২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪৬

আমাদেরও একটি এমআইটি চাই

জাহাঙ্গীর এইচ মজুমদার  © টিডিসি ফটো

ম্যাসাচুসেট্‌স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) যেখানে বাজেটের ৭৪ শতাংশ গবেষণার জন্য বিনিয়োগ করে, সেখানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে এ খাতে খরচ করে মাত্র ২ শতাংশ। তাই, এমআইটি মানে বিশেষ কিছু! 

চাকরিপ্রার্থীর জীবনবৃত্তান্তে যখন একজন নিয়োগকর্তা এমআইটির ডিগ্রি দেখবেন, সে প্রার্থী এমনিতেই অন্য প্রার্থীদের থেকে অর্ধেক পথ এগিয়ে যাবেন। সম্প্রতি চাঁদপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাফিস উল হক যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এমআইটিতে (Massachusetts Institute of Technology- MIT) ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। দেশের প্রায় সবগুলো জাতীয় পত্রিকা এই সংবাদ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। নাফিসে চাঁদপুরের মানুষ খুবই উচ্ছ্বসিত।

এ ঘটনা ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই সময়ে কেউ প্রবেশিকা, উচ্চ মাধ্যমিক বা ডিগ্রির যে কোনো পরীক্ষায় পাস করলে এলাকার লোকজন অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসতো। বোর্ড স্ট্যান্ড করলে তো কথাই নেই, সে পরীক্ষার্থীর বাড়িতে পুরো এলাকা ভেঙে পড়তো। নাফিস একবিংশ শতাব্দির সিকি শতকে এসে সেই বিরল সম্মান পেয়েছে।

তার অর্জনে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, ডা. দীপু মনি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজে নাফিসকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এই দিনটি নাফিস, তার মাতা-পিতা, শিক্ষক, সহপাঠী ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অনন্য। তাদের পাশাপাশি, এই অর্জনে, নিশ্চিতভাবেই, দেশের হাজারও তরুণ অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত হবে। 

নাফিসের অর্জনটি বেশ চমকপ্রদ। এমন নয় যে, নাফিসই একমাত্র শিক্ষার্থী, যে কিনা এমআইটিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। নাফিসের পূর্বেও অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সেখানে পড়েছে। বর্তমানে ৬৫ জনের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানটিতে পড়াশোনা করছে। নাফিসের ক্ষেত্রে বিশেষত্ব হচ্ছে, সে সর্বকনিষ্ঠ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে এমআইটিতে চান্স পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এমআইটিতে যাওয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর স্তরে পড়তে গেলেও নাফিস যাচ্ছে স্নাতক পর্যায়ের কোর্স করতে।

অবাক করার মতো বিষয় হলো, সে এসএসসি পাশের সনদ দিয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট (স্নাতক, সম্মান) লেভেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। চলতি ২০২৩ সালের আরও পরের দিকে সে এইচএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে। নাফিসকে প্রকৃতপক্ষে এগিয়ে দিয়েছে ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স (আইওআই)-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ব্রোঞ্জ পদক অর্জন।

তাছাড়া, ছোটোবেলাা থেকেই তার মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তির প্রতি ঝোঁক ছিল। শিক্ষক দম্পতি বাবা-মা তার আগ্রহের ক্ষেত্রগুলোতে সবসময় সমর্থন দিতেন। তাছাড়া, অলিম্পিয়াড কমিউনিটির সিনিয়ররা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেছে। এমআইটি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, অর্জিত একাডেমিক রেজাল্ট, কো-কারিকুলার ও এক্সট্রা-কারিকুলার অর্জনও তাকে এগিয়ে দিয়েছে।

নাফিসের ভাষায় বাছাই প্রক্রিয়াটির সারমর্ম করলে দাঁড়ায়, “ওরা আসলে দেখতে চায় [একজন শিক্ষার্থী] পড়ালেখায় কতটা ভালো, মানুষ হিসেবে কেমন, কোন বিষয়ে আগ্রহ আছে কি না তার, সে কিভাবে সমস্যার সমাধান করছে।” আর বাংলাদেশ থেকে এ বছরের একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে তার এমআইটি যাত্রা। এমআইটির ক্ষুদ্র এলিট ক্লাবের সে নতুন সদস্য।

এমআইটি হৈ-চৈ করার বহু কারণ আছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুটসের ক্যামব্রিজ শহরে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে বার্তা দেয়। এটি এক বাক্যে সবাই স্বীকার করবে যে, এমআইটি বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। এটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতের (STEM) তুলনারহিত শিক্ষার জন্য বিখ্যাত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে কোনো র‌্যাংকিংয়ে এটির অবস্থান প্রথম কয়েকটির মধ্যে থাকে। ব্যাপকভাবে পরিচিত ও স্বীকৃত The QS World University Rankings অনুসারে ২০২২-২৩ সেশনে বিশ্বের এক নম্বর উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো এমআইটি। Shanghai Ranking অনুসারে এটি বিশ্বের তৃতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন:অনার্স শেষে এমআইটিতে পিএইচডি করতে যাচ্ছেন বুয়েটের ৩ শিক্ষার্থী

বর্তমানে, প্রতিষ্ঠানটির সাথে ৯৮ জন নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানী জড়িত আছেন। William Barton Rogers ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের কারণে এটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৬৫ সালে। সে সেশনে মাত্র ১৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহাসিক বাঁক বদল হয় Karl T. Compton (1930–48) এর হাত ধরে। মোটামুটি মানের টেকনিকেল স্কুল থেকে এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি পরিণত হয় বিশ্বের সুপরিচিত বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে। প্রতিষ্ঠানটিতে পড়াশোনা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং।

এ সম্পর্কে Jerome Wiesner বলেছেন, এমআইটিতে পড়াশোনা করা মানে হলো- অগ্নিনির্বাপনের পানি ছিটানোর ডেলিভারি পাইপ থেকে পানি পান করা। অর্থাৎ, এমআইটি শিক্ষার্থীকে প্রচুর তথ্য, উপাত্ত, এবং জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের বিপুল সুযোগ ও সম্ভার দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাবে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থী/গবেষকদের চ্যালেঞ্জটা দেয় এই কারণে যে, যাতে যত বেশিই জানুক বা শিখুক, তারা যেন সবসময় বুঝতে পারে, তারা কোনো গুরুত্বপূর্ণ দিক এড়িয়ে গেছে বা তাদের জন্য কিছু না কিছু অনাবিষ্কৃত রয়েছে। এছাড়াও গবেষণা ও প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্যও প্রতিষ্ঠানটির পরিচিতি রয়েছে। 

এমআইটি উৎকৃষ্ট গবেষণা, নিখুঁত পাঠ্যক্রম, অনন্য শিক্ষকমণ্ডলী ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উপস্থিতির জন্য বিখ্যাত। অধিকন্তু, প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ব্যাপক অর্থনৈতিক সাপোর্ট, বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা, এবং উচ্চমানের সহযোগিতাপূর্ণ একাডেমিক পরিবেশ। MITFacts-এর তথ্যানুসারে, পৃষ্ঠপোষকদের দেওয়া ১.৮ বিলিয়ন ডলারসহ প্রতিষ্ঠানটির ২০২২ সালের বাজেটের পরিমান প্রায় ৪.২ বিলিয়ন ডলার। যার ৭৪ শতাংশই গবেষণার জন্য ব্যয় হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে পাঁচটি স্কুল রয়েছে- the School of Architecture and Planning, the School of Engineering, the School of Humanities, Arts, and Social Science, the MIT Sloan School of Management, এবং the School of Science—the Whitaker College of Health Sciences and Technology.

এছাড়াও স্পন্দনশীল শিক্ষাজীবন উপহার দিতে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের ক্লাব, ভ্রাতৃ ও ভগ্নি সংঘ, খেলার দল এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন। নবাগত শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট- শুধু পাস/ফেলে সীমিত অথবা মার্কশিটের বর্হিভূত রাখা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পিএইচডি ও পোস্টডক্টরাল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা এখানকার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। বিশ্বের পণ্ডিত ব্যক্তিরা সেখানে শিক্ষকতা করেন।

আবার, তারাই ঘন্টার পর ঘন্টা পরিশ্রম করে ক্লাস লেকচার তৈরি করেন। সপ্তাহান্তেও শিক্ষার্থীদের সময় দেন, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। ভাবতে অবাক লাগলেও, মুষ্টিমেয় যে কয়টি প্রতিষ্ঠানে গবেষণার জন্য পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে, তার মধ্যে এমআইটি একটি। এছাড়াও সেখানে রয়েছে একটি ভূ-পদার্থ ও জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত মানমন্দির, রৈখিক ত্বরণ সৃষ্টিকারী যন্ত্র, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, বায়ু টানেল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষাগার, জ্ঞানীয় বিজ্ঞান কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন কেন্দ্র। আরও রয়েছে বেশ কতগুলো গ্রন্থাগার ও জাদুঘর। নানা অর্জনই, প্রতিষ্ঠানটিকে উপরে নিয়ে এসেছে। 

এমআইটিতে পড়াশোনা মানে নিবিড় ও ফলপ্রদায়ী অভিজ্ঞতা। প্রতিষ্ঠানটি তার শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি, বিশ্বের অবিলম্বে পদক্ষেপ বা মনোযোগ প্রয়োজন এমনসব সমস্যাগুলো, যেমন, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র নিরসন, নারীর ক্ষমতায়ন, মহামারী, ইত্যাদি সমাধানের চেষ্টা করে। এ প্রতিষ্ঠানের স্নাতকদের ব্যাপক কদর রয়েছে নিয়োগকর্তাদের নিকট। নিজ নিজ ক্ষেত্রে তারা নেতা। সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীতে তারা অবদান রাখছে। 

এমআইটির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে উন্নয়নশীল অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল পার্থক্যের জায়গা হলো, পূর্বেরগুলো সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নেতৃত্ব ও উদ্যোক্তা তৈরি করে, আর পরেরগুলো তৈরি করে কর্মী। অনুধাবনের জায়গা হলো, কর্মী তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার প্রয়োজন নেই, তাদের জন্য বিভিন্ন ট্রেড কোর্স বা ডিপ্লোমা কোর্সই যথেষ্ট। তারমানে, নেতৃত্ব ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এমআইটির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু তার হারও বেশ নগণ্য।

এমআইটির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষীণ উপস্থিতির কারণ বহুবিধ। প্রথমত, বাংলাদেশি সংস্কৃতির কথা বলা যায়। এখানে মোটামুটি এটা মাথায় প্রবেশ করানো হয় যে, সর্বোচ্চ গ্রেড না পেলে, তার ভালো জায়গায় ঠাঁই নেই। তাই যাদের ফলাফল একটু খারাপ হয়, তারা মনে করে, তাদের আর কোনো আশা নেই। দ্বিতীয়ত, এখানে, কো-কারিকুলার ও এক্সট্রা-কারিকুলার কর্মসূচীর ব্যাপ্তি সীমিত। যেমন, বিভিন্ন অলিপিম্পয়াডগুলোতে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ।

ফলে, ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিতরা, পড়াশোনার বাহিরে অন্যান্য ক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানে প্রায়ই কম দক্ষতার পরিচয় দেয়। তৃতীয়ত, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কথা বলা যায়। অনেক শিক্ষার্থীই মনে করে, এসব নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঠাঁই করে নেওয়া তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না। তাই, চেষ্টা করা থেকেও তারা বিরত থাকে। চতুর্থত, পরামর্শ প্রদান করার মতো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতার কারণে অনেকে জানে না, কখন কী করতে হবে। পঞ্চমত, সহযোগিতা করার বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগী ও প্রতারক প্রতিষ্ঠানের হাতে পড়ে অনেকের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, নতুনদের নিরুৎসাহিত করছে। ষষ্ঠত, প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্বাচিত হওয়া খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও সংকীর্ণ। এমআইটি প্রতি ১০০ জন আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র সাত জনকে সুযোগ দিয়ে থাকে।

সপ্তমত, অনেক শিক্ষার্থী, সমাধানযোগ্য, আর্থিক সংগতির বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত ভেবেও সাহসী হয় না। এসব সমস্যা নিয়ে, বুয়েট থেকে এমআইটিতে পিএইচডি করতে যাওয়া দুই শিক্ষার্থী মাহমুদুল ও শাশ্বত এক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, বড় স্বপ্ন দেখতে না পারা, নিজের কাজ ও ভালোলাগাকে কম গুরুত্ব দেওয়া, যথাযথ নির্দেশনার ঘাটতি, এবং কঠোর পরিশ্রম না করা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে দিচ্ছে।

শাশ্বতের ভাষায়, “কঠোর পরিশ্রমই চূড়ান্ত চাবিকাঠি। আমি সহপাঠীদের মধ্যে না ছিলাম সবচেয়ে মেধাবী, না ছিলাম সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে বেশি দক্ষ; তবুও শুধু কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে [আমি] এমআইটিতে আসতে পেরেছি।”অন্যদিকে, দেশে যদি এমআইটির মতো প্রতিষ্ঠান থাকতো, তাহলে, প্রতিভাসম্পন্ন আরো অনেকের মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ হতো। 

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো- দেশে কেনো এমআইটির মতো প্রতিষ্ঠান নেই? প্রশ্নটি সাদামাটা মনে হলেও, গভীরভাবে ভাবার অবকাশ রয়েছে। একটু পিছনে তাকালে দেখা যায, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাপর সময়ে এমআইটির উল্লম্ফন অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে। অনেক রাষ্ট্র নিজ দেশে এমআইটির প্রতিরূপ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। উপমহাদেশে, ১৯৫১ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে ভারত প্রথম আইআইটি (ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি) পায়। পরের দশকে, সেখানে আরও চারটি আইআইটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বর্তমানে ভারতে ২৩টি আইআইটি রয়েছে। শুরুর সময় থেকে এগুলো ভারতের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি খাতকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ভারতীয় আইনসভা এগুলোকে জাতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। সেখানকার স্নাতকরা বিখ্যাত হার্ভাড ও এমআইটির স্নাতকদের সাথে পাল্লা দিয়ে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। প্রযুক্তিবিশ্বের দৈত্য গুগলকে নেতৃত্ব দেওয়া সুন্দর পিচাই পড়াশোনা করেছেন প্রতিবেশী অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত আইআইটি খড়গপুরে। আইআইটির উপর দাঁড়িয়ে, ২০২২ সালে, প্রযুক্তিখাতের প্রতিষ্ঠান NASSCOM-এর তথ্য মতে, ভারত ১৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানি করেছে। দেশটি গবেষণা খাতকে এগিয়ে নিতে পরবর্তী ৫ বছরে ৫০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে।

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিতে পড়ার সুযোগ পেলেন কুবির উর্মি

অন্যদিকে, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে ২০২১-২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশ প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি আইটি পণ্য রপ্তানি করেছে। বিপরীতে পাকিস্তানের অবদান ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। দেখা যাচ্ছে, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অনেক পিছিয়ে; কারণ পাকিস্তান অনেক বিলম্বে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে।

এ নিয়ে পাকিস্তানের এক অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল আফসোস করে বলেছেন, “ভারত যখন পর পর আইআইটি বানাচ্ছে, তখন পাকিস্তান মত্ত ছিল পর পর প্রধানমন্ত্রী তৈরি করতে।” পাকিস্তানের সেই উত্তরাধিকারের প্রভাব বাংলাদেশ নামক ভূ-খণ্ডেও পড়েছে।

স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডে, ১৯৬৭ সালে খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ১৯৬৮ সালে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর ঢাকায় এরকম একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি হয় ১৯৮০ সালে। এই চারটি প্রতিষ্ঠান এমআইটি বা আইআইটির মতো সাধারণ নাম পায় ১৯৮৬ সালে। তৎকালীন বুয়েট ভিসি ড. ওয়াহিদ উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি এগুলোর সম্মিলিত নামকরণ করেন, বিআইটি (বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজি)।

তাহলে বিষয়টি দাঁড়াল, যুক্তরাষ্ট্রের আছে এমআইটি, ভারতের আইআইটি আর বাংলাদেশের বিআইটি। কিন্তু হায়! মার্কিনি ও ভারতীয়রা তাদের ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজির উপর আস্থা রাখতে পারলেও, আমরা পারলাম না। ২০০৩ সালে, বিআইটিগুলো একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হলো। আমরা হয়তো এটাও ভুলে গেছি, নামের মিলের কারণে, মানের তুলনাটা হলেও নিদেনপক্ষে করা যেত। হয়তো একটা গোপন প্রতিযোগিতাও তৈরি হতে পারতো প্রতিবেশী আইআইটিগুলোর সাথে।

আবার, বিশ্ববিদ্যালয় হলো বটে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিঃসন্দেহে ভালো করছে; তবে, গবেষণায় পিছিয়ে থেকে কোনো কোনোটি প্রকৃত প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ লাভ করেনি। এখানে, বিশ্বমানের গবেষণা যেমন অপ্রতূল, তেমনি উঁচু মানের গবেষক ও নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি সীমিত। মূলত, সাধারণ পেশাজীবী তৈরির আঁতুড়ঘর হিসেবে এগুলো ভূমিকা রাখছে। ইউজিসির ২০২০ সালের তথ্যের বরাতে মীর (২০২২) উল্লেখ করেছেন, “আটটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো গবেষণা করেনি।” 

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কারণে পিছিয়ে পড়ছে। আর্থিক, অবকাঠামো, ও অধিক শিক্ষার্থী সংক্রান্ত সাধারণ সংকট তো রয়েছেই। এছাড়াও গুরুত্ব দেওয়ার মতো ও সহজে সমাধানযোগ্য আরও কিছু সংকট রয়েছে। অনুমান করি, এখানে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে যেয়ে, প্রতিষ্ঠাতারা ভুল পথে হাঁটছে। এখানকার মানুষের সাধারণ ধারণা হলো, প্রতিষ্ঠান মানে চোখের সামনে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। যত বড় প্রতিষ্ঠান, তত বড় স্থাপনা। এটা অস্বীকার কারার জো নেই যে, স্থাপনার প্রয়োজন নেই।

তবে, অবকাঠামোকে হার্ডওয়্যার ধরলে, তাকে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সফটওয়্যার। একটি প্রতিষ্ঠানের আসল পরিচিতি সেখানকার পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচী, ভর্তির বাছাই প্রক্রিয়া, শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, একাডেমিক কাঠিন্য, শিক্ষার পরিবেশ ও সংস্কৃতি, ও মেধাতন্ত্রের চর্চার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। এখানে এই জায়গাগুলোতে ছাড় দেওয়া হয়েছে। মূল ঘাটতির জায়গাও সেটাই। এক্ষেত্রে, মেধাতন্ত্রের চর্চা নিশ্চিত করার দাবির কথাটি বলা যায়। প্রায়ই নানা জায়গা থেকে এ সংক্রান্ত কন্ঠ শোনা যায়।

নাফিসের ক্ষেত্রে দেখেছি, এইচএসসি পাশের সনদ ছাড়াই সে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এর মানে যোগ্য শিক্ষার্থীকে কাছে টানতে সনদ সেখানে মূখ্য ভূমিকা পালন করেনি। এ প্রসঙ্গে চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসিত বরণ দাস এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ”খুব কোয়ালিফাইড হলে, ওই ছাত্র এইচএসসি পাস করল কি, করল না- বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে অনেক ক্ষেত্রে সেটি মুখ্য বিষয় নয়। তাদের কাছে মেধাই গুরুত্ব পায়। অতি মেধাবীদের তারা এভাবেই বেছে নেয়।”

যদিও আমাদের এখানে জ্ঞান ও দক্ষতা যতই অর্জিত হোক না কেনো, সনদ চাই-ই-চাই। সনদ নাই তো প্রবেশাধিকার নাই; না শিক্ষার্থী হিসেবে, না শিক্ষক হিসেবে। যেমন, কোন এক সময়ে, কারও একটা স্তরের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়েছে, তারপর সে যতকিছুই অর্জন করুক না কেনো, তার এ অপবাদ কিছুতেই কাটবে না। মনে হয়, বিশ্বশ্রেষ্ঠ কোনো একাডেমিক পুরষ্কার পেলেও বাংলাদেশের তৃতীয় স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেবে না, কারণ, সে কোনো এককালে, কোনে এক পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ পেয়েছিল।

পত্র-পত্রিকায় অনেকবারই এসেছে যে, ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ের প্রথম দিককার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা ও উঁচু ইমপেক্ট ফ্যাক্টরের জার্নালে একাধিক প্রকাশনা নিয়েও অনেক মেধাবী শিক্ষক পদপ্রার্থী, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সদ্য স্নাতক করা প্রতিযোগীদের ডিঙ্গাতে পারেননি। বিপরীতে, ইউজিসির ২০২১ সালের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মরত ৪৫ শতাংশ শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি নেই। 

অধিকন্তু, বাংলাদেশের কারিকুলাম ও সিলেবাস যুগের সাথে বেশ ধীরেলয়ে তাল মিলাচ্ছে। এখানে মডিউলার এডুকেশনে এখনো চালু হয়নি। রি-স্কিল ও আপস্কিলের বিষয়গুলোও পরিকল্পনায় অন্তর্ভূ্ক্ত হয়নি। উচ্চশিক্ষায় ভর্তির বাছাই প্রক্রিয়ার আধুনিকায়নে পিছিয়ে রয়েছে। শিখন-শেখানোর পদ্ধতি এখনও গতানুগতিকতা নির্ভর। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে। একাডেমিক ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের নির্দিষ্ট মান নির্ধারণ ও তা প্রতিপালনে ব্যর্থতার কারণে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে। সহ- ও অতিরিক্ত পাঠ্যক্রমের উপর পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এছাড়া, শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ ও সংস্কৃতি অনেকাংশে অনুপস্থিত। 

শিক্ষা ও গবেষণায় অর্থের অপ্রতুলতা রয়েছে। উচ্চশিক্ষা খাতে বাংলাদেশ জাতীয় বাজেটের মাত্র ০.৮৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখে। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ভোগে। যেমন, এমআইটির ২০২২ সালের বাজেট যেখানে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা (১ ডলার ১০২ টাকা হারে), সেখানে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রসর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদাালয়ের বাজেটের পরিমান প্রায় ৯২৩ কোটি টাকা, যা এমআইটির বাজেটের ২ শতাংশের একটু বেশি।

অন্যদিকে, গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দের পরিমান মাত্র ১৫ কোটি, যা বাজেটের ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ; বিপরীতে এমআইটিতে তা ৭৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে, ২০২০ সালের হিসেবে বুয়েটের ব্যয় মাত্র ১ শতাংশ (মীর, ২০২২)। সার্বিকভাবে, ইউজিসির তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের ১৪২টি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মোট খরচ করেছে ১৮৪ কোটি টাকা। গড়ে খরচের পরিমান দাঁড়ায় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা তাদের মোট একাডেমিক ব্যয়ের মাত্র ২ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ কারণে, বৈশ্বিক জ্ঞান সূচক-২০২১-এ ১০০ নম্বরের মধ্যে ১৯.২ স্কোর করে ১৫৪টি দেশের মধ্যে গবেষণা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে ১৩৬তম স্থান অর্জন করেছে। । তবে, কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ খাতে অধিক বিনিয়োগ করছে। যেমন, ২০২০ সালে শুধুমাত্র ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বাজেটের ১৬.৪১ শতাংশ বা ৫৫ কোটি টাকা গবেষণায় ব্যয় করেছে; যা সে সময়ে শীর্ষ ১০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা তহবিলের চেয়েও ১২ কোটি টাকা বেশি। ২০২১-এ গবেষণার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়টি আরও ব্যয় বাড়িয়েছে, যার পরিমান প্রায় ৫৯ কোটি টাকা। 

৬৮.১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০ সালের গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩.৬৪ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১.৮০ শতাংশ। অপরদিকে, ১৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এ খাতে খরচ মাত্র ৭০ লক্ষ টাকা। 

তাহলে কি আমাদের একটি এমআইটি হবে না? সেটা হয়তো খুবই কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। তবে, এমআইটি না হোক, তার মানের যতটা কাছে যাওয়া যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে, করণীয়গুলো ঠিক করে উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নত দেশের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমাদের শিক্ষার্থীদের যাওয়ার ধারাকে বেগবান করতে হবে। আবার পড়াশোনা শেষে, এমআইটি, হার্ভাড ও ক্যামব্রিজরে মতো প্রতিষ্ঠানের স্নাতকদের দেশে এনে যথোপযুক্ত কর্মের সুযোগ দিয়ে এমআইটির আদলের প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেওয়া। নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে তাদের মতামতকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। শিক্ষায় মেধাতন্ত্রের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। সনদনির্ভর পড়াশোনার নিগড় থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষা ও বহুমূখী প্রতিভার উন্মেষ ঘটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যোগ্যতরদের জন্য সর্বজনীনভাবে উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত রাখতে হবে।

সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, পড়াশোনার জন্য একটি উঁচু মান নির্ধারণ করা, এবং সৃষ্ট এই কাঠিন্যের জায়গায় আপস করার মানসিকতা পরিত্যাগ করা। নেতৃত্ব ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। স্নাতকরা যেন ব্যক্তির পাশাপাশি সমাজ, দেশ ও পুরো পৃথিবীর সমস্যার সমাধানের প্রতি মানবিক মূল্যবোধসহ মনোযোগী হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। প্রয়োজনে, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে চুক্তির মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন ও উত্তরোত্তর তা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে।

সর্বোপরি, শিখন-শেখানোর পদ্ধতিসমূহের আধুনিকায়ন, বিশ্বমানের গবেষণার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বাজেটের ০.৮৭ শতাংশের পরিবর্তে ৬ শতাংশ বরাদ্দকরণ, গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি (ন্যূনতম মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ), ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার যথোপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, সংখ্যা বা সনদ নয়- গুণের কদর, উন্নত নৈতিকতার চর্চা, মুক্ত চিন্তার সুযোগ বৃদ্ধি, এবং আন্তঃশৃঙ্খলা গবেষণায় গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

লেখক: ইউজিসির পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো