মনে হয় ঢাবি ছাড়া কোথাও পড়াশুনা হয় না!
- আমিনুল ইসলাম
- প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০১৯, ০৭:৫৭ PM , আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৯, ০৮:১১ PM
গতকাল রাতেই একটা ভিডিও দেখে ঘুমিয়েছি। ঘুমানোর সময় বার বার ভাবছিলাম- এরা এভাবে কথা বলছে কেন?ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বোধকরি এখন সাতটা কলেজ আছে। তো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা চাইছে না এই কলেজ গুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকুক। এতে তারা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছে।
তো এই নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করছে। যে কোন দাবী আদায়ের জন্য আন্দোলন তারা করতেই পারে। এই নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আন্দোলন করতে গিয়ে এরা ওই সাত কলেজের ছাত্রদের যেভাবে ছোট করে বক্তব্য দিচ্ছে, সেটা শুনে আমি রীতিমত অবাক হয়েছি।
এদের বক্তব্য শুনে কাল রাতে আমার মনে হলো- ওই সাত কলেজে যারা পড়াশুনা করে, এরা আসলে কোন মানুষের পর্যায়ে'ই মনে হয় পরে না। ওরা কষ্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছে। ওরা টিউশনি করাতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেয়। ওদের একটা আলাদা মূল্য আছে! এখন ওই সাত কলেজের ছাত্ররাও গিয়ে বলে ওরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এতে ওদের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের) সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ওরা কিছু জানে না, বুঝে না। ওরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ডুবাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি ভাবছিলাম- দাবী আদায় করার জন্য এভাবে অন্যদের কেন ছোট করে কথা বলতে হবে? এরপর মনে হলো- এই ছাত্রদের দোষ দিয়ে আসলে লাভ নেই। ওদের শিক্ষকরা আসলে ওদের এই সব'ই শিক্ষা দেয়। শিক্ষকরা নিজেরাই তো মনে করে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মনে হয় এই দেশে আর কোথাও পড়াশুনা হয় না!
তো রাতের বেলা আন্দোলনকারীদের এই সব বক্তব্য শুনে মন খারাপ করে ঘুমাতে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেও সারলাম না, পত্রিকা অফিস থেকে জানিয়েছে- স্যার, ঢাকা কলজের ছেলেপেলেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে সেই রকম মার মেরেছে। এই নিয়ে একটা লেখা লিখেন।
এরপর জানতে পারলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেপেলেরা যেহেতু ওই সাত কলেজ নিয়ে এমন বাজে মন্তব্য করেছে, তাই ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সেটা সহ্য হবে কেন! তারা তো ওই সাত কলেজের মাঝে'ই আছে। সুতরাং তারা আরও একধাপ এগিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ধরে আচ্ছা মতো পিটিয়ে দিয়েছে।
ভাবখানা এমন- আমাদের নিয়ে আর বলবি? বললে, এই দিকে আসবি না? একদম ঠ্যাং ভেঙে দিব। এই হচ্ছে আমাদের সব চাইতে নামী-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ছাত্র-শিক্ষকদের অবস্থা। আর আপনারা এখন ব্যস্ত আছেন, শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে কেন গণপিটুনি দিয়ে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে এই নিয়ে।
যেই দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনের ছাত্র-শিক্ষকরা দিনে রাতে নিজেদের বড় হিসেবে জাহির করার জন্য অন্যকে ছোট করে বেড়ায়, পারলে মারামারি, খুনোখুনি করে বেড়ায় এবং ক্লাস রুমে বসে এইসব'ই শেখে; সেই দেশে বসে আপনি চিন্তা করছেন- মানুষ গুলো এতো অসভ্য হয় কিভাবে!
তা মশাই, আমরা সভ্য ছিলাম কবে? যাদের আমরা সব চাইতে শিক্ষিত, সভ্য মানুষ ভাবছি; এরাই তো আমাদের দিনে-রাতে অসভ্যতা শেখাচ্ছে!