গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ

রাফাত মিয়া
রাফাত মিয়া   © টিডিসি ফটো

২০২০ সালে পরীক্ষা শুরুর ঠিক ৭দিন আগে স্থগিত করা হয় এইচএসসি পরীক্ষা। মহামারীর ক্রান্তিকালে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে জয়ী হয়ে ভর্তি পরীক্ষার একেকটি সিটের জন্য লড়াই করে টিকে থাকা সৈনিকদের মুখোমুখি হতে হয় বহুমুখী ত্রুটির।

আসে নতুন নতুন ধারণা, এর মহড়া চলে এইচএসসি-২০২০ ব্যাচের হতাশায় বিভোর শিক্ষার্থীদের ওপর। ১১ টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ৯টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় একত্রিত সিদ্ধান্তে ‘জিএসটি’ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। এতে ছিল না কোন নির্দিষ্ট মানবন্টন, ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে বিজ্ঞান বিভাগের প্রশ্ন পত্রে ছিল জটিলতা। ১২০০ টাকা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করতে হয়, জিপিএ ৯.০০এর কম আবেদন করতে পারছিল না অনেকেই যদিও পরবর্তীতে তা প্রায় ৮.৩ এ নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারে ১লাখ ৩২ হাজার শিক্ষার্থী। ১০০নম্বরের একটি প্রশ্ন দুই পৃষ্ঠায় হওয়ায় বুঝতে সমস্যা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের।

আরও পড়ুন: এসএসসিতে ফেল, ট্যাক্স ক্যাডার হলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহেল

এরপর আসি ফলাফল এর ব্যাপারে, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে শুধু শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরটুকু দেখানো হয় তাদের পজিশন দেখানো হয়নি। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় যখন আবারো পাঁচশ টাকায় তাদের প্রতিটি অনুষদে আলাদা আবেদন করতে বলে তখন এটা এক বিশাল ভোগান্তিতে পরিণত হয়। নিজেদের অবস্থান জানতে না পারায় প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয় এতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের মেধা তালিকা প্রকাশ করলেও কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ করে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির জন্য ডাকে, এতে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের ব্যয় বহন করতে হয় শিক্ষার্থীকে। মৌখিক পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীকে আবার ভর্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয় ফলে গচ্চা যায় আরো বিপুল অর্থ।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়হীনতা দিকে তাকালে দেখা যায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর দিকে সার্কুলার প্রকাশ করলেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শেষের দিকে সার্কুলার প্রকাশ করে। এতে একজন শিক্ষার্থী প্রথমে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একটি আসন নিশ্চিত করলেও পরবর্তী সময়ে অন্য আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো বিষয় পেয়ে ওখানে যেতে হলে তার ভর্তি বাতিল করতে গিয়ে বিশ হাজারের অধিক অর্থ ব্যয় হয়। এভাবে একেকজন জন শিক্ষার্থীকে দুই থেকে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং অনেকেই আর্থিক সামর্থ্যের কারণে ভালো বিষয়টি পড়তে পারেনি।

মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে আহ্বান করলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভোগান্তি থেকে বাঁচতে নিজেরাই পরীক্ষা আয়োজনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছেন ।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ১০ থেকে ২০ টি মেধাতালিকা প্রকাশ করার পরও নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী পাচ্ছে না ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা ত্রুটি নিরসন না করে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

লেখক- সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ