উদ্যোক্তা হবার নেশায় পড়াশোনা ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

  © টিডিসি ফটো

আজকাল ফেসবুক জুড়েই উদ্যোক্তাদের সমাগম। আমি তাদেরকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এই লেখাটি লিখছি না। কিন্তু ভাবনার বিষয় হচ্ছে, যখন দেখছি পড়াশোনা করা মেধাবী শিক্ষার্থীরা উদ্যোক্তা হবার স্বপ্নে পড়াশোনাকে প্রাধান্য দিচ্ছে না। তারা অনেকেই সবসময় ফেসবুকে মার্কেটিং ও নিজের প্রেজেন্টেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

কিন্তু একবারও ভাবছে না, স্বপ্নটি ব্যর্থ হলে, সময় চলে গেলে, পড়াশোনা করার জন্য হারানো সময়টুকু খুঁজে পাবে কিনা। উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পার্থক্য আছে এটা বুঝতে হবে। উদ্যোক্তা হবার চ্যালেঞ্জ অনেক। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগই প্রধান নয়, সাথে টিকে থাকার লড়াই।

উদ্যোক্তা হবার ক্ষেত্রে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, বয়স, মেধা, শ্রম, অর্থ, পড়াশোনা, সময় ও লক্ষ্য নিয়ে ভেবেচিন্তে আগানো উচিত। কারো কারো উদ্যোক্তা হবার আগ্রহ জীবনের উন্নতি নাও ঘটাতে পারে। ইদানীং কিছু ফেসবুক গ্রুপ খুলে নারী-পুরুষদের উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে, ট্রেনিং দিচ্ছেন, সফলতার গল্প শোনাচ্ছে। একটি কথা মনে রাখবেন, ৫ লাখ টাকার সেল মানে ৫ লাখ টাকা ব্যবসা না। ওসব গ্রুপে কারো কারো নাম উল্লেখ করে অনেকটা এরকমই প্রচার করে, তিনি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে।

যারা প্রচার করছে তারা হয়তো তাদের দৃষ্টিতে আপনাকে ঠিকপথেই বৃহৎ স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এতে তাদের লাভও আছে। ট্রেনিং বা ওয়ার্কশপ করিয়ে কিছু টাকা অর্জন করছে। আপনার সিদ্ধান্তটি আপনাকেই নিতে হবে, আপনি কি কম্পিটিশন করে টিকতে পারবেন? পারলে আপনার পরিশ্রম কতটুকু? পড়াশোনার কতটুকু ক্ষতি করছেন? যারা ফুলটাইম বেকার, পড়াশোনা শেষ করেছেন বা সুযোগ আছে তাদের কথা ভিন্ন।

যিনি ১ কোটি টাকা সেল দিয়েছেন খোঁজ নিয়ে দেখেন, তিনি ফেসবুককেন্দ্রিক বিজনেস করেনা, বড় বড় শপ বা প্রোজেক্ট আছে। তারা হয়তো আগে থেকেই স্বাবলম্বী। কিন্তু ফেসবুক গ্রুপের এডমিনগণ তাদের মার্কেটিংয়ের স্বার্থে ঐসব বড় ব্যবসায়ীদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে আপনাদেরকে তাদের কোর্সে টানছে। তাদের নিয়ে যত বেশি সভা, সেমিনার, মিটআপ ততই প্রচার। তবে সবাই যে গ্রুপ খুলে বিজনেস করে তা নয়।

এমন ঘটনাও শুনতে পাচ্ছি, উদ্যোক্তা গড়ার বড় বড় ফেসবুক গ্রুপের এডমিনগণ কিছু ছেলে-মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবনও প্রমোট করছেন, উদ্যোক্তা হবার নাম করে গ্রুপের মাধ্যমে ভাল একটা পজিশনে বিয়ে-সাদী হয়ে কিংবা এভাবে লাইফস্টাইলের পরিবর্তন ঘটিয়ে সব ছেড়ে ঘর-সংসার করছে। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল গ্রুপের মাধ্যমে প্রমোট হওয়া, উদ্যোক্তা হওয়া না। এসবে সম্ভবত সহযোগিতা করেন গ্রুপের কিছু পেইড লোকজনই।

যাইহোক, পৃথিবীতে সকলেই অর্থ, শ্রম, পুঁজি ও কৌশল খাটিয়ে লাভবান হবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। সেটা হোক আর্থিক বা সামাজিক। আপনি যেখানে প্রবেশ করবেন, ভেতরে কি আছে আগে জানার চেষ্টা করুন। ভিতরে পৌঁছে গেলে ওখানে কতটুকু সময় থাকতে পারবেন সেটাও বিবেচনা করবেন। যা লিখেছি, সবই আপনাদের সতর্ক করার লক্ষ্যে, কারো ক্ষতি বা সম্মানহানির জন্য নয়।

লেখক: প্রভাষক, মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ, নাজিরপুর, পিরোজপুর


সর্বশেষ সংবাদ