আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির দাবিতে আন্দোলনে নামছেন ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা

এনটিআরসিএ
এনটিআরসিএ  © লোগো

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি কিংবা আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। এ দাবি আদায়ে একাধিকবার নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দাবি আদায়ে ঈদের পর ফের মাঠে নামছেন শিক্ষকরা।

জানা গেছে, ‘ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। আগামী ৩০ জুন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের  (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করবেন তারা। দাবি আদায় না হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

এ বিষয়ে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. সরোয়ার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ায় আমরা হতাশ। এত অল্প বেতনে শিক্ষকরা নিজ বাড়ি থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছেন। পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। সরকার বদলির উদ্যোগ নিলেও কয়েক কর্মকর্তার বিরোধিতায় তা আলোর মুখ দেখেনি। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার পদ ফাঁকা থাকলেও ইনডেক্সধারীদের আবেদনের সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির আগে হুট করে শিক্ষক নীতিমালার ৭ নম্বর ধারা বাতিল করে দেওয়া হয়। এর ফলে ইনডেক্সধারীদের নিজ বাড়ির কাছের প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনের মুখে এনটিআরসিএর কর্তাব্যক্তিরা বদলির আশা দেখালেও তা পূরণ হয়নি। আমরা নিজ বাড়ির কাছে যেতে চাই। স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে থাকার ব্যথা কেউ বোঝে না। আমাদের দাবি আমাদেরই আদায় করতে হবে। দাবি আদায়ে আমরা কঠোর কর্মসূচির দিকে যাচ্ছি। এর অংশ হিসেবে আগামী ৩০ জুন এনটিআরসিএর কার্যালয়ের সামনে সকাল ৯টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।

দেশের একাধিক জেলার ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেশিরভাগই নিজ জেলা থেকে ৩০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করছেন। অনেকের বৃদ্ধ বাবা-মা অসহায়ভাবে বাড়িতে একা থাকেন। অথচ তাদের দেখার কেউ নেই। বিভিন্ন জেলায় কর্মরত নারী শিক্ষকদের সংসার ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা। নিকটাত্মীয়-স্বজন মারা গেলেও শেষ দেখার সুযোগ থাকে না। স্বল্প বেতন, মানসিক নির্যাতন ও চরম হয়রানির কারণে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে। এ অবস্থায় দ্রুত আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ দাবি করেছেন শিক্ষকরা।

জানা গেছে, গত মে মাসে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে সভা ডাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সভায় শিক্ষা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরোধিতায় বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়নের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। ৯৬ হাজারের বেশি শূন্যপদ থাকলেও গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অর্ধেক পদও পূরণ হবে না। এ অবস্থায় বদলি চালু করা হলে গ্রামের সব শিক্ষক শহরে চলে আসবেন। গ্রামের স্কুলগুলোতে খালি হওয়া ওই পদগুলো আর পূরণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য আপাতত বদলির ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের আগে কমিটির পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পেতেন শিক্ষকরা। এভাবে একজন শিক্ষক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেতেন। তবে ২০১৫ সালের পর নিয়োগ সুপারিশের ক্ষমতা এনটিআরসিএ’র হাতে যাওয়ায় সে সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিজ এলাকার বাইরে চাকরি করতে হয় শিক্ষকদের। অল্প বেতনে নিজ বাড়ি থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে চাকরি করায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষকদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সদস্য কিংবা প্রতিষ্ঠান প্রধানের হাতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের।

শিক্ষকদের নানা সমস্যার কথা বিবেচনা করে ২০২৩ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার। গত বছরের ২২ অক্টোবর বদলি নিয়ে প্রথম কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সে কর্মশালায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নিয়ে একাধিক পরামর্শ দেওয়া হয়।

সে পরামর্শের আলোকে বদলির খসড়া তৈরি করে মাউশির ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়। খসড়া নিয়ে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বদলির খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করতে গত ৫ মে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সভা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা সূত্রে জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রী বদলি নিয়ে সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের মতামত জানতে চান। এসময় একটি সংস্থার শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল শূন্যপদ থাকলেও গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অর্ধেক পদও পূরণ হবে না। এ অবস্থায় বদলি চালু করা হলে গ্রামের সব শিক্ষক শহরে চলে আসবেন। গ্রামের স্কুলগুলোতে খালি হওয়া ওই পদগুলো আর পূরণ করা সম্ভব হবে না। এজন্য আপাতত বদলি চালু না করতে শিক্ষামন্ত্রীকে মত দেন ওই কর্মকর্তা। এছাড়া মামলাসহ নানা জটিলতা দেখা দেওয়ায় বদলির প্রস্তাব বাতিল করা হয়। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম পুরোপুরি থমকে গেছে৷ এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের জন্য আলাদা গণবিজ্ঞপ্তির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। দাবি আদায়ে নতুন করে কর্মসূচিল দিল শিক্ষকরা।


সর্বশেষ সংবাদ