এমপিওভুক্তিতে হয়রানির শিকার ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্তরা

ইনডেক্স ডিলেটেও চাওয়া হচ্ছে অর্থ

এনটিআরসিএ লোগো
এনটিআরসিএ লোগো  © ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক করিমুন নেছা । চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়ে এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন চলতি বছরের আগস্ট মাসে। তবে এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি এই শিক্ষিকা। বেতন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন তিনি। এমপিওভুক্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ।

করিমুন নেছা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের পর রাস্তার হাট হাজী এ গফুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (ভৌত বিজ্ঞান) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। ২৬ ডিসেম্বর আমি যোগদান করি। গত ২১ ডিসেম্বর ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ভালো প্রতিষ্ঠান পাওয়ার আশায় আমি ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করি। আবেদনের সময় আমার এমপিও হয়নি। আমার কোনো ইনডেক্স নম্বর ছিল না। তবুও আমার ফাইল অগ্রগতির জন্য পাঠানো হচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, বিশেষে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার দীর্ঘদিন পর গত মার্চে আমি এমপিওভুক্ত হই। তবে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আমাকে আলেকজান্ডার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়। সে কারণে আমি গত ৩০ সেপ্টেম্বর পূর্বের পদ থেকে অব্যাহতি পেতে আবেদন করি। শুরুতে আবেদনগ্রহণ করতে না চাইলে অনেক দেনদরবারের পর আমাকের প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়। তবে আমার ইনডেক্স নম্বর বাতিলের আবেদন করলে তা কোনো কারণ উল্লেখ ছাড়াই বাতিল করে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।  

শুধু করিমুন নেছাই  নয়; বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত অনেকেই চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছেন। এই শিক্ষকদের অনেকেই ইনডেক্স ডিলেট থেকে শুরু করে এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে নতুন করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। তবে যারা ‘ম্যানেজ’ করতে পারেননি তারা এমপিওভুক্ত হতে পারেননি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বলছে, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত কারো ইনডেক্স নম্বর ছিল না। কাজেই তারা চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পেরেছেন। এই শিক্ষকদের ইনডেক্স ডিলেট করে নতুন করে এমপিওভুক্ত হওয়ার আবেদন করতে হবে। ইনডেক্স ডিলেটের ক্ষেত্রে কেউ হয়রানির শিকার হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করতে হবে।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এস এম মাসুদুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘যারা বিশেষে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা ছিল না। কেননা তখনও তাদের ইনডেক্স হয়নি। বিষয়টি মাউশি সমাধান করেছে। এরপরও যদি কেউ হয়রানি করে তাহলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।’

তবে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যানের মৌখিক এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে দাবি সংশ্লিষ্ট জেলা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের। তারা বলছেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির কয়েকটি ধারা অনুযায়ী ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ নেই। তবে অনেকেই তথ্য গোপন করে আবেদন করেছেন। এক্ষেত্রে মাউশি অথবা এনটিআরসিএ থেকে লিখিত পেলে বিষয়টি সমাধান করা যাবে।

জানতে চাইলে রামগতি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দিদার হোসেন  দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘করিমুন নেছার ইনডেক্স ডিলেটের ফাইল একবার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছিল। তবে তিনি তা রিজেক্ট করে দিয়েছেন। ইনডেক্সধারী হয়েও চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেছিলেন করিমুন নেছা। সেজন্য তার ফাইল পাঠানো হচ্ছে না। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সময় তার এমপিও হয়নি। তাহলে তিনি ইনডেক্সধারী কীভাবে হলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।’

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র মিত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে অনেক শিক্ষক ইনডেক্স গোপন করে আবেদন করেছেন। তাদের ফাইল আমরা রিজেক্ট করে দিয়েছে। শাস্তি যোগ্য অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান এনটিআরসিএতে আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে এনটিআরসিএ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে যোগদান চলাকালীন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন শুরু হয়। তখন একজন শিক্ষক কীভাবে এমপিওভুক্ত হয়েছেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অনেকেই হয়েছেন। আমি দীর্ঘদিন ধরে এই পদে চাকরি করছি। বিষয়টি আমি জানি। এনটিআরসিএ থেকে নোটিশ হলে তখন এ বিষয়টি দেখা হবে।’

এ বিষয়ে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি কিংবা ইনডেক্স ডিলেটের ক্ষেত্রে কোনো হয়রানি করা যাবে। এক্ষেত্রে মাউশি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। কোনো শিক্ষককে হয়রানি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ