১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৩৩

শিক্ষক নিয়োগে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির সম্ভাবনা ‘ক্ষীণ’

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়   © টিডিসি ফটো

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি জারির সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে মনে করছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তারা। প্রার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই গণবিজ্ঞপ্তি জারির প্রস্তাব এনটিআরসিএ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠিয়েছিল। তবে, চেম্বার আদালতের নির্দেশনায় নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে একমত হয়ে শিক্ষক নিবন্ধন সনদের মেয়াদ তিন বছর নির্ধারণ, শিক্ষক পদে নিয়োগের বয়স ৩৫ বছর নির্ধারণের কারণে ওই গণবিজ্ঞপ্তি জারির সম্ভাবনা কম বলে মন্তব্য করেছেন এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘মানবিক বিবেচনায়’ নির্বাহী আদেশ দিলে ওই গণবিজ্ঞপ্তি জারির ‘পথ খুলতে পারে’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) শিক্ষক পদে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশের কর্মকাণ্ড পরিচলনা করা এনটিআরসিএর শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। 

কর্মকর্তারা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ১-১২তম নিবন্ধনধারী এবং ১৩-১৪তম নিবন্ধনধারীরা একাধিকবার এনটিআরসিএর কার্যালয়ে এসেছেন। ১-১২তম ও ১৩-১৪তম নিবন্ধনধারীরা আমাদের অবরুদ্ধ করেছেন। তাদের দাবিগুলো আমরা শুনেছি। সেগুলো সারমর্ম আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই দাবিগুলোর মধ্যে একটি ছিলো বয়সের বাধা দূর করে একটি বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি ও তাতে সব নিবন্ধনধারীদের আবেদনের সুযোগ দেয়া। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান শাখার পরিচালক কাজী কামরুল আহছান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেশ কয়েকটি রিট পিটিশনের একসঙ্গে লিভ টু আপিল শুনানি করে চেম্বার আদালত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সনদের মেয়াদ নির্ধারণ ও শিক্ষক নিয়োগের বয়স নির্ধারণ করেছিল। নির্বাহী আদেশের সনদের মেয়াদ তিন বছর নির্ধারিত থাকলেও হাইকোর্টের সেভেন ডিরেকশনে তা উঠে গিয়েছিল। আর নির্বাহী বিভাগের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) জারি করা এমপিও নীতিমালায়  শিক্ষক পদে নিয়োগের বয়স ৩৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল। লিভ টু আপিলে চেম্বার আদালত নির্বাহী বিভাগের নেয়া সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। অর্থাৎ সনদের মেয়াদ তিন বছর ও নিয়োগের বয়স অনুর্ধ্ব ৩৫ বছর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ পরিস্থিতিতে ১ থেকে ১২তম এমন কি ১৩ ও ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের সনদ ইস্যুর তিন বছর হয়ে গেছে, তাই চেম্বার কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে তাদের সনদের মেয়াদ নেই। 

তিনি আরও বলেন, ওই প্রার্থীদের সনদ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় তারা আবেদনের সুযোগ পাবেন না। তাই প্রচলিত বিধান অনুযায়ী তাদের নিয়োগের সুযোগ দিয়ে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি জারির সম্ভবনা ক্ষীণ। কারণ এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ১ থেকে ১২তম এমন কি ১৩ ও ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ দেয়া হবে চেম্বার আদালতের নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আরও পড়ুন : শিক্ষক সংকট দূর করতে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির প্রস্তাব এনটিআরসিএ’র

শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান শাখার পরিচালক আরও দাবি করেন, চেম্বার আদালত এ ধরণের এক্সিকিউটিভ ডিসিশনের জন্য এক্সিকিউটিভ নির্দেশনা অনুসারেই আদেশ দেন। অর্থাৎ চেম্বার আদালত নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন। কোটার ক্ষেত্রেও এমনটাই বলেছিলেন চেম্বার আদালত। তাই এখন যদি মানবিক বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টা নির্বাহী আদেশ জারি করে সনদের মেয়াদ ও বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের বয়সসীমা বাড়ন তাহলে ওই গণবিজ্ঞপ্তি জারি পথ খুলতে পারে। যদিও সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ। 

এদিকে ১ থেকে ১২ তম নিবন্ধন এবং ১৩ ও ১৪ তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি জারির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা মানবিক বিবেচনায় ওই গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একটি বারের জন্য শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়ার সুযোগ চাচ্ছেন। পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশের পরও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য থাকা ৭৫ হাজারের বেশি পদে তারা সুপারিশ পেতে চান। 

আরও পড়ুন : বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি চান না ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের ফল প্রত্যাশীরা 

যদিও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের ফল প্রত্যাশীরা, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির বিরোধিতা করছেন। তারা বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি জারি প্রস্তাবকে ‘অবৈধ’ ও অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি জারি দাবি জানিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছেন।