আধুনিক সমাজ আর সামাজিক অবক্ষয় যেন পরস্পর ব্যস্তানুপাতিক
- এনামুল হক
- প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:৫০ PM , আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:০৩ PM
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের অন্যতম উপাদানও মানুষ। কাজেই সমাজ এবং মানুষের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। সমাজের সংজ্ঞা বা বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন না হলেও যুগে যুগে এর ধরণ পরিবর্তিত হয়েছে। সেই বর্বর বা প্রাচীন সমাজ থেকে কালের বিবর্তনের পরিক্রমায় আজ আমরা আছি সভ্যতার যুগে, যাকে আধুনিক সমাজও বলা যেতে পারে।
আধুনিক শব্দটিকে আরেকটু বিশেষায়িত করে অত্যাধুনিক সমাজও বললে ভুল হবে না। আজ আমরা পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় আনতে সক্ষম হয়েছি। যেটা আধুনিকতার সুফল বলা যেতে পারে। সার্বিকভাবে আমরা আজ উন্নতির চরম শিখরে। যার বিস্তারিত আলোচনা না করলেও সবাই জ্ঞাত। শিক্ষা আর প্রযুক্তির দৌড়ে বিশ্ব আজ অনেক এগিয়ে। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। আমরাও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা কি প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি? নাকি শুধুই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সীমাবদ্ধ? উত্তরটা কারো অজানা থাকার কথা নয়। আমাদের শিক্ষার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছ একটা ভালো চাকরি কিংবা প্রতিষ্ঠিত হওয়া। যেখানে শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল মানবিক উৎকর্ষতা সাধন। যেটা অর্জনে আমরা অনেকাংশেই ব্যর্থ। তবুও আমরা শিক্ষিত জাতি। এ কথা জোর গলায় বলতে পারি। আমাদের শিক্ষার প্রভাবও সমাজে কম নয়। কিন্তু সমাজ আধুনিকায়নের সাথে সাথে যেন সামাজিক অবক্ষয়ও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এখানে অবক্ষয় বলতে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে নির্দেশ করে। যার মধ্যে রয়েছে দেশপ্রেম, সততা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ, কর্তব্য নিষ্ঠা, উদারতা, কল্যাণবোধ প্রভৃতি।
আজ সামাজিক মূল্যবোধের ব্যাপক অবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রতিদিনের সংবাদ মাধ্যমগুলোর নিয়মিত অংশ হয়েছে ধর্ষণ। যেটা বিগত কয়েক দশক থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। যার মধ্যে শিশু ধর্ষণ বিষয়টি খুবই পাষবিক। সংবিধান কিংবা আইন কোনোটাই যেন ধর্ষকের প্রতিবন্ধক নয়। যেটা মানবিক মূল্যবোধের চরম অবনতির পরিচর বহন করে। সততার কথা বলতে গেলে ছোট একটি উদাহরণ দিতে চাই; আমাদের আধুনিক সমাজের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জমির নকল দলিল তৈরি করে অন্যের জমি দখল করে। কিন্তু একসময় নাকি মানুষ জমি কেনা-বেঁচা করতো মুখে মুখে। কোনো শক্ত প্রমাণ বা দলিলের দরকার হতো না। কেউ কেউ এই বক্তব্যে বলে উঠবে তারা দলিল করবে কিভাবে? তারা তো অশিক্ষিত ছিল। হ্যাঁ, আমিও তাই বলবো।অথচ তারা অশিক্ষিত ও বর্বর ছিল। আর আমরা আধুনিক ও শিক্ষিত। দুর্নীতি নামক শব্দটির সাথে পরিচিত নয় এমন ব্যক্তি এ সমাজে খুজে পাওয়া কঠিন। যে শিক্ষার মাধ্যমে জাতির মনুষ্যত্বের উৎকর্ষতা সাধন হবার কথা, সেই শিক্ষা মাধ্যমও বাদ যায় না দুর্নীতি থেকে। যাদের দুর্নীতি দমন করার কথা (দুদক), তাদের সম্পর্কে একটু বলতে চাই। দুর্নীতির দায়ে দুদকের পরিচালকের সাময়িক বরখাস্ত হবার মত ইতিহাসও সম্ভব হয়েছে। তবুও আমরা কিন্তু আধুনিক শিক্ষিত সভ্য সমাজের বসবাস করি।
একটি প্রাচীন কুপ্রথার বিরুদ্ধে আমরা অনেকদিন ধরেই নানাভাবে সংগ্রাম করে আসছি। কালের পরিক্রমায় শব্দটি কিছুটা কম শোনা যায়। যৌতুক নামের এই সামাজিক সমস্যাটি নির্মূলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সম্ভবত জনসচেতনতার কারণেই আজ অনেকটাই যৌতুক মুক্ত সমাজ গঠনে সক্ষম হয়েছি। আর জনসচেতনতার কারণটি হয়তো আধুনিক সমাজের ফল। আসলেই কি তাই? আগে বিবাহের পূর্বে অর্থ লেনদেনর বিষয়টি পাকাপাকি বা নির্দিষ্ট থাকতো, যেটাকে বলা হতো যৌতুক। এখনকার সময়ে তেমন চিত্র না দেখা গেলেও দেখা যায় ব্যতিক্রম কিছু। যৌতুক দেওয়া হয় না তবে ঘরের জন্য কিছু আসবাবপত্র আর ব্যক্তিগত কিছু দেয়া হয় উপহার হিসেবে। যেটা কণ্যা পক্ষের জন্য কষ্টসাধ্য হলেও ছেলে পক্ষের সম্মান বিন্দু মাত্র কমে না। কারণ এটা যৌতুক না, এটা উপহার। কেননা আমারা তো এখন সভ্য ও আধুনিক সমাজের ব্যক্তি।
সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তোলার দায়িত্ব কারো একার নয়, আমাদের সবার। তাই সমাজবিজ্ঞানীদের উচিত, এ সকল সামাজিক সমস্যা নিয়ে বিস্তর গবেষণার মাধ্যমে এর সমাধানের উপায় বের করা। আর সকলের উচিত সে লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যথাযথ কাজ করা। সুন্দর হোক আমাদের সমাজ।
লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়