ডিজিটাল যুগে ঈদ আনন্দ
- রাজু আলীম
- প্রকাশ: ৩১ মে ২০১৯, ০৪:২৮ PM , আপডেট: ০৫ জুন ২০১৯, ০১:১৮ PM
বিশ্ব বাঙালির কাছে ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়ে প্রথম রোজা শুরু থেকেই। আর পুরো মাসের সিয়াম সাধনার শেষে গ্রামে গঞ্জে পাড়ায় মহল্লায় অলি গলিতে বেজে ওঠে প্রিয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান- ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ।’ এই গানের সুরের সাথে বাঙালী মুসলিমের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের রঙ আনন্দের অনির্বচনীয় বারতা। রোজার শেষ দিনের ইফতারের পরে ঈদের নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিম আনন্দে একাকার হয়ে যায়। চারিদিকে খুশির জোয়ারে মেতে ওঠে সব বয়েসি মানুষ। ঈদের আনন্দ সবসময় একই না থাকলেও মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবে আনন্দের কমতি কখনই ছিল না কখনো।
সেকালে একালে সবকালেই আনন্দময় সার্বজনীন ঈদ উৎসব। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে গেছে উৎসব উদযাপনের ধরণ। বদলেছে এর অনুভূতি প্রকাশের ভিন্নতা। সময়ের পরিবর্তনে ঈদ আনন্দে লেগেছে ডিজিটাল হাওয়া। ইন্টারনেট, অনলাইন, ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার, ইন্সট্রাগ্রাম, হোয়াটসআপ ইত্যাদির মাধ্যমে ঈদের বৈশ্বিক রং আরও বেড়েছে। ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এই সব ডিজিটাল সোশ্যাল মিডিয়া। ঘরে বসে আমেরিকা বা বিলাত প্রবাসী সন্তান সন্ততির সাথে ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে একে অপরের সাথে ভাগ করে নিচ্ছে ঈদের আনন্দ। এক মূহুর্তের মধ্যে দুনিয়ার এই প্রান্তের ঈদ আনন্দের ছোঁয়ায় মেতে উঠছে দুনিয়ার অপর প্রান্তের মানুষ। আর এই অভূতপূর্ব যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তি মাধ্যমে। তাই বদলে যাচ্ছে পৃথিবীব্যাপী ঈদ উৎসবের আমেজ।
তথ্য প্রযুক্তি আর অনলাইনের দুনিয়ায় প্রচলিত ঈদ আনন্দে লেগেছে নতুনত্বের বাতাস। আগে কার দিনের মতো নাগরিক মানুষেরা এখন আর দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে শপিংয়ে ক্লান্ত হয়ে ঈদের কেনাকাটায় মাতে না। ই কমার্স বদলে দিচ্ছে ঈদ কেনাকাটার প্রথাগত পদ্ধতি। অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মে ঢুকে যে কেউ নিজের পছন্দের ঈদের পোশাক এবং উৎসবের প্রয়োজনীয় সব কিছুই পেয়ে যাচ্ছে এক ক্লিকে। অনলাইন শপে অর্ডার করার সাথে সাথে পছন্দের ঈদ সামগ্রী পৌছে যাচ্ছে ঘরের ড্রয়িং রুমে। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে এখন আর বাসের ট্রেনের বা প্লেনের টিকেট কাটতে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না।
অনলাইনে অর্ডার করে যে কোন ডেসটিনেশনের টিকিট সহজেই পেয়ে যাবেন আপনি। কেনাকাটা বা টাকা পয়সা পরিশোধে এসেছে নতুনত্ব। বিকাশে টাকা দেওয়া বা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে বিল পরিশোধ এনেছে নতুন গতি। আর এইভাবেই ঈদের আনন্দ আরও সহজ এবং ব্যাপকভাবে ডিজিটালাইজড হয়ে ধরা দিচ্ছে নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে। তবে সব সময়ই ঈদের আনন্দের বেশির ভাগ জুড়ে থাকে শিশুরা। কেমন ছিল আগের ঈদ? স্মৃতির আবেগে ভেসে ভেসে অতীতে গেলে আর ফিরতে ইচ্ছে করে না কারও।
আর তা যদি হয় ঈদের স্মৃতি তা হলে তো কথাই নেই। কি আনন্দ, কি উৎসবের মাতামাতি! সেই সময়ে এখনকার বসুন্ধরা শপিং মল যমুনা ফিউচার পার্ক এর মত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বড় বড় শপিং মল ছিল না। আড়ং, মায়াসীর, ক্যাটস আই, মেনজ ক্লাব, অহং, রেলুসে, সাদাকালো, দেশী দশ, ইনফিনিটি, এপেক্স, ইয়োলো, সাদাকালো, অঞ্জনস, বিশ্বরঙ, দর্জিবাড়ী, এই রকমের নামি দামী ব্র্র্যান্ডের সুপার শপ তো দূরের কথা তখন রেডিমেড গার্মেন্ট পর্যন্ত ছিল না। থান কাপড়ের দোকান থেকে থান কিনে পোশাক বানাতে হতো।
রোজার আগে থেকেই ভিড় শুরু হয়ে যেত খলিফা, টেইলর বা দর্জি বাড়িতে। আবার এসব থান কাপড় যখন তখন কেনাও যেত না, হাটের দিন হাট ছাড়া কাপড় পাওয়া যেত কম। গঞ্জে বা সদরের নিউমার্কেট থেকে উচ্চবিত্তরা অবশ্য কাপড় কিনতে পারতো। দর্জি বাড়িতে কাপড় বানাতে দিয়ে রাতে ছোটদের চোখে ঘুম নামতো না। কখন দর্জি বানাবে তার শার্ট প্যান্ট এই চিন্তায়? ছোটরা সব সসময় ঘুর ঘুর করতো দর্জি বাড়ির আশপাশে- কখন বানানো শেষ হবে তারটা? এই আনাগোনা ও অপেক্ষার ক্ষণকাল সবার চোখেই লেগে আছে মধুর স্মৃতি হয়ে।
দুই একদিন আগে স্বপ্নের পোশাক হাতে পেয়ে ঈদের আনন্দ রঙিন হয়ে উঠতো আমাদের ছেলেবেলার ঈদ। সকালে ছোট বড় সকলে মিলে পুকুরে বা নদীতে গোসল করে নতুন পোশাক পরে সেমাই খেয়ে দলে দলে দূরের কোন ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়তে যাওয়া। মনে হয় মেঠো পথে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত মানুষের মিছিল মিলিত হয়েছে কোন এক মোহনায়। তখন গ্রামে গ্রামে ঈদগাহ মাঠ ছিল না। কয়েকটি গ্রামের জন্য ছিল একটি ঈদগাহ মাঠ। গ্রামে গ্রামে ঈদগাহ এর প্রয়োজনীয়তাও মনে করত না। কারণ এই উপলক্ষে ঈদগাহে কয়েকটি গ্রামের লোক একসঙ্গে মিলিত হতে পারত। নামাজ শেষে পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করে চলত কুশল বিনিময়।
ঈদগাহ থেকে ফেরার পর প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া, মিষ্টি মুখ করা। ছোটরা নতুন জামা কাপড় পরে দল ধরে এ বাড়ি সে বাড়ি বেড়াতে বের হতো। তাদের তো দশ/বার বাড়িতে না যেতে পারলে যেন ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণ হতো না। কোন কোন আত্মীয়স্বজন ছোটদেরকে দুই টাকা/পাঁচ টাকা ঈদের সালামি দিত। এই সালামি পেয়ে নিজেদেরকে অনেক সম্পদশালী মনে হতো। এই মূল্যবান সম্পদ আমরা অনেকদিন আগলে রাখতাম। টাকার গরম অনেক দিন থাকত। আগের দিনে অনেক এলাকায় গ্রামের লোকজন সাধারণত গরিবদের ফেতরার টাকা না দিয়ে সমপরিমাণ খাবার চাল দিত। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি ও স্যাটেলাইট টিভির প্রভাবে বর্তমানে ঈদ উদযাপনের পদ্ধতিও পাল্টে গেছে। আগে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ঈদকার্ড প্রেরণ বেশ জনপ্রিয় ছিল।
বর্তমানে অফিস ও কর্পোরেট জগতে এর প্রচলন থাকলেও ব্যক্তি পর্যায়ে তেমন একটা নেই। এখন ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হয় ফেসবুক, ভাইবার, টুইটার, ইমেইল বা মোবাইলের এসএমএস বা এমএমএস-এর মাধ্যমে। ঈদের আনন্দ আবর্তিত হয় ফ্যাশন ডিজাইন, বিউটি পারলার ও শপিংকে কেন্দ্র করে। কেনাকাটাই যেন এখন ঈদের মূল আনন্দ। ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে আমাদের হাতের কাছে তাদের সেবা নিয়ে হাজির থাকে সবসমই স্কয়ার, মেরিল, ইউনিলিভার, রেকিট এন্ড বেনকিজার, ম্যারিকো বাংলাদেশ, প্রাণ, ব্রাক, ঈগলু, স্বপ্ন, বসুন্ধরা গ্রুপ, রূপ চাঁদা, মীনা বাজার, নন্দন, এসিআই, ওয়ালটন, স্যামসং, এলজি, বাটারফ্লাই, সিঙ্গারসহ দেশী বিদেশে নানা প্রতিষ্ঠান। নিজেকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকেই বিউটি পারলারগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। ফ্যাশন হাউসগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। কিশোরী তরুণীর হাতে মেহেদি লাগানো সেকাল একাল দুই কালেই খুব জনপ্রিয়। মনে হয় তাদের হাতে আনন্দ যেন মূর্ত হয়ে ওঠে। আনন্দ যেন হাতের মুঠোয় থাকে।
তবে এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন রংয়ের মেহেদি রেডিমেড পাওয়া যায়, হাতে লাগানোর সহজ উপায় আছে। কিন্তু সেকালে মেহেদি লাগানো ছিল অনেক কষ্টকর। তখন এই কষ্টকর কাজটিই ছিল ঈদ আনন্দের প্রধান আকর্ষণ। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে সংগ্রহ করা হতো মেহেদি বা মেন্দির পাতা। তারপর রাতে একজন শিল পাটা নিয়ে মেন্দি বাটতে বসত। আর তাকে ঘিরে চারদিকে গোল হয়ে বাকিরা বসত। চলত গল্পগুজব, হাসি ঠাট্টা গান। মেহেদি প্রস্তুত হলে একটি ছোট কাঠি দিয়ে হাতে মেহেদির নকশা আঁকা হতো বা চুন দিয়ে নকশা একে হাতের তালুতে মেহেদি ছাপ মেরে রাখা হতো। পরে দেখা যেত হাত লাল সাদা নকশা হয়েছে। নিজের, চাচাত ফুফাতো, প্রতিবেশী ভাই বোনদের সঙ্গে মেহেদি লাগানোর সেই সময়টুকু যে কি মধুর ছিল! কিন্তু যে ঈদের জন্য এত আয়োজন সেই ঈদের দিনে কি আগের দিনের মতো আনন্দ হয়? ঈদের দিনে দল ধরে প্রতিবেশীদের বাড়ি বেড়ানো গ্রামে কিছুটা থাকলেও শহরে এখন নেই বললেই চলে। সারাদিন অলস সময় কাটানোর পর বিকেলে বা সন্ধ্যায় শিশু পার্ক, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক বা আত্মীয়স্বজনদের বাসায় বেড়াতে বের হয় কেউ কেউ। ঈদের মাঠের আনন্দও সীমিত হয়ে গেছে।
শহরে তো ঈদের নামাজ ও শুক্রবারের জুমার নামাজের পার্থক্যই বোঝা যায় না। কারণ মসজিদেই হয় ঈদের জামাত। কোলাকুলি করার জায়গা নেই। বড় ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়ে কয়জনে? অবশ্য এখন ঈদের আনন্দ দিতে বা ঈদ আনন্দকে ঘরে বন্দী করতে ব্যস্ত স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো। সপ্তাহব্যাপী প্রচারিত হয় ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। আধুনিক প্রজন্মের মেয়েরা ব্যস্ত থাকে ঈদের টিভি অনুষ্ঠানে নিজেদের মাতিয়ে। ব্যস্ত শহর, ব্যস্ত মানুষের জন্য এই আনন্দকম কি! ঈদের অনুষ্ঠান বা আনুষ্ঠানিকতা যাই থাকুক না কেন, ঈদের আনন্দ থাকে প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে, ধর্মীয় অনুভূতিতে। এই আনন্দে ছোট বড়, ধনী গরিব, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একাকার হয়ে যায়। এটাই ঈদের বড় মহিমা। ইসলাম ধর্ম মুসলমানদের যে কটি দিবসকে আনন্দ ফুর্তি করার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তার প্রধানতম দিবসটি হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। তাই এ দিনের আনন্দও ইবাদতের মধ্যে গণ্য। তবে এ আনন্দে অশ্লীলতার মিশ্রণ ঘটালে হিতে বিপরীতই হবে অর্থাৎ ছওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হবে। যেহেতু পবিত্র ঈদুল ফিতর মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ইসলামী দিবস তাই ঈদুল ফিতর আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়ে আসছে সেই ইসলামের গোড়াপত্তন থেকেই।
আমাদের সমাজে ঈদের দিনে হরেক রকমের আয়োজন থাকে। বিশেষ করে পবিত্র রমজানের শুরু থেকে আরম্ভ হয়ে যায় ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি। তবে আমাদের পূর্ব পুরুষদের ঈদের আচারানুষ্ঠান ও বর্তমান প্রজন্মের ঈদের আচারানুষ্ঠান তথা আনন্দ ফুর্তির মধ্যেও দেখা যায় বিস্তর ফারাক। সে সময় ঈদে সামর্থবান অনেকেই নতুন জামা কিনতেন। তবে সে সময় এতো ফ্যাশন ট্যাশনের প্রতিযোগিতা ছিল না বিধায় পুরুষরা সাধারনত লুঙ্গী ধুতি গেঞ্জি আর মহিলাদের জন্য সুতি শাড়িই কেনা হতো। ঈদের আনন্দ ফুর্তিতেও এসেছে নতুনত্ব ও আধুনিকতার ছড়াছড়ি। পিতা বা দাদার আমলে সম্পূর্ণ দেশীয় যে পিঠা সন্দেশ তৈরী করা হতো তার আধুনিকায়ন হয়ে বর্তমানে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বা পত্রিকার পাতা থেকে রেসিপি দেখে তৈরী করা হয় পিঠা পায়েস। আর এসব পিঠা বা সন্দেশের নাম পরিবর্তন হয়ে ধারণ করে অত্যাধুনিক সব নাম।
আগের যুগে বিপ্তি বা উপরি কাপড়ের দোকান থেকে লুঙ্গী গেঞ্জি ও সুতি শাড়ি কেনার পরিবর্তে বর্তমানে গড়ে উঠা অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেট থেকে সদ্য আগত দেশী বিদেশী ডিজাইনের প্যান্ট সার্ট পাঞ্জাবী শেরওয়ানী ফতুয়া মোবাইল ড্রেস লেহেঙ্গা থ্রিপিছ শর্ট ড্রেস স্কাট বাহারী ডিজাইনের শাড়ি ইত্যাদি কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। বর্তমানে নায়ক নায়িকা বা মডেল তারকাদের পরিধেয় বস্ত্র অনুসরণ করে নতুন নতুন ডিজাইন আমদানি করার প্রতিযোগিতা তো আছেই। অনেক অভিজাত পরিবারের লোকেরা পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে যেতেও দেখা যায়। আর এখনকার বাংলাদেশে ভারতীয় এবং পাকিস্তানী কাপড়ের চাহিদা বেড়ে গেছে অনেক। ঈদের কাপড় কিনতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন বিদেশী পোশাক।
তবে আমাদের দেশীয় পোশাক এবং ঐতিহ্যের স্বার্থে এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। বিদেশী ফ্যাশন এবং কাপড়ের পরিবর্তে বেছে নিতে হবে আমাদের দেশীয় পোশাক। আত্মীয় স্বজনদের বাড়ী বেড়ানোর প্রবণতা কমিয়ে বর্তমানে পার্ক অভিজাত হোটেল রেস্টুরেন্ট কফি বার পিকনিক বা বিনোদন স্পটে ভিড় করতে দেখা যায় বেশি। এছাড়া আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে বেড়ানোর পরিবর্তে অনেকেই ঘরে বসে বিভিন্ন চ্যানেলের ঈদ অনুষ্ঠান উপভোগেই বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকেন। আত্মীয় স্বজনদের বাড়ী বেড়ানোর বদলে রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতেই বেশি ভিড় করতে দেখা যায়। রাজনৈতিক নেতারাও নিজ নিজ বাড়িতে কর্মী সমর্থকদের জন্য গরু জবাই করে ভুড়িভোজের আয়োজন করার সংস্কৃতি বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। এছাড়া আগের দিনে ঈদ কার্ড ডাকযোগে প্রেরণের যে একটা রেওয়াজ ছিল তা বর্তমান ডিজিটাল যুগে হ্রাস পেয়ে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, এস এম এস, হোয়াইটসআপ, ইমো, ইমেইলসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে এসে টেকেছে।
ঈদের দিনে বিদেশে বসবাসরত আত্মীয়দের সাথে ফোনালাপ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে চেটিং বেড়েছে বর্তমান যুগে। পায়ে ধরে মা বাবাসহ গুরুজনকে সালাম করার প্রবণতা যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। কেউবা পাহাড়সম অট্টালিকায় বসে এয়ারকুলারের বাতাসে গা ভাসিয়ে দিয়ে ডিসের মাধ্যমে বিনোদনে মত্ত আবার পাশের বাড়িতে তার আত্মীয় বা পড়শি নতুন জামা কেনা দুরের কথা জঠর জ্বালায় দুমোটো ভাতও জোগাড় করতে পারছেনা, এ ধরনের দৃশ্য বর্তমান সমাজে চোখে পড়ার বর্তমানে অনেকেই পাড়া বা মহল্লার মসজিদ বা ঈদগাহের পরিবর্তে জেলা সদরের বড় ঈদগাহ মাঠ বা বাংলাদেশের বৃহত্তম ঈদগাহ মাঠে গিয়েও ঈদের জামাত পড়তে দেখা যায়। তবে এতে পড়শিদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করা সম্ভব হয় না। আবার কোথাও কোথাও কোলাকুলি করার প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে বিভিন্ন কারণে। বর্তমানে পত্র পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে কর্মী সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাতেও দেখা যায় রাজনৈতিক বা সামাজিক অনেক নেতা পাতি নেতাকে।
তবে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে ঈদকে উপলক্ষ্য করে নেতাদের কর্মতৎপরতা ব্যাপকহারে বাড়তে দেখা যায়। তখন শুরু হয় ভোটারদের মোবাইল নাম্বার অনুসন্ধানের হিড়িক। অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করা হয় ভোটারদের নামে এসএমএস পাঠাতে। এখনকার দিনে ঈদের সময়ে নতুন নতুন চলচ্চিত্র মুক্তির হিড়িক পড়ে।অনেকেই পরিবার নিয়ে ঈদের ছুটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেপ্লেক্সে বসে সিনেমা দেখে সময় কাটান। পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক দেশের ভেতরে কিংবা বিদেশে ঘুরতে যান ঈদের সময়ে।
এয়ার লাইন্স এবং ট্যুর অপারেট কোম্পানীগুলো ঈদের সময়ে নানা ভ্রমণ অফার নিয়ে হাজির হয়। শহুরে জীবনে ঈদের রসনা পূরণ করতে পত্রিকাগুলো বিভিন্ন রেসিপি সংখ্যা প্রকাশ করে এবং টেলিভিশনে মজাদার সব রান্নার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে পোশাক কেনাকাটায় বিদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা তৈরী হয়েছে হাল আমলে। এই প্রবণতার কারণে মার খাচ্ছে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।তাই ডিজিটাল যুগের ঈদের আনন্দ আরও পরিপূর্ণ করতে হলে আমাদের সবাইকে আরও দায়িত্বশীল এবং মানবিক হতে হবে। তাহলেই প্রকৃতভাবে ধরা দেবে ঈদের আনন্দ সবার ঘরে ঘরে।