ক্রান্তিকালেও ঈদোৎসব হোক নির্মল, নির্ঝঞ্ঝাট ও আনন্দময়

ক্রান্তিকালেও ঈদোৎসব হোক নির্মল, নির্ঝঞ্ঝাট ও আনন্দময়
ক্রান্তিকালেও ঈদোৎসব হোক নির্মল, নির্ঝঞ্ঝাট ও আনন্দময়  © টিডিসি ফটো

বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মধ্যে আমরা তিনটি বড় ধর্মীয় উৎসব পালন করে আরেকটি উৎসব পালনের দ্বারপ্রান্তে এসেছি। গত মার্চ ২০২০ খ্রি. হতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে সংক্রমণের উর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ ভীতিকর পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু, আমাদের মাঝে কোভিডভীতি অনেকটা কমে গেছে।

এ ভীতিময় দুর্যোগের-দুর্ভোগের মধ্যেও আমাদের উৎসব পালন করা থেমে থাকবে না। প্রতিটি ধর্মীয় উৎসবেই আমরা নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে যাই। বিশেষকরে, ঈদ আসলেই ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট এমনকি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর টার্মিনালে। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার কারণে লঞ্চডুবি, ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত, বাস দুর্ঘটনা, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রতিবছর ঈদের সময়ে সহস্রাধিক মূল্যবান জীবন হারিয়ে যায়। এতে শুধু পরিবারের ক্ষতি নয় বরং অনেক সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটে। ফলশ্রুতিতে নষ্ট হয় দেশের মানব সম্পদ। বাধাগ্রস্ত হয় জাতীয় অর্থনীতি ও সমৃদ্ধি।

ঈদকালীন সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়ে যায় কোনো পরিবারের অন্ধের যষ্ঠি, নববধুর পরম প্রিয়জন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। অত্যন্ত কষ্টের বা পরিতাপের এ বিষয় সবার কাছেই অনাকাঙ্ক্ষিত।

ধর্মীয় উৎসবের ক্ষণ আসলেই আমরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি প্রিয়জনদের নিয়ে তা উপভোগ করার জন্য। এটা স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশিত। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বা পরিবার শহরে থাকলে আমরা গ্রামের বাড়িতে যেতে কোনোকিছুরই কার্পণ্য করি না। যত কষ্টই হোক; যত টাকা বা সময়ই লাগুক ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যাওয়া চাইই চাই। এটা নিঃসন্দেহে বাঙালি মুসলমানদের প্রত্যাশিত অনুভূতির ও আবেগের বিষয়।

ঈদ আসলেই আমরা লক্ষ্য করি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে, স্পিডবোটে করে শেকড়ের টানে ধাবিত হই। বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, লঞ্চে-স্পিডবোটে-ফেরিতে গাদাগাদি করে আমরা বাড়ির পানে নয় মৃত্যুর পানে ধাবিত হই। অধিকাংশ গণপরিবহন অধিক মুনাফার আশায় ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌছানোর লক্ষে আমাদেরকে মৃত্যুপানে ধাবিত করে। অনেকক্ষেত্রে মৃত্যুর পানে ধাবিত না হলেও পঙ্গুত্বকে বরণ করে নেই। এটাও দীর্ঘমেয়াদী যন্ত্রণার অধিক্ষেত্র।

প্রতি ঈদে অনেক ক্ষেত্রেই ঘটে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা। হারিয়ে যায় অনেক মূল্যবান জীবন। উৎসবের আনন্দ রূপ নেয় আহাজারি-কষ্ট-বিষাদ-বিলাপে। পরিবারে নেমে আসে ঘোর অমানিশা! এমনটা নিশ্চয়ই অপ্রত্যাশিত! জীবনকে তুচ্ছ করে, সময়কে পাল্লা দিয়ে অতিমাত্রায় ঝুঁকি নিয়ে আমরা নীড়ে ফেরার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বরং, সুশৃঙ্খল পথযাত্রাই উৎসবের নির্মল-নির্ঝঞ্ঝাট আনন্দ উপভোগের প্রধান নিয়ামক।

সাম্প্রতিককালে যুক্ত হওয়া মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণ আমাদের নির্ঝঞ্ঝাট ঈদোৎসব পালনের পথে আরেকটি অন্তরায় হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। গাদাগাদি করে শেকড়ের টানে ছুটে চলায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে বর্তমানে কোভিড-১৯ এর আঘাত বাংলাদেশে যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক প্রবল। কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু ও প্রায় ১০০০০ এর অধিক কোভিড-১৯ সংক্রমিত হচ্ছে। হাসপাতালে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও আমরা আশানুরূপ সচেতন হচ্ছি না। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে কার্পণ্য করছি যা অনাকাঙ্ক্ষিত। আসন্ন ঈদ-উল-আযহার পরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা অনেক বৃদ্ধির সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।

সুতরাং, এখনই সময়! যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করুন। ঝুঁকিমুক্ত ঈদযাত্রা করুন। ঈদের নির্মল, নির্ঝঞ্ঝাট ও সুরক্ষাময় আনন্দ উপভোগ করুন।    - ঈদ মোবারাক -

লেখক: সহকারী পুলিশ কমিশনার
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ


সর্বশেষ সংবাদ