রুম সংকটে আটকে আছে ১৭তম নিবন্ধনের প্রিলি
রুম সংকটের কারণে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা আটকে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রিলিমিনারির অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১২ লাখ প্রার্থী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই বছরের ১৫ মে সকালে স্কুল পর্যায়ে এবং বিকেলে কলেজ পর্যায়ের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়। তবে এর আগেই দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে থেমে যায় নিবন্ধন কার্যক্রম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগার প্রভাষকদের জন্য চলতি বছর সংশোধীত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। নতুন করে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করলেও প্রিলি পরীক্ষা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত একটি কার্যালয়ে এনটিআরসিএ’র জন্য বরাদ্দকৃত দুটি রুম ছিল। এই রুম দুটি ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডকে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রুম সংকট তৈরি হওয়ায় ১৭তম নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করতে পারছে না এনটিআরসিএ।
আরও পড়ুন: এমপিওভুক্তিতে আদালতের রায় মানতে হবে: মন্ত্রণালয়
এনটিআরসিএ বলছে, ১৭তম নিবন্ধনের পরীক্ষার খাতা, ওএমআর মেশিনসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে তাদের জায়গা নেই। দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অবহিত করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এজন্য তারা নিজেরাই রুম খোঁজার কাজ শুরু করেছেন। বুধবার এনটিআরসিএ’র একটি টিম রুম খোঁজার কাজে বের হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে প্রিলি পরীক্ষা নিতে চান কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ সচিব মো. ওবাইদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি আমরা শুরু করেছি। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরিসহ আনুষাঙ্গিক কাজ শুরু করা হয়েছে। আশা করছি জুন মাসের মধ্যে এই নিবন্ধনের প্রিলি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে।
রুম সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন: অধিদপ্তরের মাধ্যমে শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করতে চায় এনটিআরসিএ
এদিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দুই বছর অতিক্রম হলেও এখনো প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আয়োজন করতে না পারায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। বয়স শেষ হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ১৭তম নিবন্ধনে আবেদন করা প্রার্থী মো. জসিম জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও পিএসসি, সরকারি ব্যাংক, খাদ্য অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির বড় বড় সার্কুলার গুলোর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অথচ এনটিআরসিএ করোনার অজুহাত দেখিয়ে ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। এমতাবস্থায় অনেকেরই বয়স ৩৫ এর কাছাকাছি চলে গেছে অথবা পঁয়ত্রিশোর্ধ হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে শিক্ষক হওয়ার যে মহান পেশায় নিয়োজিত হওয়ার মনোবাসনা, সারা জীবন হয়তো অধরাই থেকে যাবে। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণ করার জন্য এনটিআরসিএ কে বিনীত অনুরোধ করছি।
আরও পড়ুন: মামলা জটিলতায় পেছাচ্ছে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সকল চাকরিতে যেদিন বিজ্ঞাপন দেয়া হয় সেই দিন থেকেই বয়স ধরা হয়। কিন্তু নিবন্ধনের আবেদনের কোন বয়স নেই। গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সময় বয়স ৩৫ বছর। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের সার্কুলার হয়েছিল ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি। এখন সময় অতিবাহিত হল ২ বছরের অধিক। তবে পরীক্ষা যদি আরও বিলম্ব হয় অনেকে ভাল করেও গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেনা। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ দুই বছর পরীক্ষা নিতে পারেনি কিন্তু তাদের আইনে প্রতিবছর একটি পরীক্ষায় আয়োজনের কথা আছে। তাই আমরা চাই দ্রুত পরীক্ষা নিয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে যে অন্তরায় আছে সেটি দূর করুক।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করে থাকে এনটিআরসিএ। ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত তারা কেবল সনদ প্রদান করতো। নিয়োগ হত কমিটির মাধ্যমে। তবে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় ২০১৫ সাল থেকে নিবন্ধন সনদ প্রদানের পাশাপাশি মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আসছে এনটিআরসিএ।