২০ মিনিটের ইন্টারভিউ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক!

Bangladesh strikes again! সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিল পার্লামেন্ট-এ তোলা হয়েছে। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সংবাদ শুনলেই আমার একটি কথা মনে পরে যায় "Water, water, everywhere, Nor any drop to drink"! অর্থাৎ পানি পানি সর্বত্রই পানি কিন্তু পানের জন্য পানি নাই। তেমনি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা যায় university university everywhere, nor any university to learn! শত শত বিশ্ববিদ্যালয় না বানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশ্ববিদ্যালয় একটি হলেই যে কি ঘটিয়ে ফেলতে পারে সেইটা বোঝার জন্য কি খুব বেশি ঘিলু লাগে?

এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আসলেই বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছিল। সেখানে সত্যেন বোস সেই সময় (১৯২৪ সালে) মাস্টার্সের ছাত্রদের থার্মোডাইনামিক্স এবং ম্যাক্সওয়েলসের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক থিওরি পড়াতেন। যখন তিনি প্ল্যাংকের রেডিয়েশন তত্ব পড়াচ্ছিলেন তখন সেটির derivation তার পছন্দ হচ্ছিল না। তিনি বুঝতে পারেন কোথাও যেন কিছু খটকা আছে। সেই খটকা দূর করতে গিয়ে তিনি কোয়ান্টাম স্টাটিস্টিক্সের জন্ম দেন। বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে পড়ানোর সুবিধা হলো যেইসব বিষয়ে এখন গবেষণা হচ্ছে সেগুলো পড়ানো যায় এবং পড়াতে গিয়ে নতুন আইডিয়া আসে, পুরোনো কাজের সমস্যা ধরা পরে। এইভাবেই বিজ্ঞান এগিয়ে যায়। আমাদের কি এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও আর আছে?

কেবল মাত্র মাস্টার্স পাশ বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে পড়ালেই কি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যায়? আজকেই চীনের একটি প্রায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন পড়ছিলাম। লিখেছে প্রার্থীর অবশ্যই পিএইচডি থাকতে হবে। পোস্ট-ডক্টরাল লেভেলের গবেষণার অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকা highly desirable! তার মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা হলো পিএইচডি। বিজ্ঞাপনে এও লিখেছে যে ওই বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের কম্পিটিটিভ বেতন, বাসা ভাড়া, চাইল্ড এডুকেশন বেনিফিট, এবং শুরু করার জন্য একটি discretionary fund or start-up package! এখানেই শেষ না। তারা আরো বলেছে দরখাস্তকারীকে একটি কভার লেটার দিতে হবে এবং তার সাথে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন দরখাস্ত করছে সেটা ব্যাখ্যা করে একটি স্টেটমেন্ট, একটি পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত, একটি গবেষণা স্টেটমেন্ট, একটি টিচিং স্টেটমেন্ট, আর তিনটি reference letters! আর আমরা কি চাই? পড়ুন নিচে।

আমরা কি চাই? প্রার্থীকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে তার সাথে অনার্স মাস্টার্স পাশের মার্কশিট ও সনদপত্র জমা দিতে হবে। শুধু তাই না এসএসসি ও এইচএসিতে জিপিএ ফলাফলও উল্লেখ থাকতে হবে। সকল সার্টিফিকেট প্রথমশ্রেণীর gazetted officer দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান/পরিষদ থেকে নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। তারপর একটি নির্দিষ্ট দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে নিয়োগ বোর্ডে ২০ মিনিটের ইন্টারভিউ-এর মাধ্যমে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি চাকুরি হয়ে যায়। এমন পদ্ধতি পৃথিবীতে দ্বিতীয় আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় দেখান আমাকে।

নিয়োগ প্রোমোশন বেতন এইসব কোন কিছুই আন্তর্জাতিক মানের হবে না তাহলে কিভাবে আশা করেন বিশ্ব রেঙ্কিং-এ থাকবে? অরে বিশ্ব রেঙ্কিং বাদ দেন দক্ষিণ এশিয়ার রেঙ্কিং করলেওতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তলানিতে থাকবে।

এমনই একটি দেশ যেখানে ১৫০ টিরও অধিক বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু বিশ্ব রেঙ্কিং-এ ১০০০ এর মধ্যে একটিও নেই। আসলে আমাদের ১৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয়? একটু খেয়াল করলেই স্পষ্ট হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবাদে আমাদের জেলা উপজেলার অধিকাংশ কলেজেই এখন অনার্স মাস্টার্স পড়িয়ে লক্ষ লক্ষ ছাত্র ডিগ্রী পাচ্ছে। যেহেতু এইগুলোতে অনার্স মাস্টার্স পড়ায় সেহেতু ইফেক্টিভলি এইগুলোও একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতই। [ফেসবুক থেকে]

আরো পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়— ‘যেখানে আবদার, সেখানেই বাস্তবায়ন’

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ