বয়স্ক শিক্ষককে মারতে মারতে ইউপি কার্যালয়ে আটকে রাখলেন চেয়ারম্যান

জাফর বরকত
ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান কালুর মারধরে আহত শিক্ষক জাফর বরকত

নাটোরের হয়বতপুর গোলাম ইয়াছিনিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার এক শিক্ষককে পিটিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আটকে রেখেছেন চেয়ারম্যান। পরে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা গিয়ে লক্ষীপুর খোবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আহত শিক্ষককে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ ইউনিয়ন পরিষদ ও মাদরাসা পরিদর্শন করেছেন।

এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামান কালু এবং তার ছেলে জয়সহ সাতজনের বিরুদ্ধে নাটোর থানায় মামলা দায়ের করেছেন বয়স্ক শিক্ষক জাফর বরকত। জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে মাদরাসার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম। গত ২০ ফেব্রুয়ারী জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের পদ হারান সদরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল।

এরপরপরই শিমুলের সমর্থক মাসুমকে সভাপতির পদ থেকে সরানোর চেষ্টা শুরু হয়। জেলা আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজানের সমর্থক নুরুজ্জামান কালুকে সভাপতি করার জন্য চেষ্টা করেন তারা। এর জেরেই বুধবার গণমাধ্যম কর্মীসহ মাদরাসায় যান চেয়ারম্যান কালুর ছেলে জয়সহ ১০-১৫ জন কর্মী।

মাদরাসায় গিয়ে তারা অধ্যক্ষকে খুঁজতে থাকেন এবং ক্লাসরুমে ঢুকে নানা কিছু ভিডিও করতে থাকেন। এ সময় মাদরাসার ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকতের সঙ্গে তর্কবির্তকে লিপ্ত হলে মাঠেই তাকে প্রকাশ্যে মারপিট শুরু করেন চেয়ারম্যানের অনুসারীরা। এক পর্যায়ে শিক্ষকরা জাফর বরকতকে শ্রেণী কক্ষে আটকে রাখেন। একটু পরে আবার হামলাকারীরা এসে তাকে কক্ষ থেকে বের করে মারতে মারতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে আটকে বেধড়ক মারপিট করেন।

আরো পড়ুন: ওসমানী মেডিকেলের দুই ছাত্রকে কোপানোর অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার

জাফর সাদেক বলেন, চেয়ারম্যান নিজে চৌকিদারের লাঠি নিয়ে তাকে মারপিট করেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই তা বোঝা যাবে। এ সময় অন্য শিক্ষক ও ছাত্ররা তাকে ছাড়িয়ে আনতে গেলে তাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে ৯৯৯ জরুরি হটলাইনে খবর দিলে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

হামলাকারীরা ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মাদরাসায় আসতেও নিষেধ করেন। বাংলার প্রভাষক ও  শিক্ষক প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার সরকার হামলার বিচার দাবি করেছেন।

অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান শরিফ বলেছেন, পরিচালনা কমিটির নতুন সভাপতি হওয়ার পর থেকেই চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা কমিটি ভেঙ্গে দিতে চাপ দিচ্ছে। এটিকে কেন্দ্র করেই শিক্ষক জাফর বরকতকে পিটিয়েছে তারা। তিনি এই হামলার বিচার দাবি করেন।

কমিটির সভাপতি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম বলেন, সব নিয়ম মেনেই তিনি সভাপতি হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির নেতাদের মনোনীত মানুষ না হওয়ায় তাকে কমিটি থেকে সরে যেতে চাপ দিচ্ছে। মূলত তাকে সরিয়ে নুরুজ্জামান কালুকে সভাপতি করতেই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটেছে।

অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার সময় মাদরাসায় গোলযোগ দেখে তিনি গিয়েছিলেন। শিক্ষক জাফর বরকত তার দিকে চেয়ার ছুড়ে মারে এবং দাড়ি টেনে ছিড়ে দেয়। ফলে তার অনুসারীরা শিক্ষককে হালকা মারপিট করেছে। কাউন্সিলে আটকে রেখে শিক্ষককে নিরাপত্তা দিয়েছেন তিনি।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, কেউ মাদরাসার ক্লাস বন্ধ করতে পারবে না। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তায় একজন নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ পাহারায় থাকবে।