এনটিআরসিএর ভুয়া সুপারিশপত্র ফেসবুকে
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৮ হাজার ২৮৩ জনের ভুয়া সুপারিশপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে শিক্ষকদের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেয়া হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। এতে একটি লিংক সংযুক্ত করে দিয়ে সেখানে আইডি পাসওয়ার্ড বসিয়ে প্রার্থীদের সুপারিশপত্র ডাউনলোড করতে বলা হয়। তবে এ ধরনের কোনো সুপারিশপত্র এনটিআরসিএ প্রকাশ করেনি।
এনটিআরসিএ বলছে, প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের তথ্য ডাটাবেজ থেকে নিয়ে একটি অসাধু চক্র এই কাজ করেছে। টেলিটকের সাথে বৈঠকের পূর্বে সুপারিশপত্র দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুপারিশপত্র দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সেটি পাঠানো হবে। এছাড়া যে সুপারিশপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে মে ২০২১ লেখা আছে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের শর্ত উল্লেখ নেই।
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দিতে চায় এনটিআরসিএ
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা এখনো প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেইনি। এখনো সুপারিশপত্র দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। ফেসবুকে যেটি ছড়ানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া।
এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান আরও বলেন, এ ধরনের কাজ যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে যারা এই পোস্ট দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করেছি। তাদের আইডির লিংক ছবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
আরও পড়ুন: লোকবল সংকটে এনটিআরসিএর কার্যক্রমে ধীরগতি
এদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ পাওয়া ৩৮ হাজার ২৮৩ জনকে আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দিতে চায় এনটিআরসিএ। এজন্য দ্রুত গতিতে সুপারিশপত্র তৈরির কাজ করছে এনটিআরসিএ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখে শিক্ষকদের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেয়ার নির্দেশনা পাওয়ার পর সুপারিশপত্র তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে টেলিটকের সাথে একদফায় বৈঠকও সম্পন্ন হয়েছে। আরেক দফা বৈঠকের পর প্রার্থীদের মুঠোফোনে এসএমএস পাঠানো হবে।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এসএমএস প্রাপ্ত প্রার্থীরা টেলিটকের ওয়েবসাইটে ঢুকে আইডি পাসওয়ার্ড বসিয়ে সুপারিশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। এজন্য একটি লিংকও দেয়া হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অথবা আগামী সপ্তাহের শুরুতে টেলিটকের সাথে বৈঠক করে এসএমএস পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
এর আগে গত সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-২ শাখা থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্তদের ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে তিনটি শর্তের মাধ্যমে সুপারিশপত্র দেয়ার কথা জানানো হয়।
আরও পড়ুন: ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই সুপারিশপত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত
শর্তগুলো হলো-
* নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষকের ব্যাপারে সসংশ্লিষ্ট এজেন্সি কর্তৃক ভেরিফিকেশনে কোনো বিরূপ মন্তব্য/আপত্তি উত্থাপিত হলে অবিলম্বে উক্ত সুপারিশপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হবে।
*প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশনে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া গেলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।
*বিরূপ মন্তব্যসম্পন্ন শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ও প্রার্থীকে জানাতে হবে।
তথ্যমতে, গত বছরের ৩০ মার্চ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। বিভিন্ন নিবন্ধনের রিটকারীদের জন্য ২ হাজার ২০০টি পদ সংরক্ষণ করে বাকি পদগুলোতে নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়।
আবেদন না পাওয়ায় এবং মহিলা কোটায় যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ১৫ হাজাত ৩২৫টি পদ বাদ রেখে ৩৮ হাজার ২৮৬ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। সুপারিশ প্রাপ্তদের মধ্যে ৬ হাজার প্রার্থী ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ করে না পাঠানোয় ৩২ হাজার ২৮৩ জনের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে।