ভাষা আন্দোলনের নেপথ্যে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন অগ্রসৈনিক
- মো. আরিফুল ইসলাম
- প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:০৪ AM , আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:০৪ AM
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট শুধু ১৯৫২ সালকে কেন্দ্র করে নয় বরং ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এ আন্দোলনের তেজস্ক্রিয়তা বিস্তৃত। যেহেতু ভাষাবিজ্ঞানের ছাত্র তাই ‘ভাষা পরিকল্পনা ও নীতি’ কোর্সটি পড়ার সময় বেশকিছু তথ্য আমরা অধ্যয়ন করতে পেরেছি।
ভাষা আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের সূচনা হয় দেশভাগের প্রাগকালে। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি নিবন্ধে বলেছিলেন, প্রস্তাবিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ও জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আজাদ পত্রিকায় এ বিষয়ে তীব্র সমালোচনা করে এবং দাঁতভাঙ্গা জাবাবে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে গণতন্ত্র সম্মত উপায়ে শতকরা ৫৬ ভাগ জনসংখ্যা ভাষা বাংলাই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ভাষা। পরের বছরই ৪ঠা জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ছাত্রসমাজকে সুসংগঠিত করে রাষ্ট্রভাষা ভাষা বাংলার প্রয়োজনীয় ও গুরুত্ব তুলে ধরেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ই জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্যোগেই বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ভাষা করার জন্য লিফলেট প্রচার করা হয়। এ সম্পর্কে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, “... Sheikh Mujibur Rahman who was one the signatories of the leaflet which advocated Bengali to be the Student's league of Pakistan.” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কতৃক সম্পাদিত Secret document of intelligence branch on the father of the nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman গ্রন্থে এ সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট তথ্য উঠে এসেছে।
এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি বাবু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক পাকিস্তানের গণপরিষদ বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করলে লিয়াকত আলী খান প্রকাশ্যে বিরোধীতা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ভাষা করার দাবি করলে শুরু হয় ভাষা আন্দোলনে আনুষ্ঠানিক সূচনা পর্ব।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা পাকিস্তানী শাষক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ১১ই মার্চ ধর্মঘটের ডাক দেয় ছাত্র সমাজ। ১০ই মার্চ রাতে ফজলুল হলে বঙ্গবন্ধু ১১ই মার্চে ডাকা ধর্মঘটকে সফল করতে বিভিন্ন ভাবে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
ওই ধর্মঘটের আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু হামলার শিকার হন এবং গ্রেফতার হয়। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “আমাদের প্রায় সত্তর-পঁচাত্তর জন্য বেঁধে নিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দিল সন্ধ্যার সময়।”
কারাগারে ররোজনামচা গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ভাষা আন্দোলন শুরু হয় ১১ই মার্চ ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (বর্তমান বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) ও তজমুদ্দিন মজলিস উদ্যোগে।
১৯ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন বলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ভাষা তখন বঙ্গবন্ধু ও উপস্থিত ছাত্র-জনতা তার প্রতিবাদ করেন।
“তাঁকে যেমন দেখেছি” গ্রন্থে আবুল ফজল লিখেছেন, “কালে কালে অধিকারের প্রশ্নে বাঙালি জেগে উঠলেও, সূর্যের তেজে চির-অম্লান স্বাধীনতার বীজ এই জাতির চেতনায় প্রথম উপ্ত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর; এবং সেটা হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে, যার অন্যতম নেতা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তখন এ দেশের ছাত্রসমাজকে তিনি সংগ্রামী চেতনায় উজ্জীবিত করেছিলেন; প্রকৃতপক্ষে বাংলার ছাত্র আন্দোলনের তিনিই প্রতিষ্ঠাতা।”
১৯৫১ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে বেশ কয়েকবার ভর্তি করা হয়। পাকিস্তানি গোয়েন্দা রিপোর্ট ও অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও সেই বিষয়ে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে। বঙ্গবন্ধু এসময় মোহাম্মদ তোয়াহা এবং অলি আহাদকে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করার নির্দেশ দেন। যা অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে।
তারপরের ইতিহাস সকলেই জানা। শহীদের রক্ত দিয়ে অর্জিত এই বাংলা ভাষা। যার নেপথ্যে ছিলো দূরদর্শী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সরাসরি অংশগ্রহণ ও বিচক্ষণ দিক নির্দেশনা।
লেখক: সাবেক, সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়