ভুলে ভরা গুচ্ছ কমিটি প্রমাণ করল ‘তারা ব্যর্থ’
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’। হ্যাঁ আমরাও চাইতাম ডিজিটাল এই বাংলাদেশে বর্তমান সময়ের প্রযুক্তির উন্নত সিস্টেমে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হবে শিক্ষার্থী বান্ধব। অতীতের মতো সকল যাতায়াত সমস্যা, অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন ফিসহ নানামুখী সমস্যার সমাধান দেবে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়ার নতুন পদ্ধতি ‘গুচ্ছ’। যেখানে সম্মিলিতভাবে যুক্ত রয়েছে দেশের স্বনামধন্য ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রথম থেকে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির লাঘব হবে এমনটি বিবেচনা করা হলেও দিনশেষে ভোগান্তির চরম শিখরে পৌঁছে দিয়েছে এই গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পদ্ধতি। একের পর এক অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত এবং নিজেদের মতো মনগড়া সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে আসছে এই গুচ্ছ পদ্ধতির আয়োজক কমিটি।
১৯ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে গুচ্ছ পদ্ধতির নিয়ম কানুন জানানো হয়; প্রকাশ করে একটি নোটিশও। পরিবর্তন আসে পূর্বের ন্যায় বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট থাকবে না। তবে বিজ্ঞানে পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভাগ পরিবর্তন করতে পারবে। একজন বিবেকবান মানুষের কাছে যদি প্রশ্ন করেন কেউ কি বলবে- কোন শিক্ষার্থী বিজ্ঞানের বিষয়গুলো অধ্যয়ন করে পরীক্ষা দিয়ে চাইবে মানবিকের বিষয়ে পড়ালেখা করতে? উত্তর অবশ্যই ‘না’।
তবে গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার আয়োজক কমিটি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বারবার বলে বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের এই বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর একটি বিষয়।
‘ডি’ ইউনিট বহাল রাখার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে ইন্টার পাশ করা শিক্ষার্থীদের। যখন একজন শিক্ষার্থীকে পাঠ্যবই সময়ে দেয়া দরকার তখন তারা রাজপথে সময় দিয়েছে। তবুও অনিয়মের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু আজও তারা তাদের মতো সিদ্ধান্তে অটুট।
পড়ুন: ফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন: শাবিপ্রবি উপাচার্য
আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও তারা পরীক্ষা আয়োজন করে। ৩ টি ইউনিটে (বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য) দেড় লাখ করে সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। দিনশেষে বিজ্ঞানে ১ লক্ষ ৩০ হাজার নেয়ার কথা জানায়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পরে অধিকাংশদের পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। তবুও বাদ যায় অনেক শিক্ষার্থী।
পরীক্ষা শেষে ‘এ’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশ পেলো। সেখানেও হয়েছিলো কিছুটা গড়মিল। গতকালকে প্রকাশিত হলো ‘বি’ ইউনিটের ফলাফল। ফলাফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দেয় চরম উদ্বেগ। কারণ তারা যতটি না প্রশ্ন পরীক্ষার হলে উত্তর করেছে তার থেকে বেশি ফলাফলে এসেছে।
আবার দেখা গেছে তারা যত প্রশ্নের উত্তর করেছে তার ৩ ভাগের ১ ভাগও উত্তর করেনি দেখিয়েছে। এমনই একটি পরিস্থিতিতে চাপের মুখে দ্রুত সময়ে যান্ত্রিক দ্রুতির কথা বলে তারা তাদের ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত ফল সরিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে গতকালকে ভোর রাতের দিকে পুনরায় ফলাফল প্রকাশ করে।
যান্ত্রিক ত্রুটি শেষে ফলাফল প্রকাশ করলেও সমাধান মেলেনি ফলাফল গড়মিলের। তবে এতটুকু পরিবর্তন দেখা গেছে যে- প্রথমবার ফলাফলে একজন শিক্ষার্থী বাংলায় পেয়েছে ১৬ এবং ইংরেজিতে পেয়েছে ১৬। পরবর্তীতে ফলাফল প্রকাশের পর তার ফলাফলের পরিবর্তন হয়েছে বাংলায় পেল ২০ আর ইংরেজিতে ১৪। তাহলে পরিবর্তনটা কোথায়?
পড়ুন: গুচ্ছের ফল পুনর্নিরীক্ষা ‘সি’ ইউনিটের রেজাল্টের পর
অন্য একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন প্রথমে তার বাংলায় আসে ১১ এবং ইংরেজিতে আসে ১৭। কিন্তু সংশোধিত ফলাফলে আসে বাংলায় ১৭ এবং ইংরেজিতে ১১। এখানেও দেখুন পরিবর্তন কোথায়! তবে কি যান্ত্রিক ত্রুটি শুধু বাংলার স্কোর ইংরেজিতে এবং ইংরেজির স্কোর বাংলাতে রূপান্তরের জন্য হয়েছিলো?
আসুন দেখি ফলাফলে কি রকম গড়মিল?
আমরা একটু শিক্ষার্থীদের তথ্য সূত্র উল্লেখ করি। নোয়াখালীর একজন শিক্ষার্থী মাহি যে কিনা পরীক্ষার হল থেকে এসে ৪৪টি প্রশ্নের উত্তর নিজে মিলিয়ে দেখেছে সঠিক। সেখানে তার ফলাফল আসে ১৫ কিভাবে? আরেকজন শিক্ষার্থী ৬৩টি প্রশ্ন সঠিক উত্তর দেয়ার পরেও তার ফলাফল ১৫ আসে কিভাবে? অন্য একজন ৫০টি উত্তর সঠিক থাকার পরে তার ভুল করা ২৫টি কি করে সঠিক উত্তর হয়ে আসে? এসব কি কম্পিউটারের ভুল?
এমনটিও হয় শিক্ষার্থীরা যতগুলো ভুল উত্তর করেছে তত স্কোর দেখাচ্ছে। আবার বাংলা ও ইংরেজির স্কোরের রূপান্তর দেখা গেছে। আপনারা ফলাফল পুনঃযাচাইয়ের সুযোগ রেখেছেন তবে কিভাবে? ১ হাজার টাকা দিয়ে। যেখানে ফলাফল প্রকাশে ভুল, উত্তরে ৯০% গড়মিল সেখানে ১ হাজার টাকা দিয়ে ০% ফলাফল পরিবর্তন আশা করা বোকামী ছাড়া কিছু নয়।
গুচ্ছ কমিটির কাছে করা প্রশ্নের জবাব ও উত্তর
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের নিউজে বলা হয়েছে, গুচ্ছ কমিটি তারা বলেছে ‘‘প্রথম ফলাফল প্রকাশ করলেও টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে ফলাফল সরিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ এবং পরে ফলাফল প্রকাশ করে। তাছাড়া শিক্ষার্থীর ফলাফল গড়মিল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে সব আলোচনা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। কারণ কম্পিউটারের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি হয়েছে ভুল হওয়ার প্রশ্নই আসেনা’’
পড়ুন: কিউআর কোডে ছেলে, পরীক্ষা দিতে এলেন মেয়ে
আমার প্রশ্ন হলো কম্পিউটারে যদি ফলাফল তৈরি করে থাকে তাহলে ফলাফলে ভুল কেনো আসলো? প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর গড়মিল কেনো হলো? যদি কম্পিউটারে ফলাফল তৈরি হয়েই থাকে তাহলে দ্বিতীয়বার প্রকাশিত ফলাফলে কেনো এতো ব্যবধান?
তারা বলেছে ওএমআর শীতে শিক্ষার্থীরা ভুল করছে তাই তাদের ফলাফলে ভুল আসছে। আমার কথা হলো ওএমআর শিট কি ৮০% শিক্ষার্থীরা ভুল করছে? কম্পিউটার যদি ভুল বুঝে থাকে তবে আউটপুট তো কম্পিউটার যা পেয়েছে তাই দেবে। তবে কেনো যারা পরীক্ষায় কোনো উত্তরই করেনি তাদের মতো ২২ জনের নামের পাশে স্কোর যুক্ত হয়েছে? (সূত্র: ভোরের কাগজ)
যদি ফলাফলে গড়মিল না হয়ে থাকে তবে বাংলায় ২৫টি উত্তর করেছে যার ২২টি উত্তর সঠিক, তাহলে সে ৩ নাম্বার পায় কি করে? ইংরেজিতে ১৮টি উত্তর করে ১৫টি সঠিক তাহলে সে ১.৫ পায় কিভাবে?
সার্বিক বিশ্লেষণে দেখতে পাই, প্রথম বার ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা বাংলাতে পেয়ে দ্বিতীয় বার ফলাফলে সেটা ইংরেজিতে আসছে এবং ইংরেজিতে যেটা পেয়েছে সেটা বাংলাতে আসছে। আরো যা দেখতে পাই যা ভুল উত্তর করেছে সেটা সঠিক উত্তর হয়ে এসেছে এবং সঠিক উত্তর গুলো ভুল এসেছে।
আমি বিনীতভাবে গুচ্ছ কমিটিকে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের যথাযথ ফলাফল প্রকাশ করুন। যে যত স্কোর পাওয়ার যোগ্য তাকে সেই প্রাপ্ত স্কোর দিন। টেকনিক্যাল ত্রুটি আর আপনাদের ভুল আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত না। একের পর এক ভুল করতে করতে আপনাদের এমন একটি অবস্থা হয়েছে যে, ভুলে ভরা গুচ্ছ কমিটি প্রমাণ করল তারা ব্যর্থ। আপনাদের ব্যর্থতা ছাড়া ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় সফলতার লেশমাত্র আভাস নেই। যদি যথাযথ ফলাফল দিতে ব্যর্থতা প্রকাশ করেন তবে আবার পরীক্ষা নিন। যদি তাও না পারেন ভেঙ্গে চুরমার করে দিন এই গুচ্ছ পদ্ধতি।
পরিশেষে বলবো শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু সমাধান চায়, তারা তাদের প্রাপ্য স্কোর চায়। পরীক্ষা না দিয়ে প্রথম হতে চায় না। অতি দ্রুত যদি আপনারা পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।