সিঙ্গাপুর-জার্মানিতে শিক্ষার মূলধারাকে কেন ‘জিমনেসিয়াম’ বলা হয়
জার্মানির শিক্ষার মূল ধারাকে বলা হয় জিমনেসিয়াম। কেন? কারণ এর গভীরতা, এর ডিফিকাল্টি লেভেল এত উপরে যে এর মাধ্যমে ব্রেইনের ব্যায়াম হয়। এইজন্যই এটিকে জিমনেসিয়াম বলে। এই জিমনেসিয়াম বা মূল ধারায় সবাই পড়তে পারে না। নবম/দশম শ্রেণী থেকেই বিভাজন হয়ে যায়। যারা অল্প লেখাপড়া করে কিছু করে খেতে চায় তারা টেকনিক্যাল বা কারিগরি ধারায় চলে যায়।
একইরকম ব্যবস্থা সিঙ্গাপুরে। সেখানেও মূল ধারার শিক্ষায় খুব কমই আসতে পারে। আসতে হলে স্কুল লেভেলে ভালো করতে হবে। বাকিরা টেকনিক্যাল ধারায় লেখাপড়া করবে। মূল ধারার লেখাপড়ার মানের সাথে কোন প্রকার কম্প্রোমাইজ চলে না বা চলতে দেওয়া হয় না।
কারণ এই ধারার শিক্ষাই একটি দেশের বড় বিজ্ঞানী, বড় গবেষক, বড় দার্শনিক, বড় অর্থনীতিবিদ, বড় ডাক্তার তৈরী করে। এইজন্যই সিঙ্গাপুরের শিক্ষার মান এত ভালো। ছোট একটি দেশে দুটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় আছে। দুটোই বিশ্বমানের এবং একটিতো বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ ১৯। এই জন্যই সিঙ্গাপুরের মন্ত্রিপরিষদের সবাই ক্যামব্রিজ/অক্সফোর্ড অথবা এমআইটি/হার্ভার্ড কিংবা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত।
আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষার মানকে উন্নত করতে কিছু প্রস্তাবনা
একটি দেশের সবাইকে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স-মাস্টার্স পড়ানোর দরকার নাই। আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৮ শতাধিক জেলা উপজেলার কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স পড়ার সুযোগ দিয়েছি। অনার্স-মাস্টার্স পড়ানোর মত শিক্ষক আছে? পরিবেশ আছে? সুযোগ-সুবিধা আছে? কেন দেই? এরা অন্তত আপাত বেকার না থেকে কিছু একটা করছে সুপ্ত বেকার তৈরী করছি। যারা লেখাপড়া শেষে frustrated হয়।
কারণ এদের অধিকাংশই তো লেখাপড়া করার সুযোগই পেল না। পেল কেবল সার্টিফিকেট। এইসব না করে জার্মানি সিঙ্গাপুরের মত আমাদের উচিত ছিল শিক্ষার মূল ধারার মানকে আরো শক্তিশালী করে বিকল্প হিসাবে টেকনিক্যাল বা কারিগরি শিক্ষাকে শক্তিশালী করা।
আমরা এইটা না করে মূল শিক্ষাধারাকেই কারিগরি লেভেলে নামিয়ে আনলাম। আহাম্মকি আর কাকে বলে? মূল ধারার শিক্ষা হবে সুদূরপ্রসারী লাভের উদ্যেশ্যে। কিভাবে ডাল রান্না করতে হবে এইটাতো মূল ধারার শিক্ষার অংশ হতে পারে না।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়