আফগানিস্তানের যুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ

মো. নিজাম উদ্দিন
মো. নিজাম উদ্দিন  © ফাইল ছবি

এক.
বাগরাম বিমানঘাঁটি। এ যেন আফগানিস্তানের ভেতর এক মিনি আমেরিকা! কী নেই এখানে? রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, বিনোদন, কারাগার- সব আছে এখানে। প্রায় চল্লিশ হাজার মার্কিন ও নেটো সেনাসদস্যের এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল।কাবুলের পঞ্চাশ কি.লি. উত্তরে এর অবস্থান। আছে নিজস্ব এয়ারডিফেন্স সিস্টেম।

সম্প্রতি রাতের আঁধারে বিদ্যুৎ বন্ধ করে, আফগান সরকারকে না জানিয়েই বিশ বছরের (২০০১-২০২১) এক অসমাপ্ত যুদ্ধের পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে আমেরিকা ও নেটো বাহিনী আফগানিস্তানের বাঘরাম বিমানঘাঁটি ছেড়ে চলে গেছে। আফগানিস্তানে আমেরিকা বিশ বছরের যুদ্ধে না পারলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে, না পারলো শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে, না পারলো তালিবান উৎখাত করতে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর স্পষ্টভাবেই ঘোষণা দিয়ে ছিলেন- তিনি আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের সমাপ্তি ঘটাবেন এবং সেটা ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই। আমেরিকায় টুইনটাওয়ারে হামলার বিশতম বার্ষিকীতে পৃথিবী জানবে আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু বাস্তবে এর আগেই আমেরিকা নিজেকে আফগানিস্তানে যুদ্ধের ময়দান থেকে ঘুটিয়ে নিল!

বাগরাম বিমানঘাঁটির পতন মানেই আফগানিস্তানে আমেরিকার পতন। কখন মার্কিন সেনারা বাগরাম বিমানঘাঁটি ছেড়েছে আফগান সেনারাও বুঝতে পারেননি। মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর ছেড়ে যাওয়া বাগরাম বিমানঘাটিটি এখন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির সরকারের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

১৯৫০-এর দশকে এই বিমানঘাঁটিটি আমেরিকাই আফগানিস্তানকে নির্মাণ করতে সহযোগিতা করে। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদার বাহিনীও এই বিমানঘাঁটিটি ব্যবহার করে আফগান মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।

যেভাবে তালেবান সশস্ত্র যুদ্ধারা একের পর এক আফগানিস্তানের নতুন নতুন এলাকা সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছে, সেই পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত বাগরাম বিমানঘাঁটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় কিনা, নাকি তালেবান দখল করে নেয় তাই দেখার বিষয়।

আফগানিস্তান এমন একটি রাষ্ট্র, যাকে মানুষ যুদ্ধ ক্ষেত্র হিসাবেই জেনে আসছে। আফগানিস্তানকে বলা হয় ‘সাম্রাজ্যবাদের গুরুস্থান’।আফগানদের কাছে অতীতেও পরাজিত হয়েছে ব্রিটিশ, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দখলদার বাহিনী সাময়িক জায়গা করে নিতে করলেও, আফগানিস্তানে সাম্রাজ্যবাদের স্থায়ী ঠিকানা কখনোই হয়নি। এবারও না।আফগানিস্তানে যুদ্ধ যেন জীবনেরই অংশ হয়ে গেছে। শান্তি যেখানে মরিচিকা!

দুই.
সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদার বাহিনী আফগানিস্তানের মাটিতে পা রাখে ১৯৭৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর। সোভিয়েত আফগান যুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনী পরাজিত হলে ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী তারা আফগানিস্তান থেকে নিজেদের ঘুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

আজকে মার্কিন বাহিনীর চলে যাওয়ায় দেশে যে আভ্যন্তরিণ সংকট দেখা যাচ্ছে সেদিনও একই অবস্থা ছিল। দশ বছরের সেই সোভিয়েত আফগান যুদ্ধে কয়েক লাখ মানুষ জীবন দেয়। যারা সশস্ত্র ছিল না। ছিল সাধারণ নাগরিক।

আফগানিস্তান এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে ধর্ম মানুষের জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট, মানুষ অত্যন্ত রক্ষণশীল। তারা মার্কিন গণতন্ত্রও চায়না, রাশিয়ার সমাজতন্ত্র চায়নি, চায় আফগান সমাজের মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি রাজনৈতিক ব্যবস্হা যেখানে তাদের চিন্তা, ভাবনা, সংস্কৃতির প্রতি ফলন থাকবে। তাদের মতো করে তাদের সমাজের মূল্যবোধ গুলো ধারণ করে তারা এগুলোতে চায় যা কখনোই সাম্রাজ্যেবাদী শক্তিগুলো মানতে চায়না।

সমস্যাটা এখানেই। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান মুজাহিদদের সার্বিক সহযোগিতা করেছে আমেরিকা, সৌদি আরব, পাকিস্তান এবং তুরস্ক সহ অনেকেই। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানে সোভিয়েত সমাজতন্ত্র ঠেকানো। কিন্তু আফগান মুজাহিদরা সোভিয়েত সমাজতন্ত্র ঠেকিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যেবাদের গণতন্ত্রকে স্বাগত জানাতে চায়নি। তারা মার্কিন, সোভিয়েত তন্ত্রকে না বলে দিয়েছিল। সোভিয়েত আফগান যুদ্ধে আফগান মুজাহিদদের একটা অংশই পরে তালেবান হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৯৬ সালে এক গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে। তাদের কট্টরপন্থী শাসন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আতংকিত করে তুলে। ওসামা বিন লাদেন এবং তার দল আল কায়দাকে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দিলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দুঃচিন্তা আরো বেড়ে যায়।

১৯৯৮ সালে কেনিয়া এবং তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে হামলায় ২২৪ জন নিহত হলে আল কায়দাকে আমেরিকা অভিযুক্ত করে। সর্বশেষ ২০০১ সালের এগারই সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইনটাওয়ারে বিমান হামলায় প্রায় তিন হাজার আমেরিকান নাগরিক নিহত হলে আল কায়দা নির্মুলের চূড়ান্ত রোডম্যাপ নিয়ে মাঠে নামে আমেরিকা। ২০০১ সালের অক্টোবরে আমেরিকা ও নেটো বাহিনী এবং আফগানিস্তানের মার্কিন সমর্থনপুষ্ট নর্দান এলায়েন্স তালেবানকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে আফগানিস্তানে কখনো হামিদ খারজাই কখনো আশরাফ গানির মতো মার্কিন মদদপুষ্ট সরকার কায়েম করে।

কিন্তু তালেবান শুরু থেকেই মার্কিন মদদ পুষ্ট আফগান সরকার এবং নেটো বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছে। যে লড়াইয়ে একটা পর্যায়ে পাকিস্তানও নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। তালেবানের সাথে আমেরিকার এক চুক্তি মোতাবেক সেই যুদ্ধেরই আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হতে যাচ্ছে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১।

এমনকি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমেরিকা আফগানিস্তান ছাড়ার চূড়ান্ত মিশন সম্পন্ন করেছে। চুক্তি মোতাবেক আমেরিকা আল কায়দা ও আইএস যাতে আফগানিস্তানে আশ্রয় না পায় তালেবানদের কাছে যুদ্ধ পরবর্তী আফগানিস্তানে আমেরিকা সেই নিশ্চিততা চায়। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আফগানিস্তানে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর উত্থানে আমেরিকা তার দায় এড়াতে পারেনা কোনো ভাবেই।

তিন.
সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (যাকে তার বিরোধীরা ব্যঙ্গকরে তালেবান খান নামে ডাকে) আফগান-মার্কিন যুদ্ধে পাকিস্তানের ভবিষ্যত ভূমিকা নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। যেখানে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন- পাকিস্তান আর কখনোই নিজের ভূমি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আমেরিকার ঘাটি হিসাবে ব্যবহার করতে দিবে না। অতীতে আফগানদের মাত্র একটা অংশকে সমর্থন করা যে ঠিক হয়নি তাও উল্লেখ করেছেন।

লিখেছেন আমেরিকা ও পাকিস্তানের একটা জায়গায় লক্ষ্য এক। আমেরিকা যদি আফগানিস্তানে শান্তি চায়, তা পাকিস্তানেরও লক্ষ্য। কিন্তু পাকিস্তান আর কখনোই তার ভূমিকে সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য হতে দেবেনা এবং মার্কিন ঘাটি হতেও দেবেনা। প্রায় ত্রিশ লাখ আফগান শরনার্থীর বোঝা বইছে পাকিস্তান। সত্তর হাজার পাকিস্তানি নাগরিক জীবনও দিয়েছে আফগান মার্কিন যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়ে। বিশ বিলিয়ন ডলার সাহায্য পেলেও আফগান শরনার্থীসহ অন্যান্য খাতে পাকিস্তানের ব্যয় হয়েছে একশো পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার।

আফগান যুদ্ধের পরিনতি হিসাবে পাশ্ববর্তী দেশ হওয়ায় পাকিস্তানকে আফগানিস্তান থেকে সীমান্ত পেড়িয়ে আসা শরনার্থী এবং সন্ত্রাস দুটোই সহ্য করতে হচ্ছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানে রাজনৈতিক সমাধান চায়, সামরিক নয়।আমেরিকা যেহেতু বিশ বছর আফগানিস্তানের ভেতরে থেকে তালেবানকে হঠাতে পারেনি তাহলে বাইরে পাকিস্তানে সামরিক ঘাটি করে কীভাবে তালেবান হঠাবে?

ইমরান খান এমন এক সময়ে আমেরিকাকে মোটামুটি একটা কড়া বার্তা দিলেন যখন জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করে চীনের দিকে নজর দেবেন বলে কথা বলছেন। আফগানিস্তানের তালেবানর সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক খুব খারাপ নয়।মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে যদি আবার তালেবানরা ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে যায় তাহলে যুদ্ধ পরবর্তী আফগানিস্তানে পাকিস্তান এবং চীনের প্রভাব যে বাড়বে এটা স্পষ্ট।

ইমরান খানের এই বক্তব্যের পেছনে চীনের সমর্থন থাকতে পারার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায়না। তালেবান হঠানোর যুদ্ধ শেষে যদি তালেবানই আবার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়,আফগানিস্তানে যদি পাকিস্তানের কারণে চীনের একটা প্রভাব তৈরি হয়,তাহলে আমেরিকা এই যুদ্ধে কী পেল? আমেরিকার ২৪৪২ জন সেনার লাশ, বিশ হাজার সামরিক বেসামরিক লোকের আহত হওয়া, এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে কী পেল আমেরিকা?

চার.
বলা হচ্ছে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও নেটো বাহিনী প্রত্যাহার হলেও এক হাজার নেটো সদস্য কাবুল বিমানবন্দর পাহারা দেওয়ার জন্য থাকবে। খুব সহজ হিসাব হচ্ছে আফগানিস্তান ভূবেষ্টিত হওয়ায় কাবুল বিমানবন্দরই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ এক মাধ্যম। তাই দখলদার বাহিনী চলে গেলেও মূল বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায় আমেরিকা।

মজার বিষয় হচ্ছে কাবুল বিমানবন্দর পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে নেটো ভুক্ত একমাত্র মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্ক।তুরস্ক কেন আমেরিকার প্রস্তাবে কাবুল বিমানবন্দর পাহারা দিতে রাজী হলো? যে সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে তালেবান। তালেবান বলছে এতে তুরস্কের সৈনিকরা তালেবানের গোলার টার্গেটে পরিনতি হতে পারে। নেটোর হয়ে কাবুল বিমানবন্দর পাহারা দেওয়ার বিনিময়ে তুরস্ক যে আমেরিকা ও নেটোর কাছ থেকে কৌশলে বড় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করবে সেটা বলাই যায়।

আমেরিকা বলছে নেটোর এক হাজার সৈনিক আফগানিস্তানে থেকে যাবে কাবুল বিমানবন্দর ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু তালেবান মুখপাত্র- আমরা বিদেশি সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে তবে কূটনীতিবিদ-এনজিও কর্মী এবং এনজিওর বিরুদ্ধে নই। তালেবান অলরেডি আফগানিস্তানের পয়ত্রিশটি প্রদেশের চারশো একত্রিশটি জেলার মধ্যে প্রায় দুইশোর অধিক জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। সরকারি বাহিনী অনেক জায়গায় তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করছে।

প্রায় দেড় হাজারের অধিক আফগান সরকারি সেনা তালেবানের সাথে লড়াইয়ে ঠিকতে না পেরে পার্শ্ববর্তী তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তানে পালিয়ে গেছে। যে তালেবানের সাথে আমেরিকা বিশ বছর লড়াই করলো শেষ পর্যন্ত সেই তালেবানের সাথেই আমেরিকা আফগান যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য চুক্তি করলো।

তালেবানের মতো একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে আমেরিকার মতো একটা রাষ্ট্রের এক ধরনের আত্মসমর্পণ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমেরিকার নাজুক অবস্থানেরই ইঙ্গিত বহন করে।

পাঁচ.
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য যখন রাতের আঁধারে বিমানঘাঁটি খালি করে চলে যাচ্ছে এমনই এক সময়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন আফগান-মার্কিন এবং ইরাক-মার্কিন যুদ্ধ ও আগ্রাসনের অন্যতম নায়ক সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড। করোনাকালীন সময়েও পরিবার বেষ্টিত হয়েই তিনি মারা গেলেন কিন্তু নিরীহ নিরপরাধ লাখ লাখ মানুষের জীবন তার ভুল নীতির জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে।স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে কয়েককোটি মানুষের।

যে অভিযোগে আফগানিস্তান এবং ইরাক আক্রমণের পরিকল্পনা ডোনাল্ড রামসফেল্ড করেছিলেন তিনি নিজেই দেখে গেলেন সেই তালেবানকেও পরাজিত করতে পারা যায়নি এবং ইরাকেও পারমাণবিক মারণাস্ত্র পাওয়া গেল না! কিন্তু এই দুটি দেশ,কয়েক লাখ মানুষ, কয়েক কোটি স্বপ্ন খুন ও ধ্বংস করার দায়িত্ব কে নিবে?

আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর প্রায় সত্তর হাজার সদস্য নিহত হয়েছে আহতের সংখ্যা অনেক বেশি। আফগানিস্তানে কেবল সাম্রাজ্যেবাদ আর দখলদারদের নাম পরিবর্তন হয় কিন্তু সাধারণ আফগানদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়না। তালিবানের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও নেটো বাহিনী বিশ বছরের এক অসম লড়াইয়েও জিততে পারেনি। তালেবানর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সেই তালেবানের সাথেই দোহায় চুক্তির নামে আত্মসমর্পণ করতে হলো! তাহলে কী পেল এই যুদ্ধে আমেরিকা?

তালেবান যেভাবে আফগানিস্তানে একের পর এক এলাকা দখল করছে, তাতে খুব দ্রুতই হয়ত তারা রাজধানী কাবুলের দিকে চোখ রাখবে,ক্ষমতা থেকে মার্কিন পুতুল সরকার আশরাফ গানিকে হঠাবে!
রাজনৈতিক সংকট সমাধানের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা আলোচনার টেবিল, যুদ্ধের ময়দান নয়।আফগানিস্তানে আজকের যে সন্ত্রাস, বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী, গৃহযুদ্ধের আশংকা করা হচ্ছে তার মূল হোতা আমেরিকা। বিশ বছরের অসম এক যুদ্ধে হেরে চীনের সাথে লড়বে?

সুতরাং আফগানিস্তানে আমেরিকার হারা মানে ভারতের সুসংবাদ নয়। এখানে কোনো কারণে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়লে চীনের প্রভাব বাড়বেই। রাশিয়া একসময় তালেবানদের মস্কোতে ডেকে নিয়েছিল সংলাপের জন্য যা আমেরিকা ভালো ভাবে নেয়নি। ইরানও আফগান বিষয় নজর রাখছে।

সবচেয়ে ভালো ফয়সালা হবে আফগানদের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। আফগান সমাজের রাজনৈতিক শক্তি গুলোর ঐক্যই একমাত্র আফগানিস্তান নামক যুদ্ধের বাংকারে শান্তি আনতে পারে। মার্কিনও নেটো বাহিনীর চলে যাওয়াটাই যথেষ্ট নয়, মার্কিন তাবেদার আশরাফ গানির পতনের পর রাজনৈতিক গোষ্ঠী গুলোর একটি অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারই একমাত্র আফগানিস্তানের ভবিষ্যত নির্মাণ করতে পারে। সে পর্যন্ত কি এবার যেতে পারবে আফগানিস্তান?

বিট্রিশ, সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে আমেরিকাও বিদায় নিতে বাধ্য হচ্ছে আফগানিস্তান থেকে। কারণ এই মাটি ও মানুষ দখলদারিত্ব এবং সাম্রাজ্যবাদকে কখনোই সহ্য করেনি। বিশ্বের বড় বড় মোড়লদের যারা পরাজিত করতে পারে তারা কি নিজের দেশ নিজেরা চালাতে অক্ষম? অবশ্যই না।যুদ্ধ পরবর্তী আফগানিস্তানের ভবিষ্যত কারো জানা নেই, কী অপেক্ষা করছে। নতুন কোনো দখলদার,গৃহযুদ্ধ নাকি আফগান জনতার কাঙ্ক্ষিত মুক্তি?

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক


সর্বশেষ সংবাদ