ফর্ম বিক্রির নামে ভর্তিচ্ছুদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া বন্ধ হোক

এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১৫১টি আসনের জন্য তিনটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে, প্রতি ইউনিটে ৩২ হাজার জন করে ৯৬ হাজার জন ভর্তিচ্ছু। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, প্রতিজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি-ফর্ম কেনা বাবদ খরচ করতে হবে (৫৫+১৯৮০) ২০৩৫ টাকা। অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে রাবি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করবে ১৯ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর বাইরে প্রাথমিক আবেদনকারী লাখ লাখ ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে যে ৫৫ টাকা করে নেওয়া হবে সে হিসাব এখানে ধরা হলো না।

বিশ্ববিদ্যালয়টি নিশ্চয়ই এই টাকার অধিকাংশ পরীক্ষা আয়োজনের ব্যয় দেখাবে। যেটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য । এই ব্যয় শিক্ষার্থী প্রতি সর্বোমট ২০০ টাকার বেশি যদি হয় তা হলে ভয়ানক নয়ছয়/ অপব্যয়ের অভিযোগ তদন্ত এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শাস্তি হওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই। তারা বাছাই করে শিক্ষার্থী ভর্তি করে, তাও নিজেদের মান ধরে রাখতে৷ এই বাছাই কার্যক্রমে ভর্তিচ্ছুরা কেন টাকা দেবে -এই প্রশ্ন বড় করে তোলা উচিত।

কোনো অপরাধ, অনিয়ম না করে কেন এই আর্থিক-দণ্ড, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে পারবে কি না তারও ঠিক নাই- এমন ভর্তিচ্ছুরা ভোগ করবে?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে এইসব কথা তুললেও সব লোক-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কথাগুলো কমবেশি প্রাসঙ্গিক। লোক-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (অর্থাৎ দেশের মানুষের টাকায় চলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর) সব কার্য্যক্রম পরিচালনার জন্য যদি শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে, তাহলে ভর্তি বা বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য কেন দু-এক কোটি টাকা পৃথক বরাদ্দ রাখা হয় না? এটা কি "সরল বিশ্বাসে" এড়িয়ে যাওয়া হয়, না কি অন্য কোনো ধান্ধাবাজী আছে -সে প্রশ্ন তোলাও জরুরি।

আমার অনুমান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই অপকর্মের পেছনের শক্তি বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষকদের ছোটলোক-মার্কা অর্থলিপ্সা। যত দূর জানি তাতে বলতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজের বিভাগে ক্লাস নেওয়া বাদে অন্য যেসব কাজ করেন, যেমন অন্য বিভাগে তার বিষয়ে ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষার খাতা দেখা, ভায়ভা নেওয়া, হাউস-টিউটরি, প্রোক্টরগিরি ইত্যাদি সকল কাজের জন্য টাকা পান। অনেক ক্ষেত্রেই কতো শিক্ষার্থীর জন্য কাজ করছেন, সেই মাথাপ্রতি হিসাবে শিক্ষকদের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের কাজ প্রতিটা শিক্ষকের সমান দায়িত্ব ও কর্তব্য হওয়া স্বাভাবিক ছিল কিন্তু তা না হয়ে এসব বিশেষ বিশেষ শিক্ষকের কাজ হয়ে উঠেছে মূলত এই অর্থযোগ থাকার কারণেই। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে যার মতো অর্থ আদায় করে নানান উসিলায় শিক্ষক-কর্মচারিরা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। -এমন অভিযোগ বছর বছর উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নির্বিকার। এই নির্বিকার থাকার অর্থ কী এই নয় যে অভিযোগের সত্যতা আছে?

ভর্তি হওয়ার যোগ্য কি না -কেবল এটি যাচাইয়ের জন্য এই বিপুল অর্থ আদায় কেন করা হবে? শিক্ষক-কর্মচারিরা নিজেদের পকেটে টাকা ভরার জন্য এমন করেন- এ ছাড়া এ প্রশ্নের আর কী উত্তর হতে পারে?

নৈতিকতার স্বার্থে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত ভর্তিফর্মের মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হয় তা দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা। ইউজিসি ভর্তিপরীক্ষাগুলো থেকে কতো আয় করে তাও বিশদে জানানো উচিত ইউজিসির।

কথায় কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের বেতনভাতা কম বলে অনুযোগ করেন। যদি তাই মনে হয়, তবে তা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকরা আন্দোলন করুক, সরকারের সাথে দেন-দরবার করুক, তারপর বেতন-ভাতায় না পোষালে চাকুরি ছেড়ে চলে যাক। সমাজের যোগ্যতর মানুষ যদি হয়ে থাকেন, সমাজের জন্য মূল্যবান মানুষ যদি হয়ে থাকেন নিশ্চয়ই রাষ্ট্র যে বেতন দেয় তার চেয়ে বেশি আয় তারা করতে পারবেন, বেশি সম্মান তারা পাবেন কিন্তু দয়া করে ভর্তিপরীক্ষার নামে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে শিক্ষিক-কর্মচারীদের অর্থসংস্থানের আয়োজন বন্ধ করা হোক।

লেখক: আর রাজী
সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)


সর্বশেষ সংবাদ