ছুটি ছাড়াই ছুটিতে প্রধান শিক্ষক, নেই সহকারী শিক্ষকও

পরীক্ষা
নিগার সুলতানা ও নীনা শাহরিয়ার

অনুমতি ছাড়াই দুই বছর ৯ মাস ছুটিতে ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানা। কোনো ছুটি না নিয়ে দুই বছর ছয় মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নীনা শাহরিয়ার। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। সদর উপজেলা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

এছাড়া একই শহরের ভিমরুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিপা শাহরিয়ারও ছয় মাসের ছুটি নিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ৯ মাস। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে ব্যাহত হচ্ছে দু’টি বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। 

জানা গেছে, ২০১৮ সালে চিকিৎসাজনিত কারণ দেখিয়ে তিন মাসের ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানা। দেশে না ফিরেই ২০১৯ সালে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে আরও দুই মাসের ছুটির জন্য দরখাস্ত পাঠান। এ ধরনের ছুটির জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে মহাপরিচালকের দফতর থেকে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তিনি অনুমতি নেননি। অনুমতি ছাড়া ২ বছর ৯ মাস কাটিয়ে ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে যোগদান করলেও গত ২৮ মার্চ থেকে আবারও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তিনি।

এছাড়া নিগার সুলতানা ২০১৩ সালে যোগদানের পর থেকেই চার বছর ধরে নিজের খেয়াল খুশিমতো যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া-আসাসহ বিভিন্ন অজুহাতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। গত ১৫ জুন নিগার সুলতানার দুই বছর ৯ মাস ৮ দিন অননুমোদিত ছুটি কাটানোর বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডু ।

আরও পড়ুন: শিক্ষক নেই, বিনা পারিশ্রমিকে স্কুল সামলাচ্ছেন গ্রামের ১০ ব্যক্তি।

অপরদিকে একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক নীনা শাহরিয়ার ছুটি না নিয়েই ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তবে সহকর্মীরা বলছেন, ‘নীনা শাহরিয়ার বর্তমানে ঢাকায় স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন।’

হাজরাহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ টি এম শামিউল ইসলাম বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক নীনা শাহরিয়ার পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। আত্মীয়-স্বজনরাও কোন তথ্য দেন না।’

বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা জানান, ‘এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী তিন শতাধিক। এত শিক্ষার্থীর বিপরীতে তিনজন শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে পাঠদান ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।’

অপরদিকে নীনা শাহরিয়ারের বোন নিপা শাহরিয়ারও চিকিৎসাজনিত কারণ দেখিয়ে ছয় মাসের ছুটি নিয়ে ৯ মাস ধরে বিদ্যালয়ে আসছেন না। ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর ছয় মাসের ছুটি নেন নিপা শাহরিয়ার। সেই ছুটি গত মে মাসে শেষ হলেও কর্মস্থলে ফেরেননি নিপা। তিনি কোথায় আছেন সে ব্যাপারেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও শিক্ষক নিগার সুলতানা, নীনা শাহরিয়ার ও নিপা শাহরিয়ার কাউকেই মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূঁইয়া বলেন,’শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন কাণ্ড কাম্য নয়। ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। সেই পত্র জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।’