বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বৃদ্ধি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবছেন বুয়েট ভিসি

  © টিডিসি ফটো

বুয়েটের বর্তমান ভিসির কয়েকটি কাজে আমি সত্যিই মুগ্ধ। প্রথম যেই কাজে আমি মুগ্ধ সেটি হলো বুয়েটের শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে বর্তমান ভিসি একটি যুগান্তকারী পলিসি গ্রহণ করেছেন। সেটি হলো শিক্ষকরা ভালো মানের জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করলে ১.৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। চীন এই কাজটি অনেক আগেই করেছে। যদিও সেখানে টাকার পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি। যা স্বাভাবিক কারণ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও আমাদের চেয়ে বেটার।

গতকাল দেখলাম বুয়েট আরো একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সেটি হলো বুয়েটের ভিসি বলেছে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়াতে গেলে অনেক সময় নষ্ট হয়। ঢাকা শহরে যেই পরিমান ট্রাফিক জ্যাম তাতে এইটা স্বাভাবিক। এ থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ক্যাম্পাসেই তাদের জন্য ক্যাম্পাস জব চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার।

আরও পড়ুন: ‘টিউশনে শিক্ষার্থীদের সময় নষ্ট, তাই অন ক্যাম্পাস জব চালু হবে’

এসব প্রমাণ করে বুয়েটের ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বৃদ্ধি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবছেন। এগুলোইতো ভিসির কাজ। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি গত বছর একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে অনলাইন বেসড ওপেন এক্সেস জার্নালে প্রকাশের জন্য যেই টাকা লাগে সেই টাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ যদিও এর যথেচ্ছ ব্যবহার বা abuse এর সুযোগ আছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শিক্ষকরা একটি পয়সাও পাবে না। এই ক্ষেত্রে বুয়েটের সিদ্ধান্তই হলো যুগান্তকারী যার মাধ্যমে শিক্ষকরা ভালো মানের গবেষণায় উৎসাহিত হবে।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের অন-ক্যাম্পাস কাজের সুযোগ প্রসঙ্গে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাজ কি? তাদের মূলত কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরি করা। কি করিলে ক্যাম্পাস শিক্ষা বান্ধব হবে, কি করিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ফান্ড আনা যাবে, কোন বিভাগে কি নাই খোঁজ রাখা ইত্যাদি। শিক্ষক নিয়োগে ভিসির কোন রোল বা ভূমিকা নাই।

আমি এখন সিকিম মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজিতে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে। সেখানে ইতালির পলিটিকনিকো দি তুরিনো (যা ইতালির এমআইটি বলা যায়) এর গণিতের অধ্যাপকের সাথে কথা হচ্ছিল। সে জানালো সেখানে শিক্ষক নিয়োগে ভিসির ভূমিকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির মত। অর্থাৎ শিক্ষক নিয়োগে সরাসরি কোন ভূমিকা নাই। শিক্ষক নিয়োগে ৪ থেকে ৫টি স্তর আছে। সব কিছু হয়ে গেলে সবার শেষে ভিসির স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত হয় কিন্তু শিক্ষক হবে বা কাকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে এই ব্যাপারে ভিসির কোন ভূমিকা নাই। আর আমাদের এখানে মূলত ২০ মিনিটের ইন্টারভিউয়ের একটি স্তর। এই ২০-২৫ মিনিটেই শিক্ষক নিয়োগের মত এত বড় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। শিক্ষক নিয়োগকে আমরা কতটা খেয়ো বানিয়ে ফেলেছি এ থেকেই বোঝা যায়।

যেই ভিসি পদে থাকা অবস্থায় শিক্ষক নিয়োগে অযাচিত ক্ষমতা ত্যাগ করে ভবিষ্যৎ ভিসিদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ভাবার সময় তৈরী করে দিবে সেই ভিসি ইতিহাসে স্থান পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে ভিসি নিয়োগ নিয়ে রাজনীতি চলবেই। আর এটা চললে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মান জিন্দেগিতেও ভালো হবে না।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ