আইএমএলে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় যৌক্তিক ভিত্তি আছে?

ঢাবির আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ও লেখক
ঢাবির আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ও লেখক  © টিডিসি ফটো

মূলত দেশে একটি বিদেশি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা চালু করণে সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট (আইএমএল) প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত ও গৃহীত বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন (ছায়া শিক্ষানীতি) বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইএমএল প্রতিষ্ঠার পর কয়েক দশক ধরে এটিই ছিলো দেশের একমাত্র বিদেশি ভাষা শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দীর্ঘ কয়েক দশক বিরতির পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইএমএল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ চলছে এবং বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইএমএল প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত আইএমএলসমূহে একটি এজমালি উপসর্গ দৃশ্যমান হয়েছে। সেটি হলো আইএমএল-তে ইংরেজি ভাষায় স্বল্পমেয়াদী শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা। আইএমএলসমূহে উদ্ভূত এই উপসর্গই বারংবার বিদেশি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিদেশি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা তার নিজস্ব ধারায় বিকশিত হওয়ার পক্ষে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।

কিন্তু ইংরেজি কোনো বিদেশি ভাষা নয়। গত দুই দশক ধরে শিক্ষানীতিতে পরিমার্জন ও দেশের নানাক্ষেত্রে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তৃতি ইত্যাদি নানাবিধ কারণে দেশে ইংরেজি এখন দেশি ভাষায় পরিণত হয়েছে। তা সত্ত্বেও আইএমএলসমূহে ইংরেজি ভাষা চালু ও তা বিস্তৃত করণের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। কারণ আইএমএলসমূহের কতৃত্বে যারা রয়েছেন, তাঁরা মূলত ইংরেজি শিক্ষক। তাঁদের এই প্রয়াসের ফলশ্রুতিতে আইএমএলসমূহতে বিদেশি ভাষার চেয়ে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমের বিস্তৃতিই চোখে পড়ছে। কিন্তু আইএমএলসমূহে যেসব যুক্তিতে ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হয়েছে তার একটিও যুক্তিও গ্রহণ করা হলো। নিম্নে আইএমএলসমূহে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনার পক্ষে যুক্তি ও তা খণ্ডনে প্রতিযুক্তিসমূহ তুলে ধরা হলো:

যুক্তি-১: আইএমএলসমূহের সংবিধি (উদাহরণস্বরূপ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ট সংবিধি)-তে ইংরেজি ভাষার কথা উল্লেখ রয়েছে, কাজেই আইএমএল-তে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করণ ও তা বিস্তৃত করণে কোনো বাধা নেই।

প্রতিযুক্তি-১: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আইএমএল-এর সংবিধি-তে সর্বপ্রথম যেকালে ইংরেজি ভাষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সেকালে ইংরেজি ভাষার প্রায়োগিকতার বিস্তৃতি বর্তমান কালের মতো ছিলো না। সে জন্য সেকালে আইএমএল-তে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার যৌক্তিকতা ছিলো। কিন্তু বর্তমানকালে গত দুই দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএমএলয়ের অনুকরণে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতিতে বর্তমানে ইংরেজি ভাষার মর্যাদা ও প্রায়োগিকতার ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, সেজন্য আইএমএলসমূহে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রম চালুর কোনো যৌক্তিকতা নেই।

যুক্তি-২: স্কুল-কলেজে ইংরেজি শিক্ষালাভের পরও অনেকেই ইংরেজিতে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে পারে না বিধায় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে পেশাজীবিদের মধ্যেও ইংরেজি শিক্ষার চাহিদা রয়েছে।  

প্রতিযুক্তি-২: স্কুল-কলেজের কারিক্যুলাম, শিক্ষক, শিক্ষা প্রশাসন এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের দোষে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি সনদ প্রাপ্তদের ইংরেজিতে যথেষ্ট দক্ষতা জন্মায় না। এই দায় ও দায়িত্ত্ব কী আইএমএলসমূহের? অবশ্যই না। বিষয়টি খোলাসা করার জন্য নিম্নে কয়েক প্রস্থ বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো:

ক) আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এমনকি শাস্ত্রকারদের মধ্যে সার্টিফিকেট কোর্সসমূহ সম্পর্কে স্পষ্টকোনো ধারণা নেই। বিদেশে স্কুল-কলেজ সমাপনীর পর যে বিষয়ের উপর সার্টিফিকেট প্রাপ্তি ঘটে, সে বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্স করার সুযোগ থাকে না। আমাদের দেশের এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি সনদ প্রাপ্তদের প্রত্যেকেরই ইংরেজিতে সার্টিফিকেট সনদ থাকে। কারণ এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি মানে হলো সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট ও হাইয়ার সেকন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট। এই সার্টিফিকেট সনদ দ্বারা বুঝায় এই সনদধারী অন্যান্য কিছু বিষয়ের সাথে ইংরেজিতে সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট ও হাইয়ার সেকন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট অর্জন করেছে। সে অর্থে যাদের সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট ও হাইয়ার সেকন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট সনদ রয়েছে, তাদের প্রত্যকেরই মূলত ইংরেজি ভাষায় সার্টিফিকেট সনদ রয়েছে।  সে বিবেচনায় যাদের এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি. সনদ রয়েছে তাদের আইএমএলতে পরিচালিত জুনিয়র সার্টিফিকেট ও সিনিয়র সার্টিফিকেট কোর্সের ইংরেজি শিক্ষা প্রদানের বিষয়টি বিধি সম্মত নয়।

খ) আইএমএলতে পরিচালিত জুনিয়র সার্টিফিকেট ও সিনিয়র সার্টিফিকেট কোর্সসমূহ বিদেশি ভাষায় ০ (শুন্য) দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত। কিন্তু ইংরেজিতে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি. সনদ রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের ১২ বছর ইংরেজি ভাষা শেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে বিধায় তাদের ইংরেজিতে ভাষাগত দক্ষতা ০ (শুন্য) নয়। সে বিবেচনায় ইংরেজিতে জুনিয়র সার্টিফিকেট ও সিনিয়র সার্টিফিকেট কোর্স আইএমএল-এর শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হওয়া অনুচিত।

গ) বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি. সনদ প্রাপ্তদের ইংরেজিসহ অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞানে অপরিপূর্ণতা বা অদক্ষতা রয়েছে। এর দায় ও দায়িত্ত্ব কোনোটিই আইএমএল-এর উপর বর্তায় না। এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি. সনদ প্রাপ্তদের ইংরেজিতে অদক্ষতার প্রথম দায় স্কুল-কলেজ তথা বিভাগ ভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের। আর ইংরেজিতে অদক্ষদের ইংরেজিতে দক্ষ করে তোলার প্রথম দায়িত্ত্বও ঐ শিক্ষাবোর্ডের। কাজেই ইংরেজিতে অদক্ষতা পরিপূরণের এই দায়িত্ত্ব পালনে শিক্ষাবোর্ডগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কলেজে ইংরেজি ভাষা সেন্টার চালু করতে পারে। আর যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর এই দায়িত্ত্ব বর্তায়ও, তাহলেও এই ইংরেজি দক্ষতাসূচক শিক্ষাকার্যক্রমের দায়িত্ত্ব বর্তাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগগুলোর উপর। আইএমএলসমূহ যেহেতু বিদেশি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেহেতু এই শিক্ষাকার্যক্রম আইএমএলতে পরিচালনা অবাঞ্ছনীয়। তা সত্ত্বেও ইংরেজি শিক্ষকগণ তারা তাদের ইংরেজি বিভাগে এই ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রম চালু না করে, আইএমএলগুলোর উপর কর্তৃত্ত্ব খাটিয়ে কোচিং মানের ইংরেজি শিক্ষা চাপিয়ে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে বিদেশি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রমগুলো পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএমএলসমূহ বিদেশি ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠার পরিবর্তে, ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রম বাহুল্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যেহেতু ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে, আইএমএলসমূহে ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রম চালুর ফলে বিদেশি ভাষা শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে, সেজন্য আইএমএলসমূহ থেকে ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রম সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

এ পর্যন্ত উপস্থাপিত আলোচনায় সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আইএমএল-তে উদ্ভূত এজমালি ইংরেজি উপসর্গের উপর আলোকপাত করা হলো। এ পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আইএমএল-এর নিজস্ব কিছু ইংরেজি উপসর্গের উপর আলোকপাত করা হবে। দেশে প্রতিষ্ঠিত আইএমএলসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত আইএমএল হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আইএমএল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ এই আইএমএলতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আইএমএল-তে ইংরেজিতে এই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাকার্যক্রম চালু পক্ষে যুক্তি ও খণ্ডনে প্রতিযুক্তিসমূহ তুলে ধরা হলো:

যুক্তি-৩: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএমএলসমূহের সংবিধিতে ইংরেজি ভাষার কথা উল্লেখ রয়েছে। কাজেই আইএমএল-তে ইংরেজিতেস্নাতক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করণে কোনো বাধা নেই।

প্রতিযুক্তি-৩: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএমএলসমূহের সংবিধিতে ইংরেজি ভাষার কথা উল্লেখ রয়েছে- এ যুক্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আইএমএল-তে যে ইংরেজিস্নাতক শিক্ষা কার্যক্রম চালু তার নাম হলো English for Speakers of Other Languages (ESOL)। ইংরেজি স্নাতক শিক্ষাকার্যক্রমের এই নাম একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি, ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি এবং জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি-এই তিন বিষয়ে স্নাতক শিক্ষাকার্যক্রমের চেয়ে ভিন্নতর। উল্লেখ্য যে, এই তিন বিদেশি ভাষায় স্নাতক শিক্ষাকার্যক্রমগুলোর আনুষ্ঠানিক নাম হলো যথাক্রমে BA in Chinese Language and Culture, BA in French Language and Culture &BA in Japanese Language and Culture। একই সময়ে এই স্নাতক শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হলেও, ইংরেজিতে এই শিক্ষাকার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ভিন্ন। কিন্তু English for Speakers of Other Languages (ESOL) হিসাবে আরোপিত নাম কোনো ডিগ্রী শিক্ষাকার্যক্রমের নাম হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ English for Speakers of Other Languages (ESOL) বলতে কোনো স্নাতক শিক্ষাকার্যক্রমে অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে প্রস্তুতি পর্বকে বুঝায়। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য কোনো ডিগ্রী শিক্ষাকার্যক্রমের প্রস্তুতি পর্বের শিক্ষাকার্যক্রমগুলোর নাম এরূপ হয়ে থাকে। কাজেই English for Speakers of Other Languages (ESOL) নামক শিক্ষাকার্যক্রমটি ডিগ্রীর নাম হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কেবলমাত্র ইংরেজি স্নাতক শিক্ষাকার্যক্রমের নাম ও তার অর্থ বিবেচনায় নিলেও, আইএমএল-তে এই শিক্ষাকার্যক্রম চালু ও পরিচালনার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না।

যুক্তি-৪: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএমএলসমূহের সংবিধিতে ইংরেজি ভাষার কথা উল্লেখ রয়েছে। কাজেই আইএমএল-তে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম চালু করণে কোনো বাধা নেই।

প্রতিযুক্তি-৪: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএমএলসমূহের সংবিধিতে ইংরেজি ভাষার কথা উল্লেখ রয়েছে- এ যুক্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আইএমএল-তে যে ইংরেজি স্নাতক শিক্ষা কার্যক্রম চালু তার নাম হলো Teaching English to Speakers of Other Languages (TESOL)। ইংরেজি স্নাতক শিক্ষাকার্যক্রমের এই নাম একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি, ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি এবং জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি-এই তিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষাকার্যক্রমের চেয়ে ভিন্নতর। উল্লেখ্য যে, এই তিন বিদেশি ভাষায় স্নাতক শিক্ষাকার্যক্রমগুলোর আনুষ্ঠানিক নাম হলো যথাক্রমে MA in Chinese Language and Culture, MA in French Language and Culture & MA in Japanese Language and Culture। একই সময়ে এই স্নাতকোত্তর শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হলেও, ইংরেজি শিক্ষাকার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ভিন্ন। অধিকন্তু Teaching English to Speakers of Other Languages (TESOL) শিক্ষাকার্যক্রমটির নাম থেকেই স্পষ্ট যে, এটি শিক্ষাশাস্ত্রীয় অনুষদের অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে এরূপ শিক্ষাকার্যক্রম শিক্ষাশাস্ত্রীয় অনুষদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। সে অর্থে উক্ত Teaching English to Speakers of Other Languages (TESOL) শীর্ষক শিক্ষাকার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আইএমএল-তে পরিচালনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। 

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটসমূহে পরিচালিত নন-ডিগ্রী ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ইংরেজি ডিগ্রী শিক্ষাকার্যক্রম চালু করণ ও তা পরিচালনার পক্ষে যেসব যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে, সে সব যুক্তি খণ্ডনে যেসব প্রতিযুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে তা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটসমূহে ইংরেজি নন-ডিগ্রী ও ডিগ্রী-এই উভয় প্রকার শিক্ষাকার্যক্রম চালু করণ ও পরিচালনার কোনো যৌক্তিকতা নেই।  

বর্তমানে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি, ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি এবং জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি-এই তিন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হয়েছে, যার আনুষ্ঠানিক শিরোনাম হলো যথাক্রমে BA in Chinese Language and Culture, BA in French Language and Culture & BA in Japanese Language and Culture এবং MA in Chinese Language and Culture, MA in French Language and Culture & MA in Japanese Language and Culture। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আইএমএলতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হয়েছে। কিন্তু ইংরেজি যে বিদেশি ভাষার চেয়ে ভিন্ন তা তার নামকরণে স্পষ্ট হয়েছে। ইংরেজি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাকার্যক্রমের নাম আরোপ করতে গিয়ে, বিদেশি ভাষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাকার্যক্রমের চেয়ে  ভিন্নতর নাম আরোপ করা হয়েছে। এগুলো হলো English for Speakers of Other Languages (ESOL) এবং Teaching English to Speakers of Other Languages (TESOL)। লক্ষণীয় যে, ইংরেজি ভাষায় ডিগ্রী শিক্ষাকার্যক্রমগুলোর নাম বিদেশি ভাষা শিক্ষাকার্যক্রমগুলো থেকে ভিন্নতর। এখানে উল্লেখ্য যে, English for Speakers of Other Languages (ESOL) কোনো ডিগ্রী শিক্ষাকার্যক্রমের নাম হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য কোনো ডিগ্রী শিক্ষাকার্যক্রমের প্রস্তুতি পর্বের শিক্ষাকার্যক্রমের নাম এরূপ হয়ে থাকে। কাজেই English for Speakers of Other Languages (ESOL) নামক শিক্ষাকার্যক্রমটি ডিগ্রীর নাম হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে Teaching English to Speakers of Other Languages (TESOL) শিক্ষাকার্যক্রমটির নাম থেকেই স্পষ্ট যে, এটি শিক্ষাশাস্ত্রীয় অনুষদের অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে এরূপ শিক্ষাকার্যক্রম শিক্ষাশাস্ত্রীয় অনুষদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। সে অর্থে উক্ত English for Speakers of Other Languages (ESOL) এবং Teaching English to Speakers of Other Languages (TESOL) শীর্ষক শিক্ষাকার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আইএমএল-তে পরিচালনার কোনো যৌক্তিকতা নেই। 

লেখক:
অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ
পরিচালক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এবং
ভূতপূর্ব গবেষণা ফেলো, জাপান রাষ্ট্রভাষা ইনস্টিটিউট
ভূতপূর্ব অভ্যাগত অধ্যাপক, কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়
ভূতপূর্ব অভ্যাগত শিক্ষক, টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ