বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত পরীক্ষক পদ্ধতি বাতিল করা উচিৎ
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বহিরাগত পরীক্ষক পদ্ধতি অবিলম্বে বাতিল করা উচিৎ। যিনি যে কোর্স পড়াবেন, তিনিই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন। কোর্স পড়াবেন এক শিক্ষক, আর প্রশ্ন করবেন অন্য শিক্ষক এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন অন্য শিক্ষক- তা হতে পারে না। বিশ্বের কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে তা হয় না। আমরা এসব করি, কারণ অবিশ্বাস।
আমরা আমাদের শিক্ষকদের বাই ডিফল্ট অবিশ্বাস করি। অবিশ্বাস করার মতো শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বহিরাগত পরীক্ষক পদ্ধতি চালু করা একটা মারাত্মক লেভেলের ভণ্ডামি। আমরা বহিরাগত পরীক্ষক পদ্ধতি চালু করেছি আমাদের নিজেদের শিক্ষকদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের অভাবের কারণে।
আবার কন্ট্রাডিকশনটা হলো- আস্থা ও বিশ্বাসের কারণে আমরা সিস্টেম পরিবর্তন করেছিভ। কিন্তু একইসঙ্গে যোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি না।
আমরা অযোগ্য অসৎ মানুষদের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তাকে অবিশ্বাস করে বহিরাগত পরীক্ষক পদ্ধতি চালু করেছি। আমাদের উচিৎ, বহিরাগত ব্যবস্থার ওপর নির্ভর না করে, ভালো ও উন্নত মানের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা শিক্ষকদের মধ্যে দায়িত্ববোধ এবং পেশাদারিত্বের বিকাশ ঘটে। কারো মধ্যে কখনো অসততা প্রমান পেলে তাকে চাকুরিচ্যুত করা।
আরো পড়ুন: কাউকে ক্ষমতায় নেওয়া বা নামাতে ক্যাডার হওয়াকে ছাত্র রাজনীতি বলে না
বহিরাগত পরীক্ষক পদ্ধতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়, প্রশ্নের মান খারাপ হয় এবং রেজাল্ট দিতে হয়। দেরি হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে সময় নষ্ট হয়ে যায়, যা অপূরণীয়।
আমাদের যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ছিল, সেটাও বহিরাগত পরীক্ষক পদ্ধতির মতো অবিশ্বাস থেকেই এসেছিল। আমরা অবিশ্বাস করার মতো নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেই। তারপর তাদেরকে সঙ্গত কারণেই বিশ্বাস করি না। সেই অবিশ্বাসকে ঠেকাতে আমরা তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি। এটাই হলো বাঙালির কূটবুদ্ধির পরিচয়।
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)