করোনায় সেবাদান: যোদ্ধাদের হাজার সালাম
- কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
- প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৩:০৪ PM , আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৩:২৯ PM
বৈশ্বিক মহামারী করোনায় বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। এখনো থেমে নেই তার তাণ্ডব। প্রতিদিনই বিশ্বের নানা প্রান্তে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বেড়ে চলেছে। চীনে উৎপত্তি হওয়া এই ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, স্পেন, ইতালী, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। মহাসংকটে পৃথিবীর সব মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে।
বিশ্ব বিপর্যয়ের অংশ এখন বাংলাদেশও। নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্ক যেমন বাড়ছে তেমনি সচেতনতা বাড়াতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা। মানবিকতায় এগিয়ে এসেছেন দেশের তরুণরা।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাস নিয়ে নানা কাজের অংশ হিসেবে তরুণদের পাশাপাশি অনেকে এগিয়ে এসেছেন। দেশের ক্রান্তিকালে সবারই দাঁড়াতে হয় হাতে হাত ধরে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। প্রস্তুতি নিতে হবে সংকট সমাধানের। মানবতা ডাকছে প্রতিনিয়ত। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে হবে স্ব স্ব অবস্থান থেকে।
মহাদুর্যোগের এই সময়টাতে মানুষের প্রাণ রক্ষাসহ সেবাদানে এগিয়ে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাসপাতাল, সংস্থা, সংগঠন। এগিয়ে এসেছেন অনেক চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষও। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব সংগঠন এবং মানুষ আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে তাদের অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে। আমাদের দেশেও এ ধরণের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থাসহ নানা আন্তর্জাতিক সংগঠনের পাশাপাশি দেশবিদেশের সরকার এবং বহুলোক এগিয়ে এসেছেন এই দুর্যোগে। যা ইতিপূর্বে কোনসময় দেখা যায়নি। আমাদের দেশেও এগিয়ে এসেছেন অনেকে।
হাসপাতাল, ডাক্তার, নার্স, নানা রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলে চেষ্টা করছেন এই মহামারী থেকে উত্তরণের। অবশ্য করোনা সংক্রমনের শুরুর দিকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বেশকিছু অঞ্চলে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসক সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে। যে কারণে মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরবর্তীতে তারাও এগিয়ে আসে। দু'একটি হাসপাতাল ও কিছু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।
সেবা দেওয়া নয় শুধু যখন কেউ (আত্মীয়,স্বজনসহ) কাছেই আসেনি তখনও করোনায় মৃত লোকজনকে দাফন-কাফনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এগুলোর মধ্যে আল মানাহিল ফাউন্ডেশন, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ ও আগে থেকেই দেশে বেওয়ারিশ লাশ দাফনে নিয়োজিত আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের নাম উল্লেখযোগ্য।
সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রের পাশাপাশি চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় অস্থায়ীভাবে বিশেষায়িত ফিল্ড হাসপাতালও গড়ে উঠে। দেশের বিভিন্ন জায়গায়ও করোনা হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এগিয়ে আসেন বেশকিছু সামর্থ্যবান মানুষ।
নানা সীমাবদ্ধতা ও মতভিন্নতা থাকলেও করোনাকালে সরকার, সামাজিক সংস্থা, রাজনৈতিক দল, মিডিয়া, ব্যক্তিসহ সকলের যথাসাধ্য ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মোটকথা, যে যেভাবে পেরেছে এই বিপদে সবাই এগিয়ে এসেছে। নতুন ভাইরাসের সংক্রমনের ধরণের কারণে প্রস্তুতিতেও ঘাটতি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণে টিকা/ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলেও করোনা সংকট কাটিয়ে উঠতে মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস জেগেছে। বেড়েছে সাহস ও প্রতিকূলতা জয়ের মানসিকতা।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা তাদের জন্য যারা করোনা মহামারীতে বিপন্ন মানুষের পাশে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছে। শত ঝুঁকি ও বিপদকে তুচ্ছ করে দিনরাত করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ছুটে চলা এসব যোদ্ধাদের জানাই হাজার সালাম। চিন্তা কীসের, কারো কাছ থেকে কোনকিছু না পেলেও মহান প্রভূ আাপনাদের এই সেবাদানে সন্তুষ্ঠ হবেন ইনশা আল্লাহ। আল্লাহর কাছে আপনাদের কল্যাণ কামনা করছি। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন আপনারা।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।