আমাদের সন্তানরা মানুষ হোক

লেখক কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
লেখক কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

ধর্ষক সন্তানটিরও জন্মের সময় তার বাবা, মা আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল এই ভেবে যে তাদের ছেলে হয়েছে বলে। মিষ্টিমুখও করা হয়েছিল হয়তো সবাইকে। কে জানতো সেই ছেলেটিই একদিন কুলাংগার হবে? জানলে শিশুকালেই হয়তো গলাটিপে মেরে ফেলতো তাকে! এখন এসে অন্তত ধর্ষকের মা, বাবা, অপরাধীর বাবা, মা- কথাটা শুনতে হতোনা।

পক্ষান্তরে ছেলে যখন বড় হয়ে সুনাম কুড়ায় তখন ভালো লাগে তার বাবা, মায়ের সকলের। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বলছে, এ পথ যে বড়ই কঠিন এবং কাঁটা বিছানো।

আমরা ছেলে সন্তান নিয়ে বেশি গর্ব করি, অহংকার করি। অহংকার করি মেয়ে সন্তান নিয়েও। অথচ ভুলে যাই এই সন্তানাদি আমাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ করুণা। তিনি যখন যেটা যেভাবে চাবেন তখন সেটা সেভাবেই হবে। এর ব্যত্যয় ঘটানোর কোন ক্ষমতা কারো নাই। সেজন্য অহংকার নয় সন্তানের কল্যাণের জন্য, ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার জন্য আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে হবে। পাশাপাশি সন্তানকে সবার আগে সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করাও বাবা, মায়ের কর্তব্য।

এ যুগে এসেও আমরা আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে পার্থক্য করি। জাহেলি যুগের ন্যায় কন্যাসন্তানকে আমরা অনেকে মনক্ষুন্নের কারণ মনে করছি। আবার ছেলে নিয়ে অহংকার করতে গিয়ে অনেকের পা মাটিতেই পড়ছেনা। সে হিসেবে মেয়ে সন্তানরা সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকছে। যেটা আদৌ কাম্য নয়। মনে রাখতে হবে সন্তান নিয়ে অহংকার করার কোনই সুযোগ ইসলামে নেই সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে। বরং এটা অপরাধ হিসেবে গণ্য।

তাছাড়া, সন্তানের বেড়ে উঠা, গড়ে উঠায় মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছা বা হুকুম কী সেটা জানা বা বুঝার ক্ষমতা কোন মানুষের নেই। কেবল সন্তানের জন্য দোয়া করতে হবে যেন সে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে। 

এখন যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেটা আগামীতে কী রূপ ধারণ করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। সন্তানরা ক্রমশ: বাবা, মায়ের অবাধ্য হচ্ছে। সমাজে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরী করছে। মানছেনা কোন শাসন, বারণ। নেশা, উশৃংখলতা স্বাভাবিকতা পাচ্ছে। বাধা দিলে গালমন্দ, হুমকি-ধামকিসহ নানা ধরণের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এই সন্তানরা কি বাবা-মায়ের মুখে ভাত তুলে দেবে মনে করছেন? বড় হয়ে এরাই তো বাবা, মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসবে।

এসব সত্য না হোক। কিন্তু এগুলো নিয়ে ভাবতে গেলে অন্ধকার ঘিরে ধরে। হতাশ হই। হই আতংকিত।

নিরাপত্তা নেই কোথাও। নিজের সন্তান ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে সদা শংকিত হই। নিরাপদ নয় একা কিংবা একের অধিক চলাফেরায়ও। কোন্ সময় হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় এ আতংক সবসময়। যারা এসব অপকর্ম করছে তারাও তো কোন না কোন বাবা, মায়ের সন্তান। এই পিশাচগুলোর বাবা, মা কীভাবে নিজেদেরকে পরিচয় দেবে ভাবাও যায়না! মৃত্যু কামনা করা ছাড়া মনে হয় তাদের আর কোন উপায়ও নেই।

আমাদের ছেলেমেয়েরা মানুষ হোক। সৎ জীবনযাপন করুক। নৈতিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুক। মুখ উজ্জ্বল করুক সমাজ ও দেশের। আদর্শ সন্তান সবার গর্ব। কোন অবাধ্য সন্তানকে কেউ পছন্দ করেনা। কিন্তু বিপথে যাওয়া এই তরুণ,তরুণী এবং যুবকটিকে সুপথে ফেরাতে উদ্যোগ নিতে হবে। নয়তো এরাই সমাজকে বাসঅযোগ্য করে তুলবে। নষ্ট হবে দেশ। কোন সন্তানই যেন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত না হয় সেজন্য তাদেরকে ছোটবেলা থেকেই সুশিক্ষা দিতে হবে। সব ধরণের অনৈতিকতা, অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতিকে প্রচণ্ড ঘৃণা করার মানসিকতা তৈরী করতে হবে। সৎ কাজ ও সৎভাবে জীবনযাপনের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।

জানিনা কার ছেলেমেয়ে কীভাবে গড়ে উঠে। ভবিষ্যতেই বা কী হবে সেটা বলা তো আরো কঠিন। এরপরও নিজেদের সন্তান যেন সুন্দর আদর্শ ও চরিত্রবান হিসেবে গড়ে উঠে সেজন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন বড় হয়ে বাবা-মা, পরিবার ও সমাজের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে সে কামনাই করছি। আল্লাহ আমাদের সন্তানদের সুস্থ রাখুন, ভালো রাখুন।


লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।


সর্বশেষ সংবাদ