পলান সরকার: ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও সমাজের প্রতিচ্ছবি

পলান সরকার ও জুয়েল রানা
পলান সরকার ও জুয়েল রানা

‘যে দেশে বীরদের সম্মান করা হয় না, সে দেশে বীরের জন্ম হয় না’— প্রবাদটির সহজ সরলীকরণ করলে আমরা যা পাই, যদি একটি সমাজে ভাল কাজের যথাযথ মূল্যায়ন না করা হয়, যদি যোগ্য ব্যক্তিদের উন্নয়ন কাজের অংশীদার না করা হয়, সে সমাজে ভাল কাজ হয় না, সেই সমাজ নষ্টদের অধিকারে যায়।

আজ এরকম একজন সমাজ সাধককে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পলান সরকার কোন নাম নয়, একটি আদর্শ, প্রতিষ্ঠান এবং একটি আন্দোলন। সমাজকে আলোকিত করার আন্দোলন, সহজ-সরল জীবনে মানবকল্যাণে আত্ম-নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যার কোন লাভ-ক্ষতির হিস্যা ছিল না। রাজশাহীর প্রত্যন্ত বাঘা উপজেলার বিশটি গ্রামকে পায়ে হেঁটে বই বিলি করেছেন। বয়সের ভারকে অতিক্রান্ত করে বয়ে বেড়িয়েছেন এই ঘুণে ধরা সমাজের ভার।

পলান সরকারকে ২০১১ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয়। কিন্তু আদর্শ পলান সরকারকে আমরা কতটুকু ধারণ করতে পেরেছি? প্রতিষ্ঠান পলান সরকারের সমাজে অবস্থানই বা কি??

যদি ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখেন, ছাত্র সংসদ ছিল এরকম এক একটি ‘পলান সরকার’। ছাত্র সংসদগুলো যেমন ছাত্র অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিল, তেমনি ছিল সমাজ পরিবর্তনের জন্য একটি আন্দোলন, একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭১, ১৯৯০ সংখ্যাগুলো তারই সাক্ষ্য দেয়।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্র সংসদকে হয়ত সেই ভূমিকাটি রাখতে হবে না। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান বা আন্দোলন হিসেবে ছাত্র সংসদের আবেদন ফুরিয়ে যায়নি; বরং তা নতুন প্রেক্ষাপটের জন্য তীব্র হয়েছে।

রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রামগুলো একদিক থেকে তো বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রতিচ্ছবি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যর চর্চা বা বই পড়ার অভ্যাস কি রয়েছে? এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কি পেরেছে ফেসবুক ও ইন্টারনেটের জাল থেকে বের হতে? এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কি সুনীলকে চিনে? নজরুলের দ্রোহের কবিতাগুলো কি পড়া হয় তাদের? লাইব্রেরী কি শুধুমাত্র সাজিয়েই রাখা হয়েছে? সেখানে যেতে কি কেউ কি তাদের উৎসাহিত করে? বুকে সাহস নিয়ে দৃপ্ত স্বরে কেউ কি কোন বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে কথাগুলো বলার জন্য সাহস যুগিয়েছে? দেয়ালিকা কি কখনো প্রকাশ হয়? স্কুল-কলেজ আনাড়ি কবিতা লিখার অভ্যাস কি ধরে রাখা গেছে?

যদি এই প্রশ্নের উত্তরগুলো বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্য না হয়; তাহলে ছাত্র সংসদের একজন ‘পলান সরকার’ হয়ে উঠার উপযোগিতা শেষ হয়ে যায়নি। এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে, যে মানুষটিকে আপনি একজন সম্ভাব্য ‘পলান সরকার’ হিসেবে ভোট দিতে যাচ্ছেন, সে কি আধোও পলান সরকার হতে চায়, তার কি সেই যোগ্যতা আছে? সে বসন্তের কোকিলের মত মিষ্টি স্বরে তার স্বার্থ উদ্ধার করতে চাচ্ছে না তো? আপনি কি কার স্বার্থে ভোট দিচ্ছেন? আপনার না, প্রার্থীর?

ব্যালট বক্স আর সিল আপনার হাতে? আপনিই সিদ্ধান্ত নিবেন, বসন্তের কোকিলের গান শুনে কাকভেজা হবেন না একজন ‘পলান সরকার’র সাথে কাজ করে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবেন।

জুয়েল রানা সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু হল ডিবেটিং ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাহিত্য সম্পাদক পদপ্রার্থী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্র সংসদ।


সর্বশেষ সংবাদ