করোনা পজিটিভ হলে কোন ওষুধ খাবো?

  © প্রতীকী ছবি ও লেখক

ফেসবুকে দেখতে পাচ্ছি মৃদু করোনা রোগীর জন্য ১০-১৫ টা ওষুধের প্রেসক্রিপশন। এই প্রেসক্রিপশন গুলোর উপর নির্ভর করা কেন বিপদজনক তা সহজ করে বোঝাতে আজকে লিখছি।

মৃদু করোনা রোগীর জন্য একমাত্র ওষুধ হল প্যারাসিটামল। প্যারাসিটামল যে করোনা সারাবে এমন নয়- শুধু করোনার উপসর্গগুলো উপশম করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অন্য কোন ওষুধ মৃদু করোনা রোগীর সুস্থ হতে সাহায্য করে এমন প্রমাণ নেই।

বুডেসোনাইড নামে একটা ইনহেলার সাহায্য করতে পারে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই গবেষণাটির প্রিপ্রিন্ট গতকাল প্রকাশিত হয়েছে (১)। আজ থেকে যুক্তরাজ্যে ক্ষেত্রভেদে এই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে (২)। তবে এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে এই ইনহেলার ব্যবহার করবেন না।

অপ্রমাণিত গাদা গাদা ওষুধ সেবনের পরামর্শ যারা দেন, তাদের বলতে শুনেছি যে করোনা একটা জরুরী অবস্থার সৃষ্টি করেছে। গবেষণার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করার মত সময় নেই। যেই ওষুধগুলো করোনা রোগীর উপকারে আসতে পারে বলে মনে হয়, সে ওষুধগুলো খাওয়া শুরু করা উচিত। যদি কাজে লেগে যায়।

শুনতে ভালো শোনালেও এই যুক্তিগুলো বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই মহামারিতেই এমন উদাহরণ আমরা দেখেছি। বিষয়টা সহজ করে বোঝাই।

এক।
গবেষণা থেকে আমরা জেনেছি যে ডেক্সামেথাসোন গুরুতর করোনা রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে আনে (৩)। তবে মৃদু করোনা রোগীদের এই ওষুধ দিলে রোগীর করোনা গুরুতর হওয়ার ও মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়তে পারে (৪)।

এই গবেষণার ফলাফল আসার আগে ওষুধটি মৃদু করোনা রোগীদের জন্যেও অনেকে প্রেসক্রাইব করেছেন। হয়তো সেখান থেকে কিছু রোগীর ক্ষতিও হয়েছে।

দুই।
আরেকটা উদাহরণ। অনেক করোনা রোগীকে ট্রায়ালের বাইরে কনভালেসেন্ট প্লাজমা দেয়া হয়েছে। আমরা রিকভারি ট্রায়াল থেকে জেনেছি যে প্লাজমা থেরাপি করোনার কারণে মৃত্যু ঠেকাতে অকার্যকর (৫)। নেচারে একটা গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে যেখানে ধারণা করা হচ্ছে যে প্লাজমা থেরাপি হয়তো করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টি হতে সাহায্য করেছে (৬)।

এছাড়াও অনেকগুলো ওষুধ যত্রতত্র ব্যাবহার করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে গবেষণায় অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে যেমন অ্যাজিথ্রোমাইসিন (৭), ডক্সিসাইক্লিন (৮), হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন (৯), লোপিনাভির-রিটোনাভির (১০)। এই ওষুধগুলো কিনতে রোগীর টাকা খরচ হয় এবং এই প্রত্যেকটা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

আশা করি, অপ্রমাণিত ওষুধ বা চিকিৎসাগুলো কেন বিপদজনক হতে পারে তা এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে। এখন অনলাইনে পাওয়া প্রেসক্রিপশন দেখে মৃদু করোনার জন্য ১০-১৫ টা ওষুধ খাবেন কিনা সেটা আপনার সিদ্ধান্ত।

উল্লেখ্য, এই লেখা পড়ে ভাববেন না যে করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ওষুধ এখনও পাওয়া যায় নি। আমি এখানে বলছি শুধু মৃদু করোনার কথা। গুরুতর করোনা রোগীদের জন্য কার্যকরী কয়েকটা ওষুধ আমরা গবেষণা থেকে পেয়েছি। রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে ডাক্তার এই চিকিৎসা প্রদান করেন। [ফেসবুকে থেকে সংগৃহীত]

লেখক:  শিক্ষার্থী, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) জুনিয়র চিকিৎসক 


সর্বশেষ সংবাদ