‘১০ বছর পরে সকলে বুঝতে পারবে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরী কত বড় বলদামি’

ঢাবি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
ঢাবি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন  © টিডিসি ছবি

২০২৩ সালের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাক্রম তৈরী করেছে আমাদের গুণধর শিক্ষামন্ত্রণালয়। সেখানে যেই বিষয় কারিগরি বোর্ডে পড়ানোর কথা তা এখন থেকে main stream শিক্ষা বাংলা মাধ্যমে পড়িয়ে বাংলা মাধ্যমকে একটু কারিগরি মাধ্যমের দিকে নামিয়ে আনা হয়েছে। বিজ্ঞান একটি বিশেষায়িত বিষয়। এইটা পড়তে হলে স্কুল থেকেই তাদের তৈরী করতে হয়। সেই তৈরীর অংশ হিসাবেই বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের উচ্চতর গণিত পড়তে হতো। সাথে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীবনবিজ্ঞানকে আলাদা বিষয় হিসাবে পড়ানো হতো।

নতুন এই শিক্ষাক্রম আগে যারা আর্টস এবং কমার্স পড়তো তাদের সুবিধার জন্য উচ্চতর গণিত একদম বাদ দেওয়া হলো। আর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীবনবিজ্ঞানকে একত্রিত করে বিজ্ঞান নামক একটি বিষয় পড়ানো হবে। এতে আগের নিয়মে যারা আর্টস নিয়ে যা শিখতো নতুন কাররিকুলামে তারা একটু বিজ্ঞান এবং একটু গণিত পড়বে। কিন্তু এটি করতে গিয়ে আগের নিয়মে বিজ্ঞানের ছাত্ররা যা শিখত প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমে তারা বিজ্ঞান অনেক কম শিখবে। বিনিময়ে তারা নতুন শিখবে জীবন জীবিকা। আগের নিয়মে যারা বিজ্ঞান পড়তো তারাতো এসএসসি শেষে পড়াশুনা বাদ দিয়ে কিছু করে খাওয়ার জন্য পড়বে না। তাদের গোলতো বিজ্ঞানী হওয়া। তাহলে তাদেরকে কেন বিজ্ঞান শেখানোর পরিবর্তে কারিগরি বিদ্যা শেখানো হবে? অন্যদিকে প্রযুক্তি নামক বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল যে এইটা এখন ক্লাস সিক্স থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সকল শ্রেণীতে পড়ানো হবে। WOW না? আগে বিজ্ঞান না শিখে কেউ কি প্রযুক্তিবিদ হতে পারবে?

এই বলদামি মার্কা কারিকুলাম চালু হলে রাখলাম আজ থেকে ১০ বছর পরে সকলে বুঝতে পারবেন কি বলদামিটাই করে ফেলেছি। ঠিক যেমন পিইসি জেএসসি ইত্যাদি চালু করে কুফল বিঝতে পারছি। সৃজনশীল সিস্টেম চালু করতে গিয়ে আমরা যা করেছি তার কুফলও বুঝতে পারছি। আমাদের নতুন প্রজন্মকে নিম্নমানের শিক্ষা প্রদানের জন্য যারা কাজ করছেন এবং আজকে যারা এই বিষয়ে চুপ করে আছেন তাদের উপর অভিশাপ লাগবে। কারণ এর ক্ষতিটা কতটা সুদপ্রসারী হবে তা আমি এখনই দেখতে পাচ্ছি। প্রযুক্তি আগে না বিজ্ঞান আগে এইটা বোঝার ক্ষমতা যেই জাতির নাই সেই জাতির আরো অধঃপতন কেবল সময়ের ব্যাপার।

শুধুই কি কাররিকুলাম পরিবর্তন করছে? পরীক্ষার সিস্টেমেও পরিবর্তন আনছে। এখন থেকে নাকি স্কুল কলেজেই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। ঠিক যেমন সৃজনশীল শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে সৃজনশীল প্রশ্নের অবতারণা করে ডিসাস্টার এনেছি তেমনি মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন না করে ধারাবাহিক মূল্যায়ন সিস্টেমের ফলে শিক্ষকরা এলাকার রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাদের আরো বেশি করে চাপের মুখে পড়বেন। শিক্ষকদেরকে ব্যবহার করে সমাজকে আরো দুর্নীতিগ্রস্ত করার একটা পায়তারা। এমনিতেই এসএসসি ও এইচএসসি ল্যাব পরীক্ষার মূল্যায়ন স্কুল কলেজের হাতে দিয়ে কি লাভ হয়েছে? ওগুলোর কি সঠিক মূল্যায়ন?
হয়? আমরা কি এইসব জানিনা? জেনেশুনে ধারাবাহিক মূল্যায়নের পথে কেন গেলাম? কারণ এতে সবাই মোটামোটি শতভাগ নম্বর পাবে।

কেউ নেতা নেত্রীদের প্রভাব খাটিয়ে ভালো নম্বর পাবে আর কেউ শিক্ষক কর্মচারীদের টাকা পয়সা দিয়ে ভালো নম্বর পাবে। সত্যিকারের মূল্যায়ন হবে না। শুধু শুধু মানুষকে আরো বেশি করে খারাপ কাজে করাতে বাধ্য করে সমাজকে আরো কুলষিত করা হবে। সবাই যদি ভালো করে এর নাম কি পরীক্ষা বলা যায়?

সমস্যাটা হলো যারা আগের নিয়মে আর্টস পড়েছেন তারা দেখছেন বাহ্ ভালোইতো। এই নিয়মে আমরা পড়লে আমরাওতো একটু বেশি গণিত ও বিজ্ঞান শিখতে পারলাম। এই পার্সপেক্টিভ থেকে দেখে অনেককেই এই বিষয়ে চুপ থাকতে দেখি। অথচ বিজ্ঞান পড়া মানুষদের পার্সপেক্টিভ থেকে দেখলে যে ডিজাস্টার হয়ে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারে না। যা হওয়ার দরকার ছিল সেটা হলো তিনটি সাবজেক্টকে কম্পালসারি করে বাকি সকল বিষয় অপশনাল করলেই হতো সেরা সিস্টেম।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত)


সর্বশেষ সংবাদ