কিভাবে একটি নারীকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়া হয়!

‘আমি হস্তক্ষেপ না করলে তো মেয়েটাকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়া হতো’- ফেনীর নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে মারার পর খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মন্তব্য করেছিলেন। নুসরাতকে চরিত্রহীন বানানোর চেষ্টা আসলে শুরুই হয়েছিল। ঘটনার পরবর্তী অধ্যায়গুলোর দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকান, ফেনী আর বরগুনা, নুসরাত আর মিন্নির ঘটনার মধ্যে কি অসাধারণ মিল আছে। ফেনীতে ছিল ওসি মোয়াজ্জেম, বরগুনায় ওসি আবির। ফেনীতেও মিছিল মানববন্ধন হয়েছে, বরগুনায়ও। ফেনীতেও এমপি, চেয়ারম্যানের নাম এসেছে, বরগুনায়ও এমপি চেয়ারম্যানের নাম আছে। 

ফেনীতে নুসরাতের মৃত্যু ঘটার পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বরগুনায় মিন্নি মরেনি, প্রধানমন্ত্রী এখনো হস্তক্ষেপ করেননি। ফলে মিন্নিকে চরিত্রহীন বানানোর, তাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গডফাদারদের বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টায় এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমি জানি, আপনারা মিন্নি আর নয়নের তথাকথিত ‘সেক্স ভিডিও’র কথা বলবেন। ভিডিওটা যারা দেখেছেন- তারা দয়া করে নিজের যৌন সম্পর্কের সাথে মিলিয়ে দেখেন তো? কি? স্বাভাবিক মনে হয়? আচ্ছা,এই ভিডিওটা কারা ছড়ালো? কোথায় পাওয়া গেছে এই ভিডিও? নয়নের সেলফোনে ছিলো? পুলিশের তথাকথিত ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর সেটি পুলিশের হাতে পড়েছে? তাহলে তো সেটি তদন্তের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কথা? পুলিশের সেটি আদালতে উপস্থাপন করার কথা? সেটি বাইরে ভাইরাল হলো কিভাবে? পুলিশ কি সেটি ছড়িয়ে দিয়েছে? না কি এটি গ্রেফতার হওয়া নয়নের সহযোগিদের কাছে ছিলো? তাহলে তো একই প্রশ্ন ওঠে? এই ভিডিওটা কারা ছড়ালো? আমি তো মনে করি, তাদেরই বরং আইনের আওতায় আনা দরকার। 

দেখুন, প্রধানমন্ত্রীর কথাই কিভাবে অক্ষরে অক্ষরে ফলে যায়। তিনি ‘হস্তক্ষেপ না করলে’ কিভাবে একটি নারীকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়া হয়! 

মিন্নি দোষী কী না, রিফাত হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা আছে কী না- সেটা তদন্তের এবং আইনি প্রক্রিয়ায় বিচারের বিষয়। কিন্তু তাকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়া, যেমন নুসরাতকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিলো- এই অভিন্ন চক্র কিভাবে তৈরি হলো?

লেখক: প্রকাশক, নতুনদেশ

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)


সর্বশেষ সংবাদ