পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগের দাবি
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেয়ার দাবি তুলেছেন প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। তারা বলছেন, তিন মাস শেষ হতে চললেও এখনো সব জেলায় ভেরিফিকেশন কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। এই অবস্থায় দ্রুত নিয়োগের দাবি তুলেছেন তারা।
প্রার্থীরা বলছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে এক মাসের মধ্যে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হলেও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে টালবাহানা করা হচ্ছে। প্রিলি, লিখিত ও ভাইভায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পাওয়ায় হতাশা ও অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন তারা। সব ধাপে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত এক প্রার্থী জানান, ২০২১ সালের মার্চে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। নতুন বছর শুরু হলেও এখনো যোগদান করতে পারিনি। নতুন চাকরি পাওয়ার খুশিতে পুরোনো চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি। এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে খুব অসহায় অবস্থায় দিন পার করছি।
আরও পড়ুন: অধ্যাপনা ছেড়ে রাজনীতির মাঠে যারা
আরেক প্রার্থী জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএ চাইলে ভেরিফিকেশন চলমান রেখেও সুপারিশপত্র দিতে পারে। তবে সেটি তারা করছে না। কবে সবার ভেরিফিকেশন শেষ হবে আর কবে যোগদান করতে পারবো সেই অনিশ্চয়তা কাটছে না।
এদিকে ভেরিফিকেশন ছাড়াই যোগদান অথবা ভেরিফিকেশন চলমান রেখে যোগদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন প্রার্থীদের দ্রুত চূড়ান্ত সুপারিশপত্র আমরাও দিতে চাই। তবে মন্ত্রণালয়ের লিখিত নির্দেশনা ছাড়া এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে ভেরিফিকেশন ছাড়াই যোগদান: এনটিআরসিএ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তিা জানান, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ভেরিফিকেশন ছাড়া যোগদান করানো যায় কিনা সে বিষয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। অনেকেই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। আবার অনেকে বলেছেন, যাদের ভেরিফিকেশন শেষ হয়েছে তাদের সুপারিশপত্র দিয়ে দেয়ার। তবে বিষয়টি কার্যকর করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা প্রয়োজন। মন্ত্রণালয় চাইলে প্রার্থীদের দ্রুত যোগদান সম্ভব। না হলে ভেরিফিকেশন শেষ হলেই সুপারিশপত্র দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ভেরিফিকেশনে বছর পার, সুপারিশপ্রাপ্তদের ক্ষোভ বাড়ছে
তথ্যমতে, সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের এই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় গত বছরের ১৫ জানুয়ারি।
২০২১ সালের ৩০ মার্চ ৫৪ হাজার শূন্যপদের বিপরীতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে বিভিন্ন নিবন্ধনের রিটকারীদের জন্য ২ হাজার ২০০টি পদ সংরক্ষণ করে বাকি পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। আবেদন না পাওয়ায় এবং মহিলা কোটায় যোগ্য প্রার্থী না থাকায় ১৫ হাজার ৩২৫টি পদ ফাঁকা রেখে ৩৮ হাজার ২৮৬ পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। তবে ৬ হাজার ৩ জন প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশনের ফরম পূরণ করে না পাঠানোয় ৩২ হাজার ২৮৩ জনের পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা।