০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:০৮

তিস্তা মহাপরিকল্পনা কি কাগজে -কলমেই  সীমাবদ্ধ থাকবে?

লেখক: মো: আনোয়ার হোসেন, শিক্ষার্থী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর  © টিডিসি

পানির অপর নাম জীবন হলেও উত্তরবঙ্গে এখন পানির অপর নাম বলা যায় মরণ। তিস্তাপাড়ের রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের এ দুর্ভোগ শেষ হবে কবে? কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী বা সিলেটের বন্যা মানুষের মনে সাড়া জাগাতে পারলেও পারেনি রংপুরের লালমনিরহাটের বন্যার্তদের আর্তনাদ।

নদী বয়ে চলে উজান থেকে ভাটির দিকে। প্রাকৃতিক এই নিয়মকে রাজনৈতিকভাবে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে বাংলাদেশের উজানের দেশ ভারত। শুধু নৈতিকভাবে নয়, আন্তর্জাতিক সব বিধিবিধানকেও তোয়াক্কা করছে না তারা। একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীকে আন্তর্জাতিক নদী বলা হয়ে থাকে। সেই বিবেচনায় ভারত থেকে বয়ে আসা ৫৪টি নদীই আন্তর্জাতিক নদী। কিন্তু ভারত সেগুলোর ওপর এক বা একাধিক বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর মরণদশা হয়। আর বর্ষায় উজানের পানিতে নদীর তীরে বন্যা ও ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছেন তিস্তাপারের মানুষেরা। উত্তরবঙ্গ কবে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে ? উত্তরবঙ্গের বাঁচামরা দেখার কেউ নেই! নাকি উত্তরের মানুষ খেটে খায় এজন্যই অবজ্ঞা।

তিস্তার উজানে ভারত গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করেছেন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, ভারতীয় অংশে সেচের সম্প্রসারণ। এই বাঁধ দিয়ে প্রথম পর্যায়েই প্রায় ১০ লাখ হেক্টর, অর্থাৎ ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সেচ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সে জন্য ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল করা হয়েছে। এসব খাল একদিকে পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর পশ্চিমবঙ্গের মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যন্ত পৌঁছেছে, অন্যদিকে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলা পর্যন্ত গেছে। অর্থাৎ গজলডোবা বাঁধ একটি বিস্তৃত পরিধিতে সেচ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে।

এই বাঁধের মাধ্যমে ভারত কর্তৃক তিস্তার পানি অপসারণের কোনো উচ্চ সীমা নির্ধারিত নেই। ফলে ভাটির দেশের কথা কোনোভাবেই বিবেচনায় না নিয়ে নতুন নতুন খাল খননের মাধ্যমে ভারত তিস্তা নদীর পানি অপসারণের ক্ষমতা বাড়িয়েই চলেছে। আর বাংলাদেশ অঞ্চলে তিস্তা হারাচ্ছে তার বেঁচে থাকার মতো পানি। 

শুষ্ক মৌসুমে এই নদ-নদীগুলোর জলের জন্য চাতক পাখির মতো সীমান্তের ওপারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। কিন্তু বর্ষায় অতিরিক্ত জলের সময় বিনা নোটিশে গজলডোবায় জলের কপাট খুলে দিলে তিস্তাপারের রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার মানুষ। জলকপাট খুললেই সব কিছু ধুয়েমুছে নিয়ে যায়। সভ্যতার চিহ্ন থাকে না আর । 

তিস্তা মহাপরিকল্পনা কি কাগজে -কলমেই  সীমাবদ্ধ থাকবে? তিস্তা নদী সুরক্ষায় অবিলম্বে  বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সাথে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে। তিস্তা নদীতে সারা বছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধার নির্মাণ, তিস্তা নদীর শাখাপ্রশাখা ও উপশাখাগুলোর সাথে নদীর পূর্বেকার সংযোগ স্থাপন ও নৌ চলাচল পুনরায় চালু করতে হবে।  

বন্যা এবং নদীভাঙনের শিকার ভূমি–গৃহহীন ও মৎস্যজীবী মানুষের পুনর্বাসন, তিস্তা মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও এর তীরবর্তী কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় ও কৃষিভিত্তিক কলকারখানা গড়ে তোলা এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তাপারের মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন: তিস্তা মহাপরিকল্পনার ভূরাজনৈতিক প্রভাব এবং করণীয়

জলকপাটগুলোকে প্রকৃতিবিরোধী বলছেন নদীজন ও গবেষকরা। গজলডোবা থেকে ডালিয়া পর্যন্ত বিপুল এলাকা খোদ ভারতেই বালুকাময়। জলশূন্য তিস্তা। আবার যতটুকু জল আসে সেটিও ক্যানেল দিয়ে ঠেলে সেচ প্রকল্পে নিয়ে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের দক্ষিণে চিলমারী পর্যন্ত ভীষণ খরায় থাকে তিস্তা।

১০ আগস্ট ২০২৪,অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূস রংপুর ভ্রমণ করেন। এসময় তিনি রংপুর জেলাকে এক নাম্বার করার প্রতিশ্রুতি দেন যা নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু কবে এই প্রতিশ্রুতি পালন হবে সেই অধীর অপেক্ষায় উন্নয়ন বৈষম্যে তলানিতে পড়ে আছে রংপুরবাসী।

ইলিশ খেয়ে ডোবালো উত্তরবঙ্গ। এটাই কি ভারত প্রীতি ? ইতিহাসের পাতায় উত্তরবঙ্গ এক বীরের জায়গা । রংপুরে বৈষম্যে চলতে থাকলে আবু সাঈদরা কিন্তু থেমে থাকবে না আর।

লেখক: মো: আনোয়ার হোসেন, শিক্ষার্থী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।