প্লিজ আত্মহত্যা করবেন না

বদরুল আলম
বদরুল আলম

খবরের কাগজে আত্মহত্যার মিছিল দেখি। আঁতকে উঠি ভয়ে। অজানা এক ভয়! ভয় নেই আমি আছি নির্ভীক আগামীর যুদ্ধে। পৃথিবীতে এরকম অনেক খবর আছে। একদিন যে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল, সেই চমকে দিয়েছিল পৃথিবীকে। আমরা সে চমক দেখতে চাই। নেলসন মেন্ডেলার ভাষায় যদি বলি ‘আত্মহত্যা কে না বলি’।

গেল বছর আমরা ৫৯তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে সোনাজয়ী আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীর হাসোজ্জ্বল চেহারা দেখেছি। আর এ বছর জিপিএ-৫ বা গোল্ডেন এ-প্লাস প্রাপ্ত ভাই-বোনদের উজ্জ্বল চেহারা দেখলাম। সত্যি আনন্দে আমাদের বুক ভরে যায়। যারা এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছেন তাদের জন্য অনেক শুভেচ্ছা, অনেক অভিনন্দন। আর যারা ভালো করতে পারেননি, তাদেরও অগ্রিম শুভেচ্ছা। আপনার জন্য নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু অপেক্ষা করছে।

জীবনটা শুধু জিপিএ-৫ বা গোল্ডেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। জীবনের মানে অনেক বড়। পরীক্ষায় সবাই ভালো করবে না, সবাই জিপিএ-৫ পাবে না। কেউবা উত্তীর্ণও হবে না- এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কারও মধ্যে মেধা বা সামর্থ্যের কমতি আছে তা তো নয়। একেকজন মানুষ একেকভাবে নিজের মেধা আর সামর্থ্য ফুটিয়ে তুলে। অপেক্ষা করুন, ধৈর্য ধরুন। নিজেই হয়তো একদিন নিজেকে চমকে দেবেন।

এইচএসসির পর এই সময়টা জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়। জীবনের হিসেব-নিকেশ অনেকটা এখান থেকেই যোগ-বিয়োগ করতে হয়। মেডিকেল না নামকরা কোন বিশ্ববিদ্যালয় এই হিসেবটাও অনেক জটিল। কঠিন সময়, কঠিন যুদ্ধ। নিজেকে ঠিকিয়ে রাখা চাই। নিজের স্বপ্নের পথে হাটতে হবে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিজ্ঞানী আবুল পাকির জয়নুলাবেদীন আবদুল কালাম এর একটা কথা বলি- ‘DREAM IS NOT THAT WHICH YOU SEE WHILE SLEEPING IT IS SOMETHING THAT DOES NOT LET YOUR SLEEP.’ অর্থাৎ ‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন সেটা যেটা তোমায় ঘুমোতে দেয় না।’ স্বপ্নের পথে আমাদের হাঁটতে হবে। পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ, অনেক দীর্ঘ পথ।

যারা এবার ভালো করেননি তাদের একটা গল্প বলি। একজন কয়েদির গল্প। কয়েদি নম্বর ৪৬৬৬৪। মাত্র নয় বছর বয়সে বাবাকে হারান। মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই করতে গিয়ে ১৯৬৪ সাল থেকে ২৭ বছর কারাগারে কাটান। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তিনি দূর শিক্ষণের মাধ্যমে আইনে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯০ সালে মুক্তির পর ১৯৯৩ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি আফ্রিকার সাধারণ মানুষের প্রিয় নেতা ‘মাদিবা’ নেলসন মেন্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার ভূগোল পেরিয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন বিশ্ব-ভূগোলে। যেখানেই জাতিগত বা বর্ণগত বৈষম্য কিংবা সামাজিক অসমতা, সেখানেই সাধারণ মানুষের কাছে প্রেরণার এক দীপ্ত নাম ম্যান্ডেলা। (১৮ জুলাই ১৯১৮-৫ ডিসেম্বর ২০১৩)।

নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে তার আত্মজীবনী ‘Long Walk to Freedom’ বইয়ে একটা পরিষ্কার ধারনা দিয়েছেন। সন্ত্রাস- সংঘাত দিয়ে নয়, বরং আইনি বিপ্লব দিয়ে ম্যান্ডেলা সব ধরনের রাজনৈতিক সংকট সমাধানের কথা বলেছেন। (১৮ জুলাই ম্যান্ডেলা দিবস হিসেবে একটু সাফাই গেয়ে নিলাম। এই শুভার্থী মুহূর্তে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি জ্ঞাপন করি)।

শাসক দলের অত্যাচার, দীর্ঘ কারাভোগ কোনো কিছুই তাঁকে সংকল্প থেকে টলাতে পারেনি। হোঁচট খেতে খেতে বারবার তিনি মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, আমার সফলতার ভিত্তিতে আমাকে বিচার করো না, আমার বিচার করো আমার ব্যর্থতা এবং ব্যর্থতার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ভিত্তিতে। আমরা ঘুরে দাঁড়াবই। ঘুরে দাঁড়াতেই হবে।

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটার পর একটা স্কুলে গেছেন, টিকতে পারেননি। ব্যারিস্টারি পড়তে বিলেতে গেছেন, ব্যরিষ্টার না হয়েই ফিরে এসেছেন। তাতে পৃথিবীর লাভই হয়েছে। আইনস্টাইন কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। বিল গেটস হাভার্ডের পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। আর পড়া শেষ না করেই বেরিয়ে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে বহিষ্কৃত হন।

ইতিহাসবিদরা বলেন, তাতে ভালোই হয়েছে। দেশ একজন জাতীয় নেতা পেল। পরে যিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন। আমরা পেলাম একটি দেশ, স্বাধীন এবং সার্বভৌম বাংলাদেশ। বিশ্ববাসী সে চমক দেখেছিল।

[লেখক: শিক্ষক ও গবেষক]


সর্বশেষ সংবাদ