোগ্যতার কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। এ বিষয়ে নেই কোনো ধারা বা উপধারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি ক্ষেত্রে পেশাগত শর্ত জুড়ে দেওয়া আছে। যেমন ২০০৩ সালে বিআইটি থেকে রূপান্তরিত প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে উপাচার্যকে প্রকৌশল শিক্ষাবিদ হতে হবে। 

নতুন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে কৃষিবিজ্ঞানের এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাবিদকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। তবে যা-ই থাকুক না কেন, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে উপাচার্য নিয়োগের বিষয় সম্পূর্ণ আচার্যের এখতিয়ারভুক্ত করা হয়েছে। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার কোনো ফ্রেমওয়ার্ক নেই।

তেমনি উপাচার্য হতে ইচ্ছুক একজন ব্যক্তি কীভাবে জানতে পারবেন, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদ খালি হয়েছে বা হবে, সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা জানাবেন বা দরখাস্ত করবেন, তার পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো কিছুই উন্মুক্ত করা হয় না। তাই কারও পক্ষে এ বিষয়ে জানা সম্ভব হয় না। উপাচার্য নিয়োগের এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের লোকদের বা অংশীজনদের পদ্ধতিগতভাবে কোনো ভূমিকা থাকার সুযোগ নেই। এমনকি যিনি উপাচার্য হতে আগ্রহী বা মনে করেন, তাঁর এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট যোগ্যতা রয়েছে, তিনিও জানতে পারেন না কীভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেবেন। অনেক ক্ষেত্রে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরও জানার সুযোগ নেই কোন প্রক্রিয়ায় বা কী গুণের কারণে তিনি উপাচার্য হয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আচার্য কীভাবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। যেহেতু বর্তমান সরকার সংসদীয় পদ্ধতির, তাই আচার্য অর্থাৎ মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে উপাচার্য নিয়োগের উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুত করা সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়, যাতে সাধারণত তিনজনের একটি নামের তালিকা থাকে। এই তিনজনের নামে তালিকা ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়, সেটি মৌলিক প্রশ্ন। 

উপাচার্য নিয়োগ লাভের ন্যূনতম যোগ্যতার মাপকাঠি ঠিক করতে হবে এবং নিয়োগপ্রক্রিয়ার ধাপগুলো ও কার্যপরিধি সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ খালি হওয়ার ছয় থেকে নয় মাস আগেই পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়োগের উদ্দেশ্যে বিস্তারিত তথ্যসহ উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অন্তর্ভুক্তির পেছনে কোনো ভিত্তি বা নীতিমালা নেই। বলা যায় কোনো গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া নেই। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, তার কোনো পর্ষদের এ-সংক্রান্ত হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ ও তদারককারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেরও (ইউজিসি) কোনো ধরনের আইনগত সুযোগ নেই। উপাচার্য কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাই নন, তিনি একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রধান। তাঁকে সবচেয়ে বেশি ধরনের বা বৈচিত্র্যের অংশীজনের সঙ্গে কাজ করতে হয় এবং একটি জাতির ভবিষ্যৎ কান্ডারিদের সময়ের উপযোগী হিসেবে নিজেদের তৈরি করার সর্বোত্তম পরিবেশগত কাঠামো নিশ্চিত করতে হয়। তাই এ পদে নিয়োগে সর্বোত্তম পন্থা অবলম্বন করাই বাঞ্ছনীয়। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় বিষয়টি কতটা জরুরি, তা নিশ্চয়ই ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। এখন প্রয়োজন পরিবর্তন করা, বাস্তবতার নিরিখে ব্যবস্থা নেওয়া এবং উত্তম চর্চা অনুসরণ করা বা তার চেয়েও ভালো কিছু করা।

উপাচার্য নিয়োগ লাভের ন্যূনতম যোগ্যতার মাপকাঠি ঠিক করতে হবে এবং নিয়োগপ্রক্রিয়ার ধাপগুলো ও কার্যপরিধি সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ খালি হওয়ার ছয় থেকে নয় মাস আগেই পরবর্তী উপাচার্য নিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়োগের উদ্দেশ্যে বিস্তারিত তথ্যসহ উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে।

প্রাপ্ত আবেদনগুলো প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করতে হবে। এরপর তাঁদের সবার আলাদা আলাদা সাক্ষাৎকার সম্পূর্ণ অনলাইনের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। এই সাক্ষাৎকারের ফলাফল এবং সার্বিক যোগ্যতা বিবেচনায় এনে পাঁচ থেকে সাতজনের তালিকা তৈরি করে তাঁদের সরাসরি সাক্ষাৎকার নিয়ে তিনজনের একটি প্যানেল তৈরি করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ করতে হবে। সর্বশেষ ধাপে নির্বাচিত এই তিনজনের প্যানেলের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে একটি এক ঘণ্টার সেশনে নিজেকে উপস্থাপন, এ পদ লাভের উদ্দেশ্য ও তাঁর কর্মপরিকল্পনা সবার কাছে উপস্থাপন করতে হবে। 

এ সেশনে শুধু নির্ধারিতসংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। উপস্থিত সবাই একটি নির্ধারিত ফরমে, উপস্থাপনার ভিত্তিতে ভোটিং করার সুযোগ পাবেন, যা এই তিনজনের প্যানেল প্রস্তাবের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এই তিনজনের প্যানেল প্রস্তাব উপাচার্য নিয়োগ প্রদানের উদ্দেশ্যে আচার্যের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাঠানো হবে।

নিয়োগের পর উপাচার্যের জবাবদিহিও নিশ্চিত করা অপরিহার্য। যে কর্তৃপক্ষ উপাচার্য নিয়োগ প্রদান করে, সেই কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত পর্ষদের মাধ্যমে বার্ষিকভাবে তাঁর কাজের মূল্যায়ন করবে। এ পর্ষদ বছরের যেকোনো সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের যেকোনো অংশীজনের কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহণ করবে, যা বিবেচনা করার বিষয়টির এখতিয়ার এ পর্ষদের হাতে থাকবে। এ ছাড়া এই ধরনের মূল্যায়নে, যা হবে লিখিত এবং গোপনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। মূল্যায়নের জন্য গঠিত নির্ধারিত পর্ষদ তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে তা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। কর্তৃপক্ষ এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় করণীয় নির্ধারণ করবে এবং পর্ষদের মূল্যায়ন উপাচার্যকে অবহিত করবে।

উপাচার্যের চারিত্রিক দৃঢ়তা, কর্মদক্ষতা, বিচক্ষণতা, সাহসিকতা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। এ রকম একজন অনন্য দক্ষতার ব্যক্তির কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে হলে অবশ্যই উপাচার্যের বেতনকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা, কাজ করার স্বাধীনতা বিশ্বের সফলতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে তুলনাযোগ্য করে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নির্ধারণ করতে হবে। 

উপাচার্যের বেতনকাঠামো চার বছর মেয়াদকালে স্থির থাকতে হবে, এমন নয়, এটি হতে হবে ডায়নামিক অর্থাৎ পরিবর্তনশীল। এর একটি অংশ স্থির থাকবে, বাকি অংশগুলো বার্ষিক জবাবদিহির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হবে। এ বেতনকাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে উপাচার্য নিজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনেরা বুঝতে পারবেন, তাঁকে কি সতর্ক করা হচ্ছে, নাকি তিরস্কার করা হচ্ছে, নাকি পুরস্কৃত করা হলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ই হচ্ছে গবেষণা, শিক্ষা এবং সার্বিক অর্থে জাতি গঠনের কেন্দ্রবিন্দু। উপাচার্য এটি পরিচালনার শীর্ষে অবস্থান করেন, তাই তাঁর নিয়োগপ্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উপাচার্য নিয়োগ হয়ে থাকে। প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ, সংবেদনশীল এবং সবার গোচরে হলে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকবে না। আর এ ধরনের গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় যিনি এ পদে আসীন হবেন, তাঁর অঙ্গীকারের জায়গাটি থাকবে অসীম। তাই বিতর্কিত হওয়ার মতো কাজ করার আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে। আমাদের এখনই এ নিয়ে ভাবতে হবে এবং উদ্যোগ নিতে হবে।

লেখক: সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence