পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নেবে নাকি ভর্তির প্রস্তুতি?

  © ফাইল ফটো

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো অনুকূল পরিবেশ এখনো হয়নি। কবে হবে তাও কেউ জানে না।

তিনি বলেন, ‘অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে তার ১৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হবে।’ সেটা কবে তা কি নিশ্চিত? সব শিক্ষার্থী বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা যে মানসিক চাপে আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একদিকে পরীক্ষা অন্যদিকে ভর্তির চিন্তা। এভাবে পার হচ্ছে অর্ধবছর। এইচএসসির পরই জীবনের মোড় ঘুরে শিক্ষার্থীদের। এই সময়টা তাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যারা বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছে তারা আরো বেশি সংকটে পড়েছে। সেশন জটে হয়তো তাল মিলাতে পারবে না তারা, এমনটাই ভাবনায় রয়েছে তাদের।

অনেক দেশে করোনা সংকটে অটো প্রমোশন দিলেও অনিশ্চিত জেনেও আমাদের দেশে কেন তা করা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। অটো প্রমোশন হলে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারত শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নেবে নাকি ভর্তির প্রস্তুতি? কোনটা? এমন মানসিক চাপ থেকে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মুক্তি দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি একটু ভালো হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে সীমিত আকারে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছে, এ সিদ্ধান্তটা নিয়েই সরকার ভাবুক।

শিক্ষামন্ত্রী এ ব্যাপারে সম্প্রতি বক্তব্যও পেশ করেছেন। মন্ত্রী পরবর্তীতে এও বলেছেন—‘পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। শিক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষাই শেষ কথা নয়। এক বছরে সব শেষ হয়ে যাবে তাও নয়’ শিক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্য বেশ ভালো লেগেছে আমাদের। তবে সরকারের ভাবনায় আনা সীমিত পরীক্ষার বিষয়টি আতঙ্কেরই বটে! তাছাড়া সময়টা তো অনিশ্চিত। প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। যেভাবেই পরীক্ষা হোক এইসংখ্যক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে একই সঙ্গে বের হতে হবে। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকবেন আরো এক-দুই জন করে অভিভাবক। পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, কেন্দ্রের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এ নিয়ে প্রায় কম করে পরীক্ষার দিন অর্ধকোটি মানুষের সমাগম হবে। প্রশ্ন হলো, ১৪ লাখ শিক্ষার্থী কীভাবে কেন্দ্রে যাবে? কোনো পরিবহন যোগে অবশ্যই।

পরিবহনে চড়তে গিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা কিন্তু থেকেই যায়। এর পর শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অধিকাংশই কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অসচেতন ধরে নিতেই হবে। তারা পরীক্ষা দিতে এসে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব কতটা বজায় রাখতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকে যায়। অভিভাবকরাও কি এ সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারবেন? প্রশ্নই আসে না। তাহলে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অসংখ্য পরীক্ষার্থী যারা এতদিন ঘরেই নিরাপত্তা বজায় রেখে চলেছে তারা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এটাই কিন্তু স্বাভাবিক।

 

লেখক: গবেষক

 

সূত্র: ইত্তেফাক

 


সর্বশেষ সংবাদ